দেশের একাধিক রাজ্যে বৃষ্টি বিপর্যয়, ছাদ হারালেন স্বয়ং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরি
- FB
- TW
- Linkdin
মৌসুমী অক্ষরেখা গুজরাতের ভুজ হয়ে মধ্যপ্রদেশের নিম্নচাপ এলাকা এবং গুজরাত, জব্বলপুর, ঝাড়সুগাদা, চাঁদবালি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগিয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, এর প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলি পঞ্জাব ,হরিয়ানা, চন্ডিগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের কিছুটা অঞ্চল এবং হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং জম্মু-কাশ্মীরে বৃষ্টি চলবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী চার-পাঁচ দিন ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে তামিলনাডু, কেরালা ও কর্নাটকের উপকূল এলাকাতেও। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে গুজরাতে ৷ বিশেষ করে উপকূলবর্তী এলাকায়। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে কোঙ্কন, গোয়া এবং মহারাষ্ট্রে।
এদিকে দেশের রাজধানী দিল্লিতে নাগাড়ে বৃষ্টি চলছে। আর তার জেরেই মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ল।
সিভিল লাইনে ফ্ল্যাগ স্টাফ রোডের উপর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এই বাড়িটি রয়েছে। যে ঘরটির ছাদ ভেঙেছে সেটি খোদ মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল নিজেই ব্যবহার করতেন। গত মাসে সেখানে কয়েকবার বৈঠকরেও আয়োজন করা হয়েছিল। ঘর সংলগ্ন শৌচালয়ও বৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার সময় সেখানে কেউ না থাকায় প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো গেছে।
এদিতে গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টিত ফলে ভাসছে বাণিজ্য রাজধানী মুম্বইও। সোমবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত বাণিজ্যনগরীতে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ছ’শো মিলিমিটার। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই বৃষ্টি হয়েছে ৩৩১ মিলিমিটার। গত ৪৬ বছরে মুম্বইয়ে আগস্ট মাসে এটাই দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গী ছিল ১০৭ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া। ফলে একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়ে গাছ। শহরের বেশির ভাগ অঞ্চলই জলের তলায় চলে যায়।
তবে মুম্বইয়ের থেকেও পরিস্থিতি আরও অনেকটাই খারাপ মহারাষ্ট্রের বাকি অংশে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের একাধিক জায়গায় গড়ে তিনশো থেকে চারশো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সিন্ধুদুর্গ জেলার একটি শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৭১০ মিলিমিটার। রাজ্যে এনডিআরএফের ১৬টি দল মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দল রয়েছে মুম্বইয়ে। কোলাপুরে চারটে, সাংলিতে দু’টো এবং সাতারা, ঠানে, পালঘর, রায়গড়, জেলায় একটি করে দল মোতায়েন করা হয়েছে।
কোলাপুর আর সাংলি জেলায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে কৃষ্ণা, পঞ্চগঙ্গা ও বর্না নদী। মুম্বই এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমলেও মধ্য মহারাষ্ট্র আর মরাঠাওয়াড় অঞ্চলে বৃষ্টি এখনও চলতে থাকবে। ফলে সেই সব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কর্নাটকও। এর মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা উপকূল কর্নাটকের তিন জেলার। গত ২৪ ঘণ্টায় কুর্গ জেলার বাগমণ্ডলায় বৃষ্টি হয়েছে ৫০০ মিলিমিটার। এ ছাড়া একাধিক জায়গায় গড়ে তিনশো থেকে চারশো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির ফলে একাধিক নদীর জল ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে উত্তর কন্নড় জেলায় বিশাল একটি জলাধারের সব গেট খুলে দিয়েছে কর্নাটক সরকার। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদিউরাপ্পাই আক্রান্ত। তিনি হাসপাতাল থেকেই গোটা পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছেন।
পাহাড়ি জেলা কুর্গ আবার ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েক দিন আরও প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রবল বৃষ্টির কবলে পড়েছে কেরলও। গত ২৪ ঘণ্টায় অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে কোঝিকোড়, ওয়েনাড় আর ইদুকি জেলায়। মুতুরিপুঝা নদী দু’ কুল ভাসানোয় প্লাবিত হয়েছে শৈল শহর মুন্নারও।
প্রবল বৃষ্টির কবলে পড়েছে কেরলও। গত ২৪ ঘণ্টায় অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে কোঝিকোড়, ওয়েনাড় আর ইদুকি জেলায়। মুতুরিপুঝা নদী দু’ কুল ভাসানোয় প্লাবিত হয়েছে শৈল শহর মুন্নারও।
প্রবল বৃষ্টির জের ইদুক্কির মুন্নারে বিস্তীর্ণ এলাকায় জুড়ে ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। যার জেরে এখনও পর্যন্ত চা বাগানের কর্মীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি ৭০ থেকে ৮০ জন মাটি চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
তবে এর মধ্যে ভাল খবর, গত কয়েক দিন ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি না হওয়ায় বিহার আর অসমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে।
বিহারে এখনও পর্যন্ত ১৬টি জেলা বন্যায় কবলিত। দুর্গত ৬৬ লক্ষেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। ১২ হাজারের কিছু বেশ মানুষকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে অসমের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো উদ্ধারকাজ চালাতে হয়নি প্রশাসনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যুও হয়নি। রাজ্যে বর্তমানে বন্যাকবলিত ২ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১১০। তবে সাময়িক ভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আগামী দিনে অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন।