- Home
- India News
- 'ঘরে থেকে বাড়ছে বিপদ', গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যেই স্কুল-কলেজ খোলার আহ্বান জানালেন এইমস-এর গবেষকরা
'ঘরে থেকে বাড়ছে বিপদ', গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যেই স্কুল-কলেজ খোলার আহ্বান জানালেন এইমস-এর গবেষকরা
একদিন আগেই এসেছিল সেই ভয় ধরানো খবর, দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য়েও গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কার থেকে কে কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার আর হিসাব নেই। আর কোভিড-১৯ মহামারির এই প্রবল দাপাদাপির মধ্যেই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমস-এর বেশ কয়েকজন গবেষক-অধ্যাপক কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে দিলেন এক বিস্ময়কর পরামর্শ। দেশে আনলকের প্রক্রিয়া বেশ কয়েকদিন ধরে শুরু হয়ে গেলেও এখনও স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবাই হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু, এইমস-এর গবেষকরা বলছেন, ভারতে অবিলম্বে স্কুল-কলেজগুলি ফের চালু করা উচিত। তাহলেই শিক্ষার্থীদের মঙ্গল।
| Published : Jul 20 2020, 07:17 PM IST / Updated: Aug 06 2020, 01:19 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
ভাবতে হবে টিকার বিকল্প
বর্তমানে কোভিড মহামারির প্রাদুর্ভাবে বারবার হাত ধোওয়া বা প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক ব্যবহার করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি দৈনিক কাজের মধ্য়ে ঢুকিয়ে নিয়েছে মানুষ। সেইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে চলছে এই মারণ রোগের একটি ভ্যাকসিন বা টিকা বের করার প্রয়াস। দারুণ গতিতে চলছে গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন বহু রোগ রয়েছে যাদের ভ্যাকসিন বা টিকা এখনও মানুষ বের করতে পারেনি। কোভিড-১৯ ক্ষেত্রেও যদি তাই ঘটে, তবে বিকল্প কৌশলের কথা ভাবতে হবে, যা জনসাধারণকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা
আর এই বিকল্প পথগুলির মধ্যে প্রধান হল হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা
গড়ে তোলা। কারণ কোভিড-১৯'এর মতো সংক্রামক রোগের বিস্তার থামাতে, অপ্রত্যক্ষ সুরক্ষা হিসাবে এই গোষ্ঠী অনাক্রম্যতার জবাব নেই। জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মধ্যে টিকা বা পূর্ববর্তী সংক্রমণের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে সংক্রমণের প্রতিরোধী অনাক্রম্যতা গড়ে তোলাই হল হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা।
কীভাবে গড়ে তোলা যায় গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা
গবেষকরা বলছেন গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলা যায় দুইভাবে। প্রথমত বিশাল আকারে জনগণের মধ্যে টিকা দিয়ে। আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হল জনগণের বড় অংশকে সংক্রমিত হতে দিয়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ধারণাটি শুনতে সহজ হলেও, কার্যক্ষেত্রে বিষয়টা বেশ জটিল। যেহেতু এখনও কবে কোভিড-এর টিকা তৈরি হবে, তা কতটা কার্যকর হবে - তা এখনও অজানা, তাই একমাত্র বিকল্প হল সংক্রমণের মাধ্যমেই গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা অর্জন করা। এতে অনেকেরই প্রাণের ঝুঁকি থাকতে পারে, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কী কী সাবধানতা লাগবে
ভারতে আনলকের সময়ও ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বের এবং ১০ বছরে নিচে বয়স থাকা ব্যক্তিদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চলতি মহামারিতে তাদের প্রাণহানির ঝুঁকি বেশি, এমন ধারণা থেকেই। কিন্তু, শিশু এবং অল্প বয়সীদের যেহেতু প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় নতুন নতুন তৈরি হয়, তাই তাদের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাও অনেক বেশি থাকে বলেই জানাচ্ছেন এইমস-এর গবেষকরা। তাঁরা উদাহরণ দিয়ে বলছেন বিশ্বের সবচেয়ে কোভিড মৃত্যুর দেশ আমেরিকাতেও ২৪টি প্রদেশ রয়েছে, যেখানে একটিও শিশু মৃত্যু ঘটেনি। কোভিডজনিত কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে গড় বয়স, বিএমআই, স্থূলত্বের মতো কিছু বিষয় প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই বিষয়গুলি মাথায় রেখে সাবধানতা নিতে হবে। স্কুল-কলেজে নিয়মিত স্যানিটাইজ কার থেকে শুরু করে শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য কোভিড বিধি মানতে হবে। আর আরও বাড়াতে হবে পরীক্ষার সংখ্যা। আক্রান্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে।
