সংক্ষিপ্ত

মিথিলা কিন্তু সে দিন ভয় পাননি। ভেঙেও পড়েননি। বরং দৃঢ় ভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেছিলেন।

কী বলবেন একে? সোশ্যাল মিডিয়ার কুফল? সামাজিক মাধ্যমে এবেলা ওবেলা কটাক্ষের শিকার তারকারা। কারণে-অকারণে নানা রকমের কুরুচিকর মন্তব্য ধেয়ে আসে। কখনও তাঁদের ছবি বিনা অনুমতিতে আপত্তিকর ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক পাতায়। কখনও তারকারা ক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রতিবাদ জানান সোশ্যাল মিডিয়াতেই। কখনও এড়িয়ে যান। অপরাধের মাত্রা লাগামছাড়া হলে তাঁরা দ্বারস্থ হন প্রশাসনের সাইবার অপরাধ দমন শাখায়। তিন বছর আগে এ রকমই অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রফিয়াত রশিদ মিথিলা। সাইবার অপরাধের দৌরাত্ম্যে তিনি এবং তাঁর পরিবার দীর্ঘ সময় মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়েছিলেন। তাঁর ফেসবুক ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা শনিবার আরও এক বার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁর কাছে।

সাল ২০১৯-এ কী ঘটেছিল মিথিলার সঙ্গে? অভিনেত্রীর পুরনো ফেসবুক পোস্ট বলছে, ‘আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি এক দল সাইবার অপরাধী ফেসবুকে পাবলিক করে দেয়। সম্ভবত আমার এক বন্ধুর ফেসবুক হ্যাক করেছিল তারা। সেখান থেকেই ছবিগুলো পেয়েছিল। আমি সেই সময় অকারণে এক দল বিকৃতমনস্কের লক্ষ্য বা টার্গেটে পরিণত হয়ে গিয়েছিলাম।’ অভিনেত্রীর আরও বক্তব্য, সেই আগুনে ইন্ধন জুগিয়েছিল কিছু সংবাদমাধ্যম। তারা মিথিলার অনুমতি ছাড়াই বিষয়টিকে নিয়ে মুখরোচক গল্প বানিয়ে পরিবেশন করেছিল খবরের কাগজ, ছোট পর্দা এবং ওয়েবসাইটে। নিমেষে বিতর্কিত চর্চার কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হন তিনি। হাওয়ার বেগে খবরও ছড়িয়ে পড়ে।

 

 

মিথিলা কিন্তু সে দিন ভয় পাননি। ভেঙেও পড়েননি। বরং দৃঢ় ভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। অপরাধীদের শাস্তি দিতে নায়িকা প্রশাসনের সাইবার অপরাধ দমন শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সমস্তটা জানিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেন। অনুরোধ জানান, অপরাধীদের যেন শাস্তি দেওয়া হয়। তিনি বিনোদন দুনিয়ার বিশিষ্ট জন। তাই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকারণ কৌতূহল তিনি বরদাস্ত করবেন না। এতে মিথিলা এবং তাঁর পরিবারের সম্মানহানি হচ্ছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে সমস্যার সমাধান হয়।

শনিবার, নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে কী উপলদ্ধি মিথিলার? সে কথাও তিনি লিখেছেন ফেসবুকে। তাঁর কথায়, ‘তিন বছরের এই যুদ্ধ অবশ্যই প্রথমে প্রচণ্ড আঘাত করেছে। ধীরে ধীরে এই আঘাতই আমার ঢাল হয়ে উঠেছে। আমায় শক্তিশালী বানিয়েছে। জীবন নিজের ছন্দে এগিয়ে গিয়েছে।’ তাঁর মতে, বড় হওয়ার পরে তিনি কখনওই ভাবেননি, তাঁর জীবন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। এবং সেখানে একা লড়াই করতে হবে। যদিও পুরোপুরি একা ছিলেন না মিথিলা। পাশে পেয়েছিলেন পরিবার, বন্ধু, এবং অসংখ্য সহৃদয় মানুষকে। যাঁরা পাশে থেকে সমানে তাঁকে সমর্থন করেছেন। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। নায়িকার কথায়, ‘আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের জন্যই এখনও পৃথিবীতে ‘ভাল’ শব্দটির অস্তিত্ত্ব আছে। আপনার জন্যই এখনও মানুষের প্রতি আমার মনে বিশ্বাস রয়েছে। ভালোতে বিশ্বাস করতে পারি। এই সুন্দর পৃথিবীতে আয়রার বেড়ে ওঠা উপভোগ করতে পারছি।’

তিন বছর আগের লড়াই নিয়ে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার কাছে মুখ খুলেছেন মিথিলা। নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিয়ে বলেছেন, ‘‘শক্ত মানসিকতার নারীদের ভেঙে দেওয়ার জন্য সমাজের কিছু লোক নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করে যায়। যেন অন্য নারীরা দেখে ভয় পায়। মুখ না খুলতে পারে। কিন্তু যে নারী পুরো পৃথিবার সঙ্গে একা লড়ে, নিজের জীবন ও জীবিকার দায়িত্ব, সন্তান লালনের দায়িত্ব, পুরো পরিবারের দায়িত্ব একা বহন করে, সে শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাকে ভাঙা এত সহজ নয়।’’

 

আরও পড়ুন: