- Home
- India News
- চিনকে শায়েস্ত করতে ভারতের 'ব্রহ্মাস্ত্রের' উপরেই ভরসা ভিয়েতনামের, জানুন বিধ্বংসী এই মিসাইল সম্পর্কে
চিনকে শায়েস্ত করতে ভারতের 'ব্রহ্মাস্ত্রের' উপরেই ভরসা ভিয়েতনামের, জানুন বিধ্বংসী এই মিসাইল সম্পর্কে
- FB
- TW
- Linkdin
পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী ক্রুজ মিসাইল এখন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। ব্রহ্মস— ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ক্রুজ মিসাইলের গতি চিন্তায় রাখছে ন্যাটো বাহিনীকেও। এমন সাংঘাতিক বেগে টার্গেটের দিকে ছুটে যায় ব্রহ্মস যে রেডার তার আভাস মিললেও ব্রহ্মসকে মাঝ পথে রুখে দেওয়া কঠিন। ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে আগুন ঝরিয়েছে যে মার্কিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, সেই টোমাহক মিসাইলকেও গতিবেগে বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে ব্রহ্মস।
এই ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রকেই এবার নিজেদের সুরক্ষার জন্য চাইল ভিয়েতনাম। সম্প্রতি রাশিয়া এই মিসাইলটিকে তৃতীয় কোনও দেশকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
ব্রহ্মস মিসাইল প্রোজেক্টে রাশিয়াও ৫০ শতাংশ অংশীদার ছিল, সুতরাং এই ক্ষেপণাস্ত্র রফতানির জন্য রাশিয়ার অনুমতি প্রয়োজন ছিল। এমন সময়ে এই অনুমতি এসেছে, যখন ভিয়েতনাম ব্রহ্মস কেনার ব্যাপার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
ভিয়েতনাম ভারতের থেকে ব্রহ্মস ও আকাশ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল নিতে চাইছে। যদি শেষ পর্যন্ত চুক্তি হয়, তবে ভিয়েতনাম এই দুটি মিসাইলকে সুরক্ষার জন্য নিজের দেশে মোতায়েন করবে।
এরফলে চিনা ভয় থেকে ভিয়েতনাম কিছুটা মুক্ত হবে। এছাড়াও ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
ইতিমধ্যেই ভিয়েতনামকে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে ভারত।
তবে ভিয়েতনামের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ অনেক দিন আগে থেকেই শুরু করেছে ভারত। তার পর সে দেশের নৌসেনাকে রণতরীও দেওয়া হয়েছে। সে সব নিয়ে চিন একাধিক বার উষ্মা প্রকাশ করেছে।
এর আগে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণও বলেছিলেন, বিশ্বের অনেক দেশই ভারতীয় মিসাইল কিনতে ইচ্ছুক। তখনও এই তালিকায় ভিয়েতনামেরও নাম ছিল। পাশপাশি নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছিলেন, সরকারও মিসাইল মিত্র দেশগুলির কাছে বিক্রি করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে চিনও ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে বহু ধরণের সংবেদনশীল অস্ত্র রফতানি করেছে।
১৯৮৭ সালে মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সেই সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল যে সব দেশ, তারাই এই সংগঠন গড়ে তোলে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের হাতে ছড়িয়ে পড়া রুখতেই ওই সংগঠনের জন্ম। ভারত সে সময় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা শুরু করে দিলেও, খুব একটা অগ্রগতি তখনও হয়নি। তাই ভারতকে এমটিসিআর-এর সদস্য হতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু গত দেড় দশকে মিসাইল টেকনোলজিতে ভারতের এত দ্রুত উত্থান ঘটেছে যে এমটিসিআর-এর সদস্য দেশগুলির অনেকের থেকেই এগিয়ে গিয়েছে ভারত।
নয়াদিল্লির অস্ত্রাগের এত রকমের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য এতই বিধ্বংসী যে আমেরিকা, চিন, রাশিয়া ছাড়া অন্য যে কোনও দেশের পক্ষে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলির সঙ্গেই এঁটে ওঠা মুশকিল। ভারতের ব্রহ্মস কিন্তু আমেরিকা এবং চিনকেও টেক্কা দিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে যত রকমের ক্রুজ মিসাইল রয়েছে, তার মধ্যে ব্রহ্মস সবচেয়ে দ্রুতগামী।
আমেরিকার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র টোমাহক এক সময় গোটা পৃথিবীর সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিল। ইরাকে সাদ্দাম জমানার বিরুদ্ধে মার্কিন হামলা বা আফগানিস্তানে তালিবান শাসন হঠানোর লড়াই— সব যুদ্ধক্ষেত্রেই মার্কিন বাহিনীর অন্যতম বড় ভরসা ছিল টোমাহক ক্রুজ মিসাইল। ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে ব্রহ্মস তৈরি করে ফেলার পর গোটা বিশ্বের সমর বিশারদদের নজর কেড়ে নিয়েছে এই ক্রুজ মিসাইল। আমেরিকার টোমাহকের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯০ কিলোমিটার। ভারত-রাশিয়ার ব্রহ্মসের বেগ তার চার গুণ। ব্রহ্মস ঘণ্টায় ৩৭০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে গিয়ে আঘাত হানে লক্ষ্যবস্তুতে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানাও নিখুঁত।
রাশিয়া নিজেদের বাহিনীর জন্য বহ্মসের যে সংস্করণ বানিয়েছে, তার পাল্লা কম রাখা হয়েছে। তবে ভারত ব্রহ্মসের পাল্লা বাড়িয়ে সেটিকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে তৈরি করেছে। ব্রহ্মসের ভূমি এবং জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ যোগ্য দু’টি সংস্করণ ইতিমধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যুদ্ধবিমান এবং সামবেরিন থেকে ছোঁড়া যায়, এমন দু’টি সংস্করণও তৈরি।
ভারতকে নিয়ে খুব আশঙ্কা নেই ন্যাটোর। কারণ ন্যাটো-ভুক্ত দেশগুলির অধিকাংশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক এখন বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্রহ্মস তৈরিতে ভারতের অংশীদার যে দেশ, সেই রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটো গোষ্ঠীর রেষারেষি সুবিদিত। ব্রহ্মসের মতো সর্বোচ্চ গতির ক্রুজ মিসাইল রাশিয়ার হাতেও থাকায় নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বেড়েছে ন্যাটোর।
ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদী ও রাশিয়ার মস্কোভা নদীর নামানুসারে এই মিসাইলের নাম রাখা হয় ব্রহ্মস। কারণ, ভারতের এই মিসাইল তৈরিতে রাশিয়ারও ভূমিকা রয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ইতিমধ্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।