হিট স্ট্রোক বনাম স্ট্রোক- লক্ষণ বুঝবেন কী করে, কীভাবে সামলাবেন পরিস্থিতি
তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। গুমোট ভাব, চড়া রোদ আর এই প্রচন্ড দাববাহে সকলেরই নাভিশ্বাস ওঠার জোগার। গত কয়েকদিন ধরেই এই ভ্যাপসা আবহাওয়া। এই গরমের কোনও কাজ বাদ যাচ্ছে না। গরমে অফিস, স্কুল, কলেজ সবই চলছে। গরম যতই হোক বাড়িতে থাকার জো নেই। সে কারণে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই সময় হিট স্ট্রোকের কথা শোনা যাচ্ছে সকলের মুখে। কিন্তু, হিট স্ট্রোক আর স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না অনেকেই। আর এই দুটি রোগ প্রসঙ্গে রইল তথ্য। জেনে নিন এই ঝলসানো গরমে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এই দুই রোগের লক্ষণই বা কী কী।
| Published : Apr 28 2022, 12:02 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
গরমে ক্রমে বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। গরমে হিট স্ট্রোক শব্দটা সকলের মুখে প্রচলিত। গরমে অতিরিক্ত গরমে আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এই সময় তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
কোনও কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়। শরীর প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমে শরীরে তাপ কমাতে চেষ্টা করে। কিন্তু, প্রচন্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এতে হিট স্ট্রোক হতে পারে। গরমে অধিকাংশই আক্রান্ত হচ্ছেন হিট স্ট্রোকে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হন। হঠাৎ যদি দেখেন ত্বক লাল, শ্বাস কষ্ট, ক্লান্তি, বমি ভাব, মাথা ব্যথা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে তৎক্ষণাত ডাক্তারি পরামর্শ নিন। এই রোগ আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হন। ঘরোয়া টোটকা না মেনে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অনেকেই হিট স্ট্রোক আর স্ট্রোকের মধ্যে তফাত করতে পারেন না। জেনে নিন স্ট্রোক কী। ডাক্তারি মতে, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে এমনকী মস্তিষ্কের কোষেও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কোনও কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ হলে বা বাধা পেতে রক্ত চলালচ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তখন মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। একেই বলে স্ট্রোক।
নানা কারণে স্ট্রোক হতে পারে। ডিপ্রেশন, মানসিক চাপ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব স্ট্রোক হতে পারে। এনমকী, যারা অত্যাধিক ধূমপান করেন তাদের এমন রোগ হতে পারে। তাছাড়া, অতিরিক্ত ভাজাভুজি খেলে শরীরের নানা রকম ক্ষতি হয়। এর থেকে হতে পারে স্ট্রোক। গরমে এমনিতেই শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। তার মধ্যে এমন সমস্যা বৃদ্ধি পেলে স্ট্রোক হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন। গরমে সবার আগে শরীর ঠান্ডা রাখুন। এই গরমে প্রচুর পরিমাণে জল খান। পর্যাপ্ত জল এই দুই রোগ থেকেই মুক্তি দিতে পারবে। জল পান করলে একদিকে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। ফলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম হবে। তেমনই পর্যপ্ত জল রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখবে। ফলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
গরমে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। স্বাস্থ্যকর খাবার যে কোনও রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। রোজ ১ বাটি করে সবজি সেদ্ধ খান। এতে শরীর ভালো থাকবে। শরীরের সকল ঘাটতি পূরণ হবে সবজিতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনের গুণে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।
ভাজা ভুজি খাবারে একেবারে খাবেন না এই গরমে। এই ধরনের খাবার থেকে হিট স্ট্রোক ও স্ট্রোক উভয় রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ভাজাভুজি ও রেস্তোরাঁর খাবারে অধিক নুন ও চিনি থাকে। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, সঙ্গে একাধিক শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়। যার দরুন একাধিক কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
রোগ মুক্ত থাকতে চাইলে ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করুন। ধূমপানের সময় একাধিক ক্ষতিকারণ উপাদান শরীরে প্রবেশ করে। যা এই দুই রোগের ঝোঁক বাড়ায়। এমনকী ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ হতে পারে ধূমপানের জন্য। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে সবার আগে এই অভ্যেস ত্যাগ করুন।
এই ঝলসানো গরমে একাধিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। ডিহাইড্রেশন, পেটের সমস্যা তো আছেই। সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের আক্রান্ত রোগীর সমস্যা। অন্যদিকে, স্ট্রোকের মতো রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এই সময় সুস্থ থাকতে চাইলে যতটা পারবেন বাড়িতে থাকুন। প্রখর রোদে যেতে হলে ছাতা নিয়ে বের হন। আর বারে বারে নুন চিনির জল খান। সঙ্গে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন।