সংক্ষিপ্ত

প্রভাত রায়ের অভিযোগ, ‘শেষ দেখা দেখতে আসা দূরের কথা, ফোন করেও কেউ খবর নেননি!’ তাঁর প্রশ্ন, ‘রাতারাতি এ ভাবে ভুলে যেতে হয়?’

দিন কয়েক আগেই তোপ দেগেছেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। চাঁচাথোলা ভাষায় তাঁর অভিযোগ, এই প্রজন্ম আগের প্রজন্মকে সম্মান দিতে জানে না। তাঁর কাঠগড়ায় আবীর চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে আগে না নামিয়ে আবীর আগে স্টুডিয়োয় নামতে চেয়েছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রবীণ অভিনেতার। সোমবার রাতে প্রায় একই অনুযোগ প্রভাত রায়ের ফেসবুক পোস্টে! অভিমানী প্রবীণ পরিচালক জানিয়েছেন, ‘আমি প্রায় ১৫ জন নতুন ‌ছেলেমেয়েকে‌ সিনেমায় সুযোগ দিয়েছি। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, টোটা রায়চৌধুরী থেকে শুরু করে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে তিন জন আমাকে মনে রেখেছেন। ঋতুপর্ণা, টোটা, সায়ন্তিকা। বাকি সব অকৃতজ্ঞ। একটা খোঁজও নেয় না!’ অথচ এই পরিচালকি বাংলা ছবির দুনিয়া সমৃদ্ধ করেছেন ‘লাঠি’, ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ‘শুভদৃষ্টি’, ‘প্রতিকার’-এর মতো ছবি বানিয়ে।

বরাবরের নির্বিরোধী প্রভাত রায়। হঠাৎ তাঁর এই অনুযোগ কেন? জানতে যোগাযোগ করেছিল এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। পরিচালকের কথায়, ‘আমার কাছে অভিনেতারা সন্তানসম। একই ভাবে তাঁদের ভালবেসেছিলেন আমার স্ত্রী জয়শ্রী। তখন আমি পুরো দমে কাজ করছি। বাড়িতে অভিনেতাদের ভিড় লেগেই থাকত। তাঁরা এসেই আগে বৌদির খোঁজ করতেন।’ পরিচালকের দাবি, তাঁর স্ত্রীর থেকে তাঁরা প্রশ্রয় পেতেন বলেই তাঁকে সবাই ডাকাডাকি করতেন। জয়শ্রীও ওঁদের কাছে দরাজ। বসিয়ে ভাল-মন্দ খাইয়ে কবে কাজে বা বাড়িতে পাঠাতেন। পরিচালকের স্ত্রী ৫-৬ মাস গত। প্রভাত রায়ের অভিযোগ, ‘শেষ দেখা দেখতে আসা দূরের কথা, ফোন করেও কেউ খবর নেননি!’ তাঁর প্রশ্ন, ‘রাতারাতি এ ভাবে ভুলে যেতে হয়?’

 

 

একই সঙ্গে তিনি স্মৃতির পাতাও উলটেছেন, জনা ১৫ জনকে তিনিই প্রথম বড় পর্দায় নায়ক বা নায়িকা হিসেবে সুযোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা আজ সুযোগই পেতেন না যদি না তিনি নতুনদের কথা ভাবতেন। সেই সময় এক জনকে ডাকলে দু’জন নায়ক বা নায়িকা এসে উপস্থিত হতেন। এক জনকে নিলে আর এক জনের মুখ ভার হত। বলতেন, ‘আমায় নিলেন না দাদা?’ আজ সব অতীত। ব্যতিক্রম ঋতুপর্ণা, টোটা, সায়ন্তিকা, অপর্ণা সেন। প্রথম তিন জন বাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। অপর্ণা ফোনে খবর নিয়েছেন। পরিচালকের আফসোস, ‘‘জয়শ্রীর কথা বাদ দিন, আমার কথাই আর কারওর মনে নেই! কোথায় আছি, কেমন আছি— মনেই পড়ে না কারও। বেঁচে আছি কিনা, সেটাও কি কারওর জানতে ইচ্ছে করে না। সোমবার রাতে একা একা বসে এ সবই মন পড়ছিল। সেই খারাপ লাগা থেকেই এই পোস্ট।’’ দিন দুই আগে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় একই বিষয় নিয়ে এক সংবাদমাধ্যমের কাছে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ‘আমরা আগে বড়দের দিকটা দেখতাম। তাঁদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে তার পর নিজেদের কথা। এই প্রজন্ম সে সবের ধার ধারে না। এক বার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক গাড়িতে ছিলাম। আগে ওঁকে বাড়িতে নামিয়ে তার পর বাড়ি ফিরেছিলাম। এখন পুরোটাই উল্টো।’ প্রভাত রায়েরও কি তা হলে একই ধারণা? দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরিচালকের যুক্তি, ‘হয়তো আমরা সম্মানের যোগ্য নই। তাই এই প্রজন্ম আর আমাদের পোঁছে না।’