করোনা-মহামারির সঙ্গে যুদ্ধের একটা বছর পার, ফিরে দেখা লকডাউনের অন্যরকম দিনগুলি
দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেল লকডাউনের। এখনও ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশই লড়াই করে চলেছে করোনাভাইরাসের সঙ্গে। লকডাউন কাটিয়ে নিউর্মালে ফিরছি আমরা। শুরু হয়েছে টিকাকরণ কর্মসূচিও। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ। গত বছর ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর ডাক দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে সাফল্য আসার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশব্যাপী লকডাউনেরহ কথা ঘোষণা করেছিলেন।
- FB
- TW
- Linkdin
২০২০ সালের সেই দিনগুলি এখন অতীত। কিন্তু লকডাউনের স্মৃতি এখনও টাটকা ভারতীয়দের মনে। ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর তারপরই ঘোষণা করা হয়েছিল দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন। গত বছর ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল প্রথম দফার লকডাউন। ২৫ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল প্রথম দফায় টানা ২৩ দিন লকডাউনের জারি করা হয়েছিল।
সেই সময় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২৫। সেই সময় মৃত্যু হয়েছিল ৫০ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যন অনুযায়ী লকডাউনের এক বছর দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৩৪ হাজারেরও বেশি। এখনও পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৪১ জনের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ২৬২। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের। গত এক বছর ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে গোটা দেশ। এখনও পর্যন্ত দেশে ৫ কোটি ৮ লক্ষ ৪১ হাদার ২৮৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
তবে লকডাউন জারি হওয়ায় পুরোপুরি থমকে দিয়েছিল দেশ। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সরকারি বেসরকারি অফিল। শুধুমাত্র চালু ছিল হাসপাতালসহ জরুরি পরিষেবা। বুধবার অর্থাৎ এদিন লকডাউনের বর্ষপূর্তি।
লকডাউনের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভারতের লাইফলাইন ট্রেন চলাচলও। বন্ধ ছিল সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার জন্যই এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছিল। সেই সময় রাস্তাঘাট ছিল পুরোপুরি শুনশান।
বিশেষজ্ঞদের মতে সেই সময় লকডাউন ঘোষণা না করলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেত। গত বছর ১৫ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ১৯ দিনের জন্য লকডাউন জারি করা হয়েছিল। তৃতীয় দফায় ৪ মে থেকে ১৭ মে ১৪ দিনের জন্য আর চূড়ান্ত পর্বে ১৮ মে থেকে ৩১ মে ১৪ দিনের জন্য লকডকাউন জারি করা হয়েছিল।
লকডাউনে প্রায় থমকে গিয়েছিল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিল দিনমজুর ও শ্রমিকরা। এই লকডাউনেই জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটা পথে বাড়ি ফিরেতে দেখা গিয়েছিল দেশের শ্রমিক শ্রেনির মানুষকে। যা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ।
তবে লকডাউনেই দেশে স্বাস্থ্য় , পর্যটন, হসপিটালিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য চূড়ান্ত পরিবর্তন এনেছিল। কিছু ক্ষেত্রে যার প্রভাব ছিল চূড়ান্ত খারাপ। আর কিছুক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো। নতুন রূপ পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। তেমনই ভেঙে পড়েছে দেশের সিনেমা ও থিয়েটারহলগুলি।
সেইসময় পথঘাট এতটাই ফাঁকা ছিল যে রাস্তা বন্যপশুদেরও ঘোরা ফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। পুরীর মুম্বইয়ের সমুদ্র উপকূলে ডলফিনের আনাগোনাও নজরে পড়ছিল স্থানীয়দের। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার লকডাইনের দোকান বাজার শপিংমল সমস্ত কিছুই বন্ধ ছিল। দিনের নির্দিষ্ট সময় সবজিপাতি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ভারতে আনলক পর্ব শুরু হয়েছে পয়লা জুন থেকে। করোনা মহামারির মধ্যেই ধাপে ধাপে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে গোটা দেশ। এখনও গোটা দেশে বাধ্যাতামূলক করা হয়েছে মাস্কের ব্যবহার। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে সমক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। রাজ্যগুলি নিজ নিজ ক্ষেত্র সীমিত এলাকায় লকডাউন জারি করতে পারে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে