আমার-আপনার মোবাইল-কম্পিউারেও কি আড়ি পাততে পারে সরকার, কী বলছে ভারতের আইন
পেগাসাস - ভারতের সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ফোন ট্যাপ করার জন্য ইসরাইলি এই স্পাইওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে গত দুদিন ধরে উত্তাল গোটা দেশ। এই ঘটনা সাইবার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই ইলেকট্রনিক যোগাযোগের উপ আস্থা হারাচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন, কেউ আড়ি পাতে না তো! চাইলেই কী আমার-আপনার ফোনে কি আড়ি পাততে পারে সরকার? দেখে নেওয়া যাক, এই বিষয়ে ভারতীয় আইন কী বলছে -
| Published : Jul 20 2021, 12:53 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
ভারতে দুটি আইন রয়েছে, যার বলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য - দুই সরকারই যে কারোর ফোন কল, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মতো সকল প্রকারের বৈদ্যুতিন যোগাযোগে নজরদারি চালাতে পারে, আড়ি পাততে পারে। প্রথমটি হল, ১৮৮৫ সালের ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইন এবং অপরটি, ২০০০ সালের তথ্য প্রযুক্তি (সংশোধনী) আইন। এই দুই আইনেরই বিভিন্ন ধারা সরকারকে আড়ি পাতার অনুমোদন দেয়।
ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইনের ৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে 'কোনও জরুরী অবস্থা দেখা দিলে বা জনসুরক্ষার স্বার্থে' কেন্দ্র ও রাজ্য বৈদ্যুতিন যোগাযোগে নজরদারি করতে পারে। তবে নজরদারি চালানো কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানাতে হবে ঠিক কী কারণে তারা নজরদারি চালাচ্ছেন। কারণগুলি হতে পারে - ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা, রাষ্ট্রের সুরক্ষা, বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা বা কোনও অপরাধে উসকানি দেওয়া ঠেকানো।
টেলিগ্রাফ বিধির ৪১৯ ধারা অনুসারে এই নজরদারি করার আদেশ দিতে পারেন, কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনও সচিব এবং রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে এই জাতীয় নির্দেশ জারি করতে পারেন স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্বে থাকা একজন সচিব-স্তরের কর্মকর্তা। অনিবার্য পরিস্থিতিতে, এই জাতীয় আদেশ ভারত সরকারের যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কিংবা তার উপরের কেউ, যাঁকে কেন্দ্রের বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অনুমোদন দিয়েছেন, তিনি এই আদেশ দিতে পারেন।
তবে এই আদেশ জারি হওয়ার তারিখের থেকে একমাসের বেশি সময় কার্যকর করা যায় না। প্রয়োজনে আদেশ নবীকরণ করে নজরদারির মেয়াদ ১৮০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। সেইসঙ্গে এইসব আড়ি পাতার রেকর্ডগুলি প্রতি ছয় মাস অন্তর নষ্ট করে ফেলতে হবে, যদি না সেগুলির কোনও 'কার্যকরী প্রয়োজনীয়তা' না থাকে। পরিষেবা সরবরাহকারীদেরও এই জাতীয় বার্তাগুলির নজরদারি বন্ধের দুই মাসের মধ্যেই নষ্ট করতে হবে।
৪১৯ এর ধারা অনুযায়ী এছাড়াও কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিকে পৃথকভাবে একটি করে পর্যালোচনা কমিটিও গন করতে হবে। কেন্দ্রের পর্যালোচনা কমিটির প্রধান হবেন মন্ত্রিপরিষদের সচিব আর তবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজ্যের পর্যালোচনা কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। নজরদারি করা সংক্রান্ত সমস্ত আদেশ, তা জারি হওয়ার সাতটি কর্মদিবসের মধ্যেই পর্যালোচনা কমিটিতে পাাতে হবে। পর্যালোচনা কমিটি বিতার করবে নজরদারি কতটা যুক্তিযুক্ত, যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত।
একইভাবে, তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০ এর ৬৯ ধারা এবং তথ্য প্রযুক্তি (তথ্যের নজরদারি, পর্যবেক্ষণ ও ডিক্রিপশনের সুরক্ষার জন্য কার্যবিধি) আইন ২০০৯ অনুযায়ী অনুমোদিত সংস্থাগুলি যে কোনও কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের আড়ি পাতার, পর্যবেক্ষণ করার বা তথ্যের ডিক্রিপশন করার বিষয়ে নির্দেশ জারি করতে পারে। ৬৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে, ভারতের প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রের সুরক্ষা, বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনসাধারণের শৃঙ্খলা বা উপরোক্ত যে কোন অপরাধ করায় উসকানি দেওয়া রুখতে বা কোনও অপরাধের তদন্তের জন্য ননজরদারি চালানো যেতে পারে।