সংক্ষিপ্ত
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নামের মধ্যে ফ্রান্স জড়িয়ে থাকলেও আদতে এর জন্ম হয়নি ফ্রান্সে। আসলে এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরি করার পিছনে অনেকটা অবদান রয়েছে ইউরোপের। সবথেকে বড় বিষয় হল বেলজিয়ামে যদি মাছের আকাল না হত তাহলে হয়তো কখনওই এই স্বর্গ সুখের স্বাদ গ্রহণ করতে পারতেন না অনেকেই।
টোম্যাটো সসে ডুবিয়ে হলুদ লম্বা একটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই চোখ বন্ধ করে মুখে পুড়ল সুমন্ত। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তার কাছে যেন অমৃত, বা তার থেকে বেশি কিছু বললেও ভুল হবে না। তবে গোটা বিশ্বে এমন অনেক সুমন্তই রয়েছে যাদের কাছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই স্বর্গ সুখের সমান। তবে এর নামের মধ্যে ফ্রান্স জড়িয়ে থাকলেও আদতে এর জন্ম হয়নি ফ্রান্সে। আসলে এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরি করার পিছনে অনেকটা অবদান রয়েছে ইউরোপের। সবথেকে বড় বিষয় হল বেলজিয়ামে যদি মাছের আকাল না হত তাহলে হয়তো কখনওই এই স্বর্গ সুখের স্বাদ গ্রহণ করতে পারতেন না অনেকেই।
তবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্ম নিয়ে একাধিক মতবিরোধ রয়েছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এর উৎপত্তির কাহিনীগুলি...
১৫৩৭ সাল। স্প্যানিশ নাগরিক জিমেনেজ দে কুয়েসেডা তাঁর দলবল নিয়ে কলম্বিয়া সফরে বেরিয়েছিলেন। সফরের সময় একটি গ্রামে এক ভিন্ন প্রজাতির আলুর সন্ধান পেয়েছিলেন। সাধারণত যে আলু তাঁরা দেখে অভ্যস্ত ছিলেন তার থেকে ওই আলু ছিল আকারে অনেকটা বড়। তাঁরা ওই আলুর নাম দিয়েছিল 'ট্রাফলস'। তাঁর কলম্বিয়া ভ্রমণের প্রায় ২০ বছর পর স্পেনে ওই প্রজাতির আলুর চাষ শুরু হয়। ওই এতই সময় ইট্যালিতেও সেই আলুর চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু, প্রথমে তারা আলু চাষ করে সফল হতে পারেনি। তাদের আলুগুলো তুলনায় অনেকটা ছোটো ছিল। আর স্বাদও ছিল তেতো। এরপর ধীরে ধীরে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তারা সফল হয়। তারপর বেলজিয়ামে শুরু হয় এই আলুর চাষ। কিন্তু, তখনও কেউ সেখানে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের দিকে ঝোঁকেননি।
বেলজিয়ামবাসী মাছ খেতে খুবই ভালোবাসেন। পাতলা করে মাছ কেটে তা ভেজে তাঁরা খেতেন। কিন্তু, হঠাৎই সেখানে মাছের আকাল দেখা যায়। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তখনই মাছের আদলে আলুকে সরু সরু করে কেটে খাওয়া শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে মাছ থেকে আলুর দিকে ঝোঁকেন তাঁরা। আর মাছের থেকে আলুর চাষ তাঁদের কাছে অনেক বেশি সহজ ছিল। সেই কারণে ১৭ বা ১৮ শতকের শেষের দিকে এভাবেই জন্ম হয়েছিল ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের।
আরও পড়ুন- গরম ভাতে জমুক পাতে ঢাকাই ভুনা ইলিশ, এক অন্যস্বাদের লাঞ্চ প্ল্যানিং
তবে এখানেই শেষ নয়। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্ম নিয়ে একাধিক মতভেদ রয়েছে। কয়েকজনের মতে, ফ্রান্সে আলুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিলেন সে দেশের সেনাবাহিনীর ডাক্তার অ্যান্টনি অগাস্টিন পারমেনতিয়ার। তিনি যদি না থাকতেন তাহলে ফ্রেঞ্চরা হয়তো আলু খাওয়ার কথা কখনও ভেবেই দেখতেন না। ১৭৭২ সালে প্যারিসের মেডিকেল বিভাগ জানায় যে আলু খেলে কোনও সমস্যা হয় না। তারপরই শুরু হয় আলু খাওয়া। আর ওই চিকিৎসকই আলুর চাষ শুরু করেছিলেন। এমনকী, আলুরখেতে পাহারার ব্যবস্থাও করেছিলেন। ধীরে ধীরে ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আলু। ১৭৮৫ সাল। ফ্রান্সে আলুর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন আর হয়তো আলু খাওয়া হবে না। কিন্তু, ১০ বছর পর সেই দুর্ভিক্ষ কেটে যায়। প্রচুর পরিমাণ আলুর চাষ শুরু হয়েছিল সেখানে। সেই সময় ফ্রেঞ্চরা আলু সরু সরু করে কেটে ভাজতে শুরু করেছিল। আর সেখান থেকেই জন্ম হয়েছিল ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের।
যদিও তখনও পর্যন্ত আলু ভাজার নাম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দেওয়া হয়নি। ১৮০১ সালে ফরাসি রাঁধুনি থমাস জেফারসন আলু দিয়ে একটি বিশেষ পদ রান্না করেছিলেন। আলু কেটে প্রথমে তা লবণে ডুবিয়ে রেখেছিলেন। তারপর তা ডুবো তেলে ভেজেছিলেন। অনেকের ধারণা সেই থেকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নাম এসেছে।
তবে নামে কি আর আসে যায়! মতবিরোধ থাকলে তা থাকুক না। তাতে আর কি বা হবে। এখন গোটা বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পাওয়া যায়। তাই এদের ইতিহাস নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে কী লাভ! বরং এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে নিজের রসনার তৃপ্তি ঘটানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নয় কি?