উত্তরাখণ্ড থেকে কেরল, কেন অক্টোবরেও এত বৃষ্টি হচ্ছে, বর্ষাকাল কি তবে শেষ হয়নি
এই বছর সময়ের একটু আগেই ভারতে এসেছিল বর্ষা (Monsoon)। কারপর থেকে বৃষ্টি চলছে তো চলছেই। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বৃষ্টিজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যা। উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand Flood) এদিনই বন্যায় কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। অক্টোবর মাসেও ভারতের একটা বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হয়ে চলেছে। তাহলে কি বর্ষাকাল এখনও চলছে? কী বলছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা?
- FB
- TW
- Linkdin
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন এটা শেষ বর্ষার বৃষ্টি নয়। বর্ষার ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গড়ে ওঠা এক অনন্য আবহাওয়া ব্যবস্থার কারণে। একদিকে রয়েছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (Western disturbances), অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের (Bay of Bengal) উপর তৈরি হয়েছে একটি গভীর নিম্নচাপ (Low-pressure system)। যার থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ধেয়ে আসছে আর্দ্রতা ভরা বাতাস। এই দুই আবহাওয়া ব্যবস্থা একসঙ্গে ঘটার ফলেই উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
দেরাদুনের আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের (Regional Meteorological Department in Dehradun) আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া একইরকম থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকবে। রাজ্যের অন্যান্য অংশে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ( Pushkar Singh Dhami) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বৃষ্টিজনিত বিভিন্ন ঘটনায় এগারো জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মেঘ ফাটা বৃষ্টি (Cloudbursts Rain) এবং ভূমিধসের (Landslides) ফলে বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে তলায় আটকে আছেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ অনেকেরই কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
একের পর এক ধসের ফলে রাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে নৈনিতাল (Nainital)। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ধসের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নৈনিতালের মল রোড এবং নৈনি লেকের তীরে অবস্থিত নৈনা দেবী মন্দির (Naina Devi temple) এখন বন্যার জলের তলায়।
ল্যান্ডস্লাইডের নৈনিতালের একটি হোস্টেল ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর এসেছে। বহু পর্যটকই শহরে আটকে পড়েছেন। তাঁর মধ্যে বাঙালিও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের উদ্ধার ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বলে জানানো হয়েছে। নৈনিতালে যে গাড়িগুলি আসছে এবং যে গাড়িগুলি সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, প্রত্যেকটিকেই পুলিশের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গত ৬ অক্টোবর থেকেই দিল্লি (Delhi) এবং উত্তর ভারতের (North India) বেশিরভাগ অংশ থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সরে যেতে শুরু করেছিল। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে পশ্চিম রাজস্থান (Rajasthan) এবং সংলগ্ন গুজরাটের (Gujarat) কিছু অংশ থেকে এর প্রভাব কমতে শুরু করেছিল।
তবে ক্রমেই বর্ষা মরসুমের সময়কাল বাড়ছে বলে দেখা যাচ্ছে। ১৯৬০ সালের পর সবথেকে দেরি করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সরেছিল ২০১৯ সালে। সেবার উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছিল ৯ অক্টোবর। এই বছরের বর্ষা বিদায়ের সময়টা আছে ঠিক তার পরেই, দ্বিতীয় স্থানে।
উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাহারের নিয়মিত সময় ১৭ সেপ্টেম্বর। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে এই বছর কতটা দেরিতে বিদায় নিয়েছে বর্ষা। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর ( India Meteorological Department) জানিয়েছে, ১৯৬০ সালের পর থেকে এই বছরই অক্টোবর মাসে দিল্লি শহরে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসে রাজধানীতে বৃষ্টির পরিমাণ ৯৩.৪ মিলিমিটার।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু উত্তর ভারত থেকে বিদায় নিলেও, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির কিছু অংশে এখনও তা রয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি-সংক্রান্ত কার্যকলাপের সম্মুখীন হচ্ছে কারণ এই অঞ্চল থেকে সিস্টেমটি এখনও সরে যায়নি। তাই এই অংশে এখনও বৃষ্টি হয়ে চলেছে।
অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে ভাসছে কেরলও (Kerala)। এদিন ইদুক্কি জলাশয়ের (Idukki Reservoir) চেরুথনি বাঁধের (Cheruthoni Dam) দ্বিতীয় এবং তৃতীয় লকগেট থেকে অল্প পরিমাণে জলও ছাড়তে হয়েছে, কারণ জলের মাত্রা বিপদসীমায় পৌঁছে গিয়েছে। এর আগে আরও কয়েকটি বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছিল। রাজ্য সরকার নিচু এলাকায় এবং নদীর তীরে বসবাসকারীদের ত্রাণ আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে। এই রাজ্যে ভূমিধসে অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।