সংক্ষিপ্ত
- ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়াকালীন প্রেমে পড়েন ইরফান
- বন্ধুত্ব থেকেই সুতপার সঙ্গে প্রেমের সূত্রপাত
- ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ ভাবে রোমান্ট্যিক ছিলেন অভিনেতা
- বাঙালি মেয়ের জন্য ধর্ম বদলেও আপত্তি ছিল না ইরফানের
ইরফান খান, নায়ক সুলভ চেহারা নেই, নেই বাইসেপ বা ট্রাইসেপ। তাও নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে এদেশের মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। কেবল এদেশেই বা বলি কি করে, হলিউড থেকেও তাঁর ডাক এসেছিল অভিনয় প্রতিভার জন্য। কিন্তু লড়াই করে বলিউডে নিজের জমি তৈরি করা ইরফানের জীবনের গতি কেটে গিয়েছিল ২০১৮ সালেই। সেই বছর মার্চ মাসেই আচমকা ছড়িয়ে পড়েছিল ইরফানের অসুস্থতার খবর। চমকে গিয়েছিলেন সকলেই।
আরও পড়ুন: গর্ভধারিনীর মৃত্যুর পরেই ভর্তি হতে হয়েছিল আইসিইউতে, মা-ছেলের ফের দেখা হল জীবনের ওপারে
সেই বছর থেকেই লন্ডনে চলছিল অভিনেতার চিকিৎসা। জীবনে এসেছিল নানা ওঠাপড়া। শরীরের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তেন ইরফান। তবে সব কঠিন পরিস্থিতিতেই তাঁর পাশে সারাক্ষণের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাঙালি স্ত্রী সুতপা সিকদার। এ সাক্ষাৎকারে ইরফান নিজেই বলেছেন, “সুতপার ব্যাপারে আর কী বলব। ২৪X৭ আমার পাশে ছিল ও। আজ আমি যে অবস্থায় আছি, মনোবল ফিরে পেয়েছি, যেটুকু সুস্থ রয়েছি—-এই সবটায় ওর অবদান কতটা বলে বোঝানো যাবে না। ওর জন্যই এখন বাঁচতে চাই।”
মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের জীবনের ওঠাপড়ার নান মুহূর্ত শেয়ার করতেন ইরফান। বেশিরভাগ সময়েই অভিনেতাকে বলতে শোনা যেত, “জীবনটা যেন নাগরদোলা। ভাল-খারাপ মুহূর্ত, জীবনের নানা ওঠানামা নিয়েই বেঁচে রয়েছি।” তাঁর পোস্ট থেকেই বিভিন্ন সময়ে আন্দাজ করা গিয়েছিল যে অভিনেতা মানসিক ভাবেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তবে সেই কঠিন সময়ে ইরফানকে সামলেছেন সুতপা। আগলে রেখেছেন ভালবাসায়। প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছেন। মনোবল বাড়িয়েছেন। আর তাই তো ইরফান বলেছেন, “ওর জন্যই বাঁচতে চাই। এত কিছুর পরেও আমায় এই জায়গায় দাঁর করানোর পুরো কৃতিত্বই সুতপার।”
তবে কথা রাখতে পারলেন না অভিনেতা, বুধবার কোকিলাবেন হাসপাতালে প্রয়াত হলেন তিনি। তবে স্বামীর শেষ মুহুর্তেও পাশে ছিলেন সুতপা। বাঙালি মেয়ে সুতপার সঙ্গে ইরফানের পরিচয় হয়েছিল সেই কলেজ জীবনে। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় একে অপরের সহপাঠী ছিলেন ইরফান ও সুতপা। বন্ধুত্ব থেকে ক্রমে গাঢ় হয় তাঁদের প্রেম। সেই সময় দুজনে লিভ ইন সম্পর্কেও ছিলেন বলে জানা যায়। নিঃস্বার্থ ভাবেই ইরফানকে ভাল বাসতেন সুতপা। কারণ, বিয়ে করার সময় ইরফানের রোজগার তেমন ছিল না।
সুতপুার জন্ম দিল্লিতে হলেও তাঁর আদি বাড়ি অসমে। ইরফানের অভিনয়ের দিকে ঝোঁক থাকলেও সুতপার পছন্দ ডায়লগ রাইটিং। শোনা যায় সুতপাকে বিয়ে করতে হিন্দু হতেও রাজি ছিলেন ইরফান। তবে শেষপর্যন্ত আর ধর্ম বদল করতে হয়নি। দুই পরিবারই ভালবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছিল দুজনকে। ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুতপাকে বিয়ে করেছিলেন ইরফান। তারপর দীর্ঘ পথ চলা। মাঝে সঙ্গী হয়েছে দুই ছেলে বাবিল ও আয়ান। এই দীর্ঘ সফরে প্রকৃত অর্থেই ইরফানের অর্দ্ধাঙ্গীনি হয়ে উঠেছিলেন সুতপা। শেষদিন পর্যন্ত পালন করেছেন নিজের দায়িত্ব। জানা যাচ্ছে, বুধবার সকালে প্রয়াত হওয়ার আগে সুতপা ও দুই সন্তানের সান্নিধ্যেই জীবনের শেষ মুহুর্তটা কাটান অভিনেতা।।