কিন্তু স্কুল-কলেজের বাচ্চারাাই কেন
বর্তমানে ভারতের কোভিড পরিস্থিতি এমনই, যে স্কুল বা কলেজ খোলার প্রস্তাব খুবই অদ্ভূত ও বিস্ময়কর। কিন্তু, গবেষকরা বলছেন, একদিকে যেমন দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে অনলাইন ক্লাস করা ভারতের মতো গরীব দেশে সকলের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তেমনই শিশু-কিশোরদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস করায় কোভিড মহামারির পরিস্তিতিতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
অনলাইনে ক্লাসের সমস্যা
গবেষকরা বলছেন, ভারতের একাধিক শিশু আছে এমন মধ্যবিত্ত পরিবারে কিংবা অর্থনৈতিকভাবে ভাবে দুর্বল অংশের পরিবারগুলির কাছে ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোনের ব্যবহার এখনও সহজলোভ্য নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিতে শিক্ষালাভে বঞ্চিত হচ্ছেন এইসব ঘরের ছেলেমেয়েরা। সেইসঙ্গে বাড়ি বসে ক্লাস করায় তাদের শারীরিক ক্ষতিও হচ্ছে।
সুরক্ষার আড়ালে বাড়ছে বিপদ
কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে সকলকেই যথাসম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সর্বস্তর থেকে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভারতের অধিকাংশ স্কুল-কলেজেই এখন অনলাইনেই চলচে ক্লাস থেকে পরীক্ষা গ্রহণ। কর্পোরেট সংস্থাগুলিতেও চালু হয়েছে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' বা বাড়ি থেকে কাজ করার সংস্কৃতি। এতে করে স্বল্প মেয়াদে কিছু লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষতিই হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সীমিত কার্যকলাপ এবং সূর্যের আলো গায়ে কম লাগার ফলে কোনও ব্যক্তির বা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কমে যাচ্ছে অনাক্রম্যতা, যা তার সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রধান অবদান রাখতে পারে শিশুরাই
জেনেশুনে শিশু ও কিশোরদের এই সংক্রমণের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়াটা অনেকের কাছেই একটি উদ্ভট ধারণা বলে মনে হচ্ছে। তারা মনে করছেন শিশুদের প্রাণহানি বেড়ে গেলে দেশের ভবিষ্যতই ঝুঁকির মুখে পড়বে। কিন্তু, উপরের বিষয়গুলি উল্লেখ করে গহেষকরা বলছেন, যদি এখনই শারীরিক দূরত্ব এবং নিয়মিত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করে পুরোদমে স্কুল ও কলেজগুলি ফের চালু করা হয়, তবে প্রত্যেকেই ভাইরাসের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। প্রত্যেকেরই সম্ভাবনা তৈরি হবে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার। উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রাণহানির সম্বাবনা না থাকায় তারা নিজেরা সংক্রমিত হয়ে তারা গোষ্ঠী অনাক্রম্যতা অর্জনে প্রধান অবদান রাখতে পারবে। প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল হলেও উপযুক্ত সাবধানতা নিয়ে এই পথ ধরলে তা সফল হবেই বলে দাবি করছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা।
এর বদলে আরেকবার লকডাউন হলে?
ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা সাফ জানাচ্ছেন, ভাইরাস সংক্রমণের একটি নিজস্ব গতি আছে। লকডাউনের ফলে সেই গতি কিছুটা হলেও শ্লথ করে দেওয়া যায়। কিন্তু ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিরকালের জন্য সুরক্ষা দিতে পারে না লকডাউন। এই রাস্তা কখনই কোভিড-১৯ মোকাবিলার চূড়ান্ত সমাধান নয়। এর সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনের ফলে দেশের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে যায়।