প্রধানমন্ত্রী কি হতে পারবেন মমতা - তাঁর এই দিল্লি সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
আবেগই শত্রু মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আবেগে চলেন তা সকলেই জানে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচন রাজনৈতিক লড়াইয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে মমতা বনাম মোদী ব্যক্তিগত লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেই তীব্র ব্যক্তিগত লড়াইয়ের আবহ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এখনও বের হতে পারেননি। বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার মধ্যে ছটফটানি ধরা পড়ছে। দিল্লি দখলের রাজনীতিতে কিন্তু চাই অঙ্ক, আবেগ নয়।
মোদী পারলে মমতা কেন নয়?
তবে মমতাও জানেন, দিল্লি তার হাতের মোয়া নয়। তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী যদি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন পারবেন না?
সমর্থনের অভাব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মৌলিক তফাত রয়েছে। বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো কোনও বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন মমতা বন্দোপাধ্যায়। বা কোনও বড় দলের সমর্থনও নেই তার পক্ষে।
ভাষাগত বাধা
এছাড়া ভাষাগত বাধা তার সর্বভারতীয় উপস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। হিন্দি বলয়ের বাইরে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। দেবগৌড়া পেয়েছিলেন অন্যান্য দলের সমর্থন। আর নরসিমা রাও বা নরেন্দ্র মোদী যথাক্রমে কংগ্রেস ও বিজেপির মতো বড় দলের নেতা।
কী করবে কংগ্রেস
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ই বিষয়গুলি ভালই জানেন। আর সেই কারণেই প্রথমে কমলনাথ, আনন্দ শর্মা ও অভিষেক মনু সিংভি এবং এদিন প্রায় ছয় বছর পর সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করলেন মমতা। তবে তাতে কতটা বরফ গলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জোটে, যে তারা আর বড় ভাইয়ের ভূমিকা পাবে না, তা কিন্তু এখনও মানতে সমস্যা রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দলটির।
সনিয়া নন মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি রাজধানীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ২০০২ সালের সনিয়া গান্ধীকে মনে পড়িয়েছে। তারা বলছেন, সেই সময় সনিয়া যেমন, এনসিপি, ডিএমকে-র মতো দলগুলিকে জুড়ে জুড়ে একটি জোট তৈরি করেছিলেন, মমতাও সেই চেষ্টাই করছেন। তবে সনিয়ার সঙ্গেও মমতার পার্থক্য আছে। প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থেকেও সনিয়া গান্ধীর কখনই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেননি। মমতা কিন্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনিই প্রধানমন্ত্রী হতে চান। যা, ছোট দলগুলিকে তার প্রতি বিমুখ করতে পারে।
তৃণমূল কংগ্রেস এখনও বাংলার দল
আরও এক সমস্যা হল, তৃণমূল কংগ্রেস এখনও বাংলার দল হিসাবেই পরিচিত। বাংলার বাইরে কোনও রাজ্যে উপস্থিতি নেই। সর্বভারতীয় পরিচিতি চাইলে কিন্তু, অন্তত আর কয়েকটি রাজ্যে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বুমেরাং 'বহিরাগত'
সেই চেষ্টাই এখন করছে তৃণমূল। বাংলার ভোটে মমতা, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিরাগত আবেগে আটকেছিলেন। সমস্যা হল বাংলার বাইরে কিন্তু, এই 'বহিরাগত' ট্যাগ তৃণমূলের জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
নির্মম রাজনীতি, পারবেন মমতা?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বুদ্ধি ও বোধ প্রশ্নাতীত। কিন্তু, উত্তর ভারতের রাজনীতি অনেক বেশি নির্মম। যার স্বাদ এর আগে মনমোহন সিংকে ইউপিএর রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করার সময়ে, মমতাকে দিয়েছিলেন মুলায়াম সিং যাদব। কাজেই, সেই রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
তৈরি হচ্ছেন মমতা
দিল্লির পথ খোলা রাখতে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদের সদস্য না হয়েও তৃণমূল কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধানের পদ গ্রহণ করেছেন। সেইসঙ্গে দেশ কী চাইছে তা বুঝতে এবং একইসঙ্গে নিজেকে সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি উত্তরপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতে সফর করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে তৃণমূল সূত্রে খবর দলনেত্রী তাঁর হিন্দি ভাষার দখলও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বাংলার নেত্রী থেকে বৃহত্তর ভূমিকার জন্য নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনে চেষ্টার অন্ত নেই তার, কিন্তু এই যাত্রাটা মোটেই সহজ হবে না।