- Home
- World News
- International News
- আফগান মহিলারা কতটা সুন্দরী - তালিবানি শাসনেও নেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে ছবিগুলি, দেখুন
আফগান মহিলারা কতটা সুন্দরী - তালিবানি শাসনেও নেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে ছবিগুলি, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
তালিবানি শাসনে ক্রমাগত আফগান মহিলাদের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই যার প্রতিবাদে বহুবার কাবুল, হেরাত-সহ আফগানিস্তানের বহু শহরে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। এবার অনলাইনে শুরু হল এই অভিনব প্রচার, যেখানে আফগান মহিলারা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন আফগান পোশাকের ছবি শেয়ার করছেন।
ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করার বিষয়ে তালিবানরা বলেছিল, এটা আফগান ঐতিহ্য নয়। কো-এডুকেশন তাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী। তবে, মহিলাদের জন্য ইতিমধ্যেই তারা ড্রেসকোড চালু করেছে। প্রথমবারের মতো পুরো শরীর ঢাকা বোরখা না পরার কথা বলা হলেও হিজাব ও আবায়া পরার ফতোয়া জারি করা হয়েছে। এই পোশাকেও মহিলাদের মুখের বেশিরভাগটাই ঢাকা থাকে। এরই বিরুদ্ধে আফগান সংস্কৃতির ঐশ্বর্যকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আফগান ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাকের ছবি শেয়ার করেছেন তাঁরা।
আফগানিস্তানে প্রথম জেন্ডার স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রবক্তা ঐতিহাসিক ড. বাহার জালালি। একটি গাঢ় সবুজ এবং মেরুন রঙের পোশাক পরে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। জানিয়েছেন এটাই আফগান সংস্কৃতি। এটাই ঐতিহ্যশালী আফগান পোশাক। ছবিতে তাঁর চুল, মাথা বা মুখ কোনওটাই আচ্ছাদিত নয়। আরও একটি ছবিও পোস্ট করেছেন ড. জালালি। সেটি তাঁর কৈশোর বয়সের ছবি। গাঢ় নীল রঙের উপর সোনালি কাজ করা পোশাকে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। মাথায় ঐতিহ্যবাহী টুপি। তচিনি জানিয়েছেন, সেটি আফগানিস্তানের অন্য এক এলাকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
আফগান ফটোগ্রাফার তথা সাংবাদিক আবদুল্লা আনওয়ারিও একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে বামিয়ান প্রদেশের স্থআনীয় মহিলাদের সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের পোশাকও উজ্জ্বল রঙের, কালো নয়। আর তাদের চুল ওড়নায় ঢাকা থাকলেও, মুখ ঢাকা নয়।
ইলাহা আর তাঁর পরিবার এখন আর আফগানিস্তানে থাকেন না। কিন্তু, স্বদেশের মহিলাদের অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে এই অভিনব প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তিনিও। ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক পরা নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। সেই পোশাকও অত্যন্ত উজ্জ্বল রঙের এবং মাথা বা মুখও ঢাকা নেই।
তালিবানরা ক্ষমতায় ফেরার পরই দেশ ছেড়েছিলেন আফগান মহিলা ফিল্মমেকার তথা সঙ্গীতকার আরিয়ানা দেলাওয়ারি। তিনিও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁর মা, খালা এবং দিদিদের একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেটি তালিবানি শাসনের আগে তোলা। ক্যাপশনে তিনি জানিয়েছেন, তিনি সেই সময় তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন। সেই ছবিতেও প্রত্যেক আফগান মহিলাকেই উজ্জ্বল পোশাকে দেখা যাচ্ছে।
সমাজকর্মী তথা ভয়েস অব আমেরিকা পস্তুর করেসপন্ডেন্ট ব্রেশনা তাহরিকও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি একটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের ঐতিহ্যশালী আফগান পোশাকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন তালিবানি পোশাক বিধির নিন্দা করছেন। তাঁরা আফগান ঐতিহ্যশালী পোশাক নিয়ে গর্বিত।
পাজাদি রেডিও-র সিনিয়র এডিটর, সাংবাদিক মালালি বশির উজ্জ্বল লাল রঙের একটি পোশাক পরা ছবি পোস্ট করেছেন। লাল রঙের উপর আবার অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের সুতোর কাজ রয়েছে। তাঁরও মাথা বা চুল ঢাকা নেই।
আরেক আফগান মহিলা সাংবাদিক তথা মানবাধিকার কর্মী সানা এজাজ আফগান ঐতিহ্যবাহী চারটি পোশাকে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন। কোনওটিই কালো নয়, বরং তাতে রঙের ব্যবহারই বেশি। তিনি লিখেছেন, আফগান সংস্কৃতি কখনই মহিলাদের মুখঢাকা বা রঙহীন ছিল না।
ডাক্তার খাত আস্সিল তারভিরদিয়ান একজন আফগান-আমেরিকান। তিনি হলেন মের্মান রুকশানার নাতনী। মের্মান রুকশানা তালিবান শাসনে আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা হিসেবে তার চাদর সরিয়ে প্রকাশ্যে মুখ দেখিয়েছিলেন এবং আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গায়িকা হিসাবে নাম করেছিলেন। তালেবানরা তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল। ডাক্তার খাত আস্সিল তারভিরদিয়ান তাঁর সেই বিখ্য়াত ঠাকুমার ছবির সঙ্গেই ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন।
আফগান মহিলা সাইকোথেরাপিস্ট নাহিদ ফাতেহি পশ্চিমী পোশাকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, এভাবেই আফগান মহিলারা পোশাক পরে। কেউ পরে ঐতিহ্যশালী পোশাক, কেউ পশ্চিমী পরোশাক, কেউ বা হিজাবের সঙ্গে কোনও রুচিশীল পোশাক। তবে নিকাব হিজাব কখনই আফগান ঐতিহ্য নয়।
তালেবানরা ক্ষমতায় এসেই নির্দেশ দিয়েছে, আফগানিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মহিলাদের অবশ্যই আবায়া এবং নিকাব পরতে হবে। প্রসঙ্গত বোরখার মতো পুরো ঢাকা না হলেও, মুখের বেশিরভাগ অংশই ঢাকা থাকে নিকাবে। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ক্লাস কিংবা কমপক্ষে একটি পর্দা দিয়ে ছেললে মেয়েদের আলাদা বসার ব্যবস্থা করতে হবে। তালেবান শিক্ষা মন্ত্রক আরও বলেছে, ছাত্রীদের শুধুমাত্র মহিলা শিক্ষিকারাই পড়াবেন। যদি একান্তই তা সম্ভব না হয়, তাহলে ভাল চরিত্রের বৃদ্ধ শিক্ষকদের ব্যবহার করা যাবে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রথম তালিবানি শাসনে অবশ্য তারা মহিলাদেরজন্য আপাদমস্তক ঢাকা কালো রঙের আবায়া পরা বাধ্যতামূলক ছিল। সেইসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হতে গেলে একজন পুরুষ আত্মীয়ের সাহচর্য লাগত।