- Home
- Lifestyle
- Lifestyle Tips
- দুনিয়ার সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাক, যাতে রয়েছে ১১৪ কোটি টাকা মূল্যের হিরের টুকরো
দুনিয়ার সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাক, যাতে রয়েছে ১১৪ কোটি টাকা মূল্যের হিরের টুকরো
- FB
- TW
- Linkdin
হানি এল বেহাইরি। জাতিতে মিশরীয়। ভালোবাসেন পোশাকের কারুকাজে সকলকে চমকে দিতে। শুধু