সংক্ষিপ্ত
ভারতীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে (AIFF) নির্বাসিত (BAN)করল ফিফা (FIFA)। ‘তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের’ কারণে এই শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে ফিফা। আরও কোন কোন কারণে এই নির্বাসন, জেনে নিন বিস্তারিত।
আঁধার নামল ভারতীয় ফুটবলে। দেশের ফুটবল ইতিহাসের কালো দিন হয়ে উঠল ১৬ অগাস্ট ২০২২। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ব্যান করল ফিফা। দেশের ফুটবল প্রশাসনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। যার ফলে ঘোর সঙ্কটে পড়ে গেল ভারতীয় ফুটবলে ভবিষ্যৎ। কিন্তু শুধুই কী তৃতী পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে ভারতীয় ফুটবলকে নির্বাসিত করল ফিফা। না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ। প্রফুল প্যাটেল গোষ্ঠীর কারসাজিকেও দায়ী করছেন অনেকেই।
এক ঝলকে দেখে নিন ঠিক কী কী কারণে এআইএফএফকে নির্বাসিত করল ফিফা-
১৩ বছর ধরে কোনও নির্বাচন হয়নি। সংস্থার মসনদে রয়েছেন প্রফুল প্যাটেল ও তার লোকজন। প্রফুল্ল প্যাটেল তিন চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে ফেলেছিলেন এবং আবার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর অধিকারই ছিল না তাঁর। যা আইন লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু সূত্রের খবর, নিজেদের জায়গা ছাড়তে অনড় ছিলেন প্রফুল প্যাটেলরা।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এআইএফেএফের পরিস্থিতির উপর হস্তক্ষেপ। তিন সদস্যের কমিটি নিযুক্ত করে দেয় শীর্ষ আদালত। এই সিওএ বা কোয়া কমিটিতে নিযুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারক অনিল ডেভ, প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি এবং ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সমস্তটা পরিচালনা করতে শুরু করেন।
কোয়া নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে পুরো ভোটার লিস্টকে সংস্কার করে। এতে যেমন বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবল কর্তা থেকে শুরু করে রাজ্য ফুটবল সংস্থাদের রাখা হয়, সেই সঙ্গে প্রাক্তন ফুটবলারদের ভোটার লিস্টে নাম তোলা হয়। ফুটবলারদের ভোটার লিস্টে নাম ঢোকানোর ক্ষেত্রে কোয়া যেটা বিচার্য করেছিল তা হল কোন ফুটবলার কত সংখ্যাক ম্যাচ খেলেছে তার ভিত্তিতে। এই তালিকায় সবার উপর নাম ছিল সুনীল ছেত্রী ও সুব্রত পালের।
সুনীল ছেত্রী বর্তমান ভারতীয় ফুটবলের সিনিয়র দলের অধিনায়ক, সুব্রত পাল ভারতীয় দলের সহকারী কোচ। সেই কারণে স্বার্থের সংঘাত যুক্তিতে ভোটার তালিকা থেকে সুনীল ও সুব্রতর নাম বাদ দেওয়া হয়। বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকায় ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ যা ফুটবল কর্তা সুব্রত দত্তের।এই ভোটার লিস্টে ল্লেখযোগ্য নামগুলির মধ্যে রহিম নবি, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোয়া প্রথম থেকেই এক স্বচ্ছ্ব ভোটার তালিকা বানানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বার্থের সংঘাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। যার জন্য বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর অনেকের নাম ভোটার তালিকায় নেই।
প্রফুল প্যাটেল বিরোধী গোষ্ঠীর এবার আশা করছিল যে এআইএফএফে পালাবদল হচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এক মোক্ষম চাল চেলেছেন প্রফুল প্যাটেলরা। অভিযোগ, প্রফুল প্যাটেলরা পিছনের দরজা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কোয়ার বিরুদ্ধে ফিফাতে নালিশ করেছে। ফিফার রুল বুক অনুযায়ী তাদের অধীনে থাকা সমস্ত ফুটবল সংস্থা একটি স্বয়ং শাসিত। সেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মান্যতা দেয় না ফিফা। তাই কোয়ার হস্তক্ষেপকে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতীয় ফুটবলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ফিফা।
বহু প্রাক্তন ফুটবলরা থেকে শুরু বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক প্রাক্তন কিছু ফুটবল কর্তার মতে, এই নির্বাসন প্রক্রিয়া আসলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করার জন্য করা হয়েছে। প্রফুল প্যাটেলরা যাতে আরও কিছু দিন এআিএফএফের প্রশাসন সজীব হয়ে থেকে যেতে পারেন তার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলে মনে করা হচ্ছে। ফিফার তরফে জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটি সমস্ত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছে, এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি তৈরি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই নির্বাসন বহাল থাকবে।
এই নিষেধাজ্ঞা ফিফা বেশি দিন বলবৎ রাখতে পারবে না বলেও মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। সামনেই অনুর্ধ্ব ১৭ মহিলা বিশ্বকাপ রয়েছে। যার প্রস্তুতি সাড়া হয়ে গিয়েছে। ভারতের উপর ব্যান থাকলে সেই প্রতিযোগিতা এই দেশে হবে না। শেষ মুহূর্তে এই প্রতিযোগিতা অন্য কোনও দেশের পক্ষে আয়োজন করাটাও সমস্যার। সুতরাং ফুটবলের স্বার্থে ফিফাকে এই নিষেধাজ্ঞাকে তুলতে হবে। ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কোয়ার সদস্য ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। এআইএফএফের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। এখন এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট কি মন্তব্য করে সেই দিকেই তাকিয়ে ভারতীয় ফুটবল মহল।
আরও পড়ুনঃঘোর সংকটে ভারতীয় ফুটবল, এআইএফএফকে ব্যান করল ফিফা
আরও পড়ুনঃখেলেছেন আইএসএলে একাধিক দলে, নিজেদের ষষ্ঠ বিদেশীর ক্ষেত্রেও চমক দিতে চলেছে ইমামি ইস্টবেঙ্গল