সংক্ষিপ্ত

যুদ্ধ ফুরিয়েছে বটে তবে যুগে যুগে নতুন রূপে ফিরে এসেছে 'মারীচ', জমিদারের লাঠির সামনে আজও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সেই কৃষক। সবলের ছড়ি আজও ঘুরছে। তবে কি আজও একই রকম প্রাসঙ্গিক মারীচ সংবাদ?

একদিকে ভিয়েতনামের যুদ্ধের পটভূমি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাংবাদিক গ্রেগরিকে পাঠানো হচ্ছে ভিয়েতনামে। সেনেটর ম্যাকির জোরজুলুমের সামনে নিরুপায় গ্রেগরি। অন্যদিকে রাবণের কাছে দায়বদ্ধতার শিকলে বাঁধা মারিচকে ইচ্ছের বিরুদ্ধেই যেতে হচ্ছে রাম বধে। সময়ের সুতোয় আর একটু এগিয়ে জমিদারের খাস লেঠেলের অত্যাচারের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলার কৃষক। যুগ যুগ ধরে সবলের জবরদস্তিতে কাহিল 'দুর্বল'-এর ইস্তেহার ফুটে উঠেছিল ১৯৭২ সালের অগাস্ট মাসে মহাকরণের ক্যান্টিন হলে। ইতিহাসের নানা ঘটনাবলিকে এক সুতোয় গেঁথে 'চেতনা'য় জেগে উঠল 'মারিচ সংবাদ'। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্মেলনের এক সন্ধ্যায় জন্ম হয়েছিল কালজয়ী এই নাটকর। তারপর ১৯৭৩ সালের ১৬ই জানুয়ারি। কলকাতার কলামন্দিরের বেসমেন্টে চলেছিল নবাগত এক দলের নতুন নাটক 'মারীচ সংবাদ'। এরপর কত যুগ কাটিয়ে কত ভাষাভাষির হাত ঘুরে পঞ্চাশের দোরগোড়ায় ভারতীয় থিয়েটারের মাইলস্টোন এই নাটক। অর্ধশতবর্ষে ফের 'চেতনা'র রঙ্গমঞ্চে প্রতিবাদের দলিল হয়ে আসছে 'মারীচ সংবাদ'। শুধু নাটকের নয় নাট্যদলেরও পঞ্চাশ বছর। এই উপলক্ষে ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে চেতনার বিশেষ নাট্য উৎসব। থাকছে 'জগন্নাথ', 'মারীচ সংবাদ', 'মেফিস্টোর'র মত কালজয়ী নাটক। তবে এবার আর দলের ছেলে মেয়েরা নয়, 'মারীচ সংবাদ'-এ দেখা যাবে একের পর এক তারকাকে। নাট্য উৎসবের দ্বিতীয়দিনে বিশেষ সম্মিলিত অভিনয় 'মারীচ সংবাদ'-এর তিনটি শো মঞ্চস্থ হতে চলেছে। ১৯ নভেম্বর মধুসূদন মঞ্চ ফের একবার মুখোরিত হবে 'মেরি বাবা'র সুরে।

যুদ্ধ ফুরিয়েছে বটে তবে যুগে যুগে নতুন রূপে ফিরে এসেছে 'মারীচ', জমিদারের লাঠির সামনে আজও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সেই কৃষক। সবলের ছড়ি আজও ঘুরছে। তবে কি আজও একই রকম প্রাসঙ্গিক মারীচ সংবাদ? জবাবে চেতনার বিগত সাত বছরের 'মারীচ' অনির্বাণ চক্রবর্তী বললেন,'মারীচকে যেমন ইচ্ছের বিরুদ্ধে রামকে বধ করতে পাঠানো হয়েছিল তেমনই ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে হয়েছিল আমেরিকার সাংবাদিক গ্রেগরিকেও, সবলের শোষণের শিকার হয়েছিল বাংলার কৃষকও। এই তিনটি চরিত্র একটা জায়গাতেই মিলে যায় তা হল, প্রত্যেককেই তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধাচারণ করতে হয়েছে। দুর্বলের উপর সবলের যে শোষণ, যে অত্যাচার তা তো এখনও থামেনি। তাই মারীচ সংবাদের প্রাসঙ্গিকতাও ফুরোয়েনি।' নাটকের স্রষ্টা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের উক্তি টেনে অনির্বাণ যোগ করেন,'আগের দিনের সাংবাদিক বৈঠকে অরুণবাবু বলেছিলন যেদিন মারীচ সংবাদ বন্ধ হবে আমি খুব খুশি হব। কারণ তখন বোঝা যাবে মারীচ সংবাদের আর প্রয়োজন নেই। সেই প্রয়োজন তখনই ফুরোবে যখন সমাজে শোষণ শেষ হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না বলেই বারবার 'মারীচ সংবাদ'কে ফিরে আসতে হচ্ছে।' অভিনেতার আরও সংযোজন 'মারীচকে তো আমরা আমাদের আশেপাশে নানা রূপে নানা পরিস্থিতিতে দেখতে পাচ্ছি।'

পঞ্চাশ তম বর্ষে কি নতুন রূপে আসছে 'মেরি বাবা'? উত্তরে অনির্বাণ স্পষ্ট জানান, 'কিছু মিউজিকাল অ্যারেঞ্জমেন্টে হালকা পরির্তন থাকলেও মূল স্ক্রিপ্ট এবং সুরে কোনও পরিবর্তন নেই।'

এবারের জমকালো 'মারীচ সংবাদ'-এ দেখা যাবে তারার হাট। এক মঞ্চে একের পর এক বিদগ্ধ অভিনেতাকে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার প্রতীক স্বরূপ কালজয়ী নাটকে দেখতে উচ্ছ্বাস দর্শকদের মধ্যেও। ইতিমধ্যেই প্রায় সবকটি শো হাউসফুল বলেও জানিয়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। নাটকে থাকছেন দেবশঙ্কর হালদার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ একাধিক তাবর তাবর অভিনেতা। ১৯ নভেম্বর মধুসূদন মঞ্চে অরুণ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় থাকছে ‘মারীচ সংবাদ’-এর তিন শো।

আরও পড়ুন - 

দিদিমাকে হারালেন রানি মুখার্জি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রয়াত হলেন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী আরতি রায়

দেশের প্রথম চলচ্চিত্র সুপারস্টারকে নিয়ে হয়নি কোনও বায়ো-পিক, একটুকরো মঞ্চেই কাননকে আনলেন লাকি

গুরু নানক জন্মজয়ন্তীর সন্ধেয় মাতৃহারা দেবশ্রী রায়, শোকস্তব্ধ ঋতুপর্ণা