সংক্ষিপ্ত
শনিবার আইএসএল ২০২১-২২ (ISL 2021-22) -এর প্রথম ডার্বি (Derby)। মুখোমুখি এসসি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan vs SC East Bengal)। প্রথম ম্য়াচে জয় পেয়েছে অ্যান্টোনিও লোপেজ হাবাসের (Antonio Lopez Habas) দল। অপরদিকে ড্র দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ম্যানুয়েল দিয়াসের (Manuel Diaz) দলকে। ডার্বি জিততে মরিয়া দুই দল।
বিশ্ব ফুটবলে একাধিক ডার্বি ম্যাচ রয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি,মিলান ডার্বি, লা লিগার এল ক্লাসিকো সহ একাধিক। ডার্বির ইতিহাসে যে ৫টি ম্য়াচকে সবথেকে উত্তেজক তকমা দেওয়া হয়ে থাকে তাদের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান (East Bengal vs Mohun Bagan)অন্যতম। শতবর্ষ প্রাচীন কলকাতা ফুটবল ডার্বি সাক্ষী অনেক ইতিহাসের। আবেগের চিরন্তন ডার্বি, ঘটি-বাঙালের লড়াই, ইলিশ-চিংড়ির দ্বৈরথ ঘিরে বাঙালির উন্মাদনা যে বরাবরই আলাদা। শনিবার আরও একটি ডার্বি। আইএসএল ২০২১-২২ (ISL 2021-22) মরসুমের প্রথম ডার্বিতে মুখোমুখি হতে চলেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan vs SC East Bengal)। তার আগে এক ঝলকে দেখে নিন ডার্বির ইতিহাসে অন্যতম সেরা ৫টি ম্য়াচের ঝলক।
১. ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫, ইস্টবেঙ্গল ৫ – মোহনবাগান ০:
ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহন ডার্বি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এটি। এই জয় ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে সোনায় সমৃদ্ধ। যা এখনও অটুট রয়েছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়কালে ইস্টবেঙ্গল সমস্ত ভারতীয় ট্রফি সহ ৬ বার কলকাতা লিগ ও এই মহা ম্যাচ জয় করে শিল্ড পেয়েছিল। এই ম্যাচে গোলদাতারা হলেন শ্যাম থাপা। তিনি দুটি গোল করেছিলেন। এছাড়া রঞ্জিত মুখার্জি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত এবং শুভঙ্কর সান্যাল একটি করে গোল করেছিলেন। এই হারের ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে মোহনবাগান সমর্থক উমাকান্ত পালধি আত্মহত্যা করেছিলেন।
২. ১৩ জুলাই ১৯৯৭, ইস্টবেঙ্গল ৪- মোহনবাগান ১ :
এই ম্যাচ ছিল দর্শক সংখ্য়ার নিরিখে সের ঘটি-বাঙালের লড়াই। যুবভারতীর গ্যালারিতে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮১ জন। মোহনবাগান কোচ অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেমকে ধূলিস্য়াৎ করেছিলেন বাইচুং ভুটিয়া। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন নাজিমুল হক, এরপর বাইচুংয়ের হ্যাট্রিক সহ মোট চার গোল, অপরদিকে মোহনবাগানের হয়ে গোলটি করেছিলেন চিমা ওকেরি। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে ইস্ট – মোহন সমর্থকবৃন্দের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বলা যায় বাইচুং ভুটিয়া প্রায় একাই সমগ্র ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন।
৩. ২০০৭,মোহনবাগান ৪-ইস্টবেঙ্গল ৩:
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন লাল-হলুদ কোচের চেয়ারে। কলকাতা ডার্বির উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য় এটাই ছিল যথেষ্ট। বাগানের আক্রমণ ভাগে তখন ছিলেন সবুজ তোতা হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। ম্য়াচের প্রথম গোল আসে লালমপুইয়ার একক প্রচেষ্টায়। ৩৫ মিনিটের মাথায় ব্যারেটোকে আটকাতে না পেরে বক্সের মধ্যে তাঁকে ফাউল করা হয়। পেনাল্টি থেকে গোল করে যান ব্যারেটো। বিরতির আগেই তৃতীয় গোল করে যান ভেঙ্কটেশ। বিরতিতে ৩-০ ফলে মোহনবাগান তখন আইএফএ শিল্ডের ৫-০-এর বদলার আশা দেখছিল।কিন্তু বিরতির পর ইস্টেঙ্গলের খেলা পাল্টে যায়। প্রথম গোল শোধ দেন আলভিটো। কিন্তু এরপর ভেঙ্কটেশ দ্বিতীয় গোল করে ৩ গোলের ব্যবধান ফেরান। এরপর আলভিটো আরও একটি ও এডনিলসন গোল করে ৪-৩ করেন। অনেক চেষ্টা করেও চতুর্থ গোল আসেনি লাল-হলুদের।
৪. ২৫ অক্টোবর ২০০৯, মোহনবাগান ৫- ইস্টবেঙ্গল ৩ :
এই ম্যাচকে মোহনবাগান সমর্থকরা য ১৯৭৫-এ হারের প্রতিশোধ ম্যাচ হিসেবে দেখেন। এই ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন নাইজেরিয় ফুটবলার চিডি এডে। চিডির চার গোল সহ মনীশ মৈথানী একটি গোল করেন মোহনবাগানের হয়ে। অপরদিকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেন ইয়াকুবু(২) এবং নির্মল ছেত্রী। এই দিনটি সমস্ত মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা চলে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই যে, ১৯৭৫ এর সেই বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের অন্যতম অংশীদার সুভাষ ভৌমিক এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন। করিম, সুভাষ যুদ্ধে করিম জিতে যায়।
আরও পড়ুনঃISL 2021: ঘটি-বাঙালের চিরন্তন লড়াই, মরসুমের প্রথম ডার্বিতে এগিয়ে কোন দল
আরও পড়ুনঃISL 2021: ডার্বিতে কী হতে চলেছে এটিকে মোহনবাগানের রণনীতি, জানুন বিস্তারিত
আরও পড়ুনঃISL 2021: ডার্বির আগে হুঙ্কার, কী বললেন লাল-হলুদ কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ
৫. ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ইস্টবেঙ্গল ৪ – মোহনবাগান ০ :
সাম্প্রতিক কালে এই ম্যাচটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে ডার্বি জয়। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দু’গোল করেছিলেন কোরিয়ান ফুটবলার ডু ডং হিউন। ফ্রি কিক থেকে দুটি চমৎকার গোল সমর্থকদেরকে উপহার দিয়েছিলেন তিনি। যা দেখে অনেকেই মেসির ফ্রি কিকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এছাড়াও অপর দুটি গোল করেছিলেন রাহুল ভেকে ও রফিক। ডু ডংকে কেন্দ্র করে এই ম্যাচে ছিল অনেক প্রত্যাশা, বলা যায় প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছিলেন ডু ডং।