সংক্ষিপ্ত
টোটা নিজেও বাণিজ্যিক ঘরানার মূল স্রোত থেকে সরে গিয়েছেন। তিনি এখন সিরিজের জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’! বক্তব্য রাখতেই অস্বীকার করেননি তিনি।
বাংলা ছবি বাঁচাতে হবে। বাণিজ্যিক ধারার ছবি ফেরাতে হবে। বলিউডের মতো টলিউড ইন্ডাস্ট্রিও বুঝেছে। কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন, বে়ড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? এই প্রশ্ন সম্প্রতি এশিয়ানেট নিউজ করেছিল জাতীয় স্তরের অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরীর কাছে। টোটা নিজেও বাণিজ্যিক ধারার ছবি করেই জনপ্রিয়। প্রশ্ন রাখার আগে বিষয়টি নিয়ে এক প্রস্থ আলোচনাও হয়েছিল শহরে। বৈঠকে নিজেদের ভাবনা ভাগ করে নিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বিক্রম ঘোষ, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, অরিন্দম শীল এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই সবাই বাণিজ্যিক ধারার ছবি ফেরানো, ছবির বাজেট, সিঙ্গল পর্দার সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেন। সব শুনে টোটা কী বললেন? অভিনেতা বরাবর স্পষ্টবাদী। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর কথায় শাণিত ব্যঙ্গ, ‘‘একে বাংলা ছবির আলোচনা ইংরেজি ভাষায়। তার উপরে সেই ধারার ছবির পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক, পরিবেশক, হলমালিক— কেউ নেই! এ তো সেই মাল্টিপ্লেক্সে বসে, স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করে পপকর্ন খেতে খেতে বাংলা ছবি দেখার সামিল! এতে টলিউডের হাল ফিরবে?’’ টোটার মতে, প্যানেলে তাঁদেরই ডাকা উচিৎ যাঁরা সফল বাণিজ্যিক ছবির অংশ ছিলেন। তাই আদর্শ প্যানেল হওয়া উচিৎ শ্রীকান্ত মোহতা, মহেন্দ্র সোনি, কোয়েল মল্লিক, নিসপাল সিং, প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী, স্বপন সাহা, অনুপ সেনগুপ্ত, রাজ চক্রবর্তী, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জিৎ, দেব, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাঁচ জন সিঙ্গল স্ক্রিন হলমালিক, পাঁচ জন পরিবেশক, পাঁচ জন বুকার। তবেই সত্যি সত্যি সুরাহা মিলবে, নচেৎ লবডঙ্কা!
সম্ভাব্য প্যানেলের কথা উল্লেখ করেই অভিনেতা দ্বিতীয় ধাপ ছুঁয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা প্রেক্ষাগৃহ ভরাবেন সেই দর্শকরা কী চান? ছবি-মুক্তির পরে প্রত্যেকটি প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে সবার আগে সেটা জানতে হবে। তাঁর এও দাবি, ইদানীং ‘হল ভিজিট’ মাল্টিপ্লেক্সে সীমাবদ্ধ। অভিনেতা-পরিচালক স্টেজে উঠে দূর থেকে মাইকে কথা বলে চলে যান। ওটা করতে হবে না। সবার আগে কথা বলতে হবে যাঁরা প্রেক্ষাগৃহে আলো দেখিয়ে আসনে বসান সেই ‘লাইটম্যান’দের সঙ্গে। তাঁরা সব থেকে ভাল দর্শকদের বোঝেন। টোটা নিজের ছবি-মুক্তির সময় সেটাই করতেন। তাঁর মতে, দর্শকের চাওয়া, না চাওয়া নিয়ে এখন আর মাথা ঘামায় না কেউ। পরিচালক তাঁর ইচ্ছেমতো ছবি তৈরি করেন। ফলাফল, যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এই পাকামি করতে গিয়ে হিন্দি ছবির দুনিয়া পর্যন্ত ডুবতে বসেছিল। ওরা বুদ্ধিমান। বুঝতে পেরে আগের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে। বাংলা ছবির অবস্থা দেখুন! সব জেনেও জেগে ঘুমোচ্ছে।’’
তার পরেই তাঁর অনুযোগ প্রসেনজিৎ-দেবের উদ্দেশে। টোটার প্রশ্ন, ‘তোমরা বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তোমাদের ‘সুপারস্টার’ তকমা কিন্তু অন্য ধারার ছবি দেয়নি। খেয়াল করে দেখবে, অসংখ্য পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা কমল হাসান এবং মোহনলাল এখনও বাণিজ্যিক ছবিও করেন। সেই ধারাটাকেই ভুলে গেলে? এখন অন্য ধারার ছবিতে ব্যস্ত! বুম্বাদা, দেব তোমাদের কাছে আন্তরিক অনুরোধ, বছরে একটা অন্তত বাণিজ্যিক ধারার ছবি করো। নইলে বাংলা ছবির দুনিয়া বাঁচবে না।’ টোটা নিজেও বাণিজ্যিক ঘরানার মূল স্রোত থেকে সরে গিয়েছেন। তিনি এখন সিরিজের জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’! বক্তব্য রাখতেই অস্বীকার করেননি তিনি। বলেছেন, ‘প্রভাতদা, হরদা, অনুপদা, সুজিতদা, স্বপন সাহা—কেউ আর ছবি বানাচ্ছেন না। বাণিজ্যিক ধারার ছবিই তো আর সে ভাবে হচ্ছে না। কার পরিচালনায় অভিনয় করব? যাও বা দু-একটা হয় সেখানে আমার ডাক পড়ে না। অথচ মুম্বইয়ের করণ জোহর তাঁর বাণিজ্যিক ধারার ছবিতেই আমায় ডাকলেন!’ একই সঙ্গে এও জানিয়েছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত একটিই ছবি প্রযোজনা করেছেন, ‘ভিলেন’। সেটি আদ্যপান্ত বাণিজ্যধারার ছবি। টোটার দাবি, তিনি আবার যদি প্রযোজনায় ফিরে আসেন তা হলে বাণিজ্যিক ছবিই বানাবেন।
এবং চিরঞ্জিতের মতোই তিনিও জিৎকে সমর্থন জানিয়েছেন। অভিনেতার মতে, এই এক জন অভিনেতা নিজের শিকড় ভোলেননি। বাণিজ্যিক ছবির ধারাতেই নিজেকে ধরে রেখেছেন। কিন্তু একা জিৎ কতটা সামলাবেন? আজও যদি আগের মতোই সিঙ্গল পর্দার রমরমা থাকত তা হলে জিতের ছবি দর্শকদের একটা বড় অংশ দেখতে যেত। এই একটি জায়গায় মার খেয়ে গিয়েছেন ‘বস’! আর টোটা? তাঁকেও তো এই ধরনের আলোচনায় ডাকা হয় না! এ বারে নিজেকে নিয়েই রসিকতা তাঁর, ‘আমি ঠোঁটকাটা। তাই না অভিনয়ে না আলোচনা সভায় সে ভাবে ডাক পাই! আমি থাকলে এ গুলোই বলতাম। বারেবারে আলোচনায় বসা কাজের কথা নয়। প্রথম আলোচনাতেই একটা রাস্তা বের করতে হবে। পরবর্তীতে সেই রাস্তায় হাঁটলে তবেই বাংলা ছবি থাকবে। নইলে ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ কথাটা বড্ড হাস্যকর শোনায়!
আরও পড়ুন:
Breaking News: বাণিজ্যিক ছবিতে ফিরছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়! পরিচালনায় হরনাথ-হিন্দোল?
বাংলা ছবির উন্নতি নিয়ে আলোচনা, সেখানে হরনাথ, জিৎ, অনুপ সেনগুপ্তই নেই? প্রশ্নে চিরঞ্জিৎ
বাংলা ছবি কেন দক্ষিণী দাপটে ম্লান? প্রসেনজিতের দাওয়াই, ১০ কোটি বাঙালি হলে এলেই ‘হাউজফুল’