সংক্ষিপ্ত

হৃদস্পন্দন এক লাফে ৯১। রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০। শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। সব দেখেশুনে সব্যসাচীর প্রশ্ন, ‘কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গিয়েছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলো মেয়েটা।

‘ঐন্দ্রিলা আছে। ঐন্দ্রিলা থাকবে। রাখে বড়মা, তো মারে কোন…’ সব্যসাচী চৌধুরীর এই একটি কথায় ফের চাঙা পশ্চিমবঙ্গবাসী। মঙ্গলবার রাত থেকে পরপর হৃদরোগ। বুধবার রাতে মৃত্যুর ভুয়ো খবর। ফেসবুকে সবাই যখন ভেঙে পড়েছেন তখনও সবাইকে শান্ত করেছিলেন ছোট পর্দার সাধক বামদেব। তাঁর ছোট্ট পোস্ট, ‘আর একটু থাকতে দাও ওকে… এ সব লেখার অনেক সময় পাবে।’ সেই পোস্ট ধুলোপড়ার মতো কাজে দিয়েছিল। সবাই শোকার্ত তখনও। কিন্তু সেই শোক অনেকটাই সংযত। শুক্রবার রাতে দীর্ঘ পোস্ট সব্যসাচীর পাতায়। সেখানে তাঁর ঐন্দ্রিলা সম্পর্কে যাবতীয় বিস্তারিত তথ্য। এই একটি পোস্টেই তিনি জানিয়েছেন, একটু একটু করে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে অভিনেত্রীর। একই পোস্টে তিনি এই প্রথম উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ, ‘মানুষের গায়ে আজকাল বড়ই শকুন শকুন গন্ধ পাই। গত দুই দিন ধরে হাসপাতালের নীচে বেশ ভিড় জমেছিল। ওর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে কাল রাত থেকে একেবারে খাঁ খাঁ করছে।’

যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের কাছে ঐন্দ্রিলার মৃত্যুই কি কাম্য ছিল? অভিনেতার পোস্ট যেন এই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে।

তবে এই একটি পোস্ট ফের নতুন করে সবাইকে আশার আলো দেখিয়েছে। সব্যসাচীর পোস্ট পড়ে তাঁকে কুর্নিশ করেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ঈশ্বরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। অভিনেত্রী রণিতা দাসের মতে, ‘বিশ্বাস আছে। সব ঠিক আছে। সব ঠিক থাকবে।’ সব্যসাচীর প্রতি তাঁর বার্তা, ‘সব্য, প্রেম হল ভক্তি। এবং তুমি এটা ভাল করেই জানো।’ অভিনেত্রী দর্শনা বণিকের দাবি, ‘ঐন্দ্রিলা আছে। ঐন্দ্রিলা থাকবে।’ ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে রিমঝিম গুপ্ত ঐন্দ্রিলার মা হয়েছিলেন। তার পর থেকেই তিনি অভিনেত্রীকে মেয়ের মতো স্নেহ করেন। তিনিও এ দিন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। মন্তব্য বিভাগে ধরা পড়েছে তাঁর সেই অনুভূতি। তিনি লিখেছেন, ‘খুব কাঁদছিলাম। একটু শান্ত হল মনটা। তোমার মতো জীবন্ত ঈশ্বর থাকলে ওর কিছু হবে না।’ তিনি সব্যসাচীকে ঐন্দ্রিলার জীবন্ত মির্যাকল বলে সম্বোধন করেন। এবং এও জানান, প্রাণ ভরা প্রার্থনা যাদের আজও এখনও থাকবে।

শুক্রবার রাতের পোস্টে কী জানিয়েছেন সব্যসাচী? কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা? অভিনেতার লেখনি বলছে, বৃহস্পতিবার ঠিক রাত আটটায় যখন তিনি বিমর্ষমুখে নীচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখেন, হৃদস্পন্দন এক লাফে ৯১। রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০। শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। সব দেখেশুনে সব্যসাচীর প্রশ্ন, ‘কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গিয়েছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলো মেয়েটা। গিয়েছে বললেই ও যাবে না কি! যেতে দিলে তো যাবে। এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা একপ্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছে, এমন কি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আগে ক্লিনিক্যালি সুস্থ হোক, নিউরোর কথা পরে ভাববো।’

অথচ বুধবার সকাল থেকে এই ছবিটাই ছিল ভিন্ন। পরপর হৃদরোগ। হৃদস্পন্দন নেমে চল্লিশের নীচে তলিয়ে গিয়েছিল। মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন। চারপাশে কান্নার আওয়াজ। তার মাঝে চিকিৎসকেরা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এল বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। বৃহস্পতিবার বিকেলে অবস্থা আরও খারাপ। সব্যসাচীর কথায়, ‘বিকেলের পর দেখলাম হাত, পা, মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার, শরীর ঠান্ডা। হার্ট রেট কমতে কমতে ৪৬, বিপি ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিলো, ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে, এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না। কী দরকার ছিল এত কিছু করার, শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি, মায়ার টান বড় কঠিন।’ এর পরেই রাতে ফের লড়াইয়ে ফেরেন ঐন্দ্রিলা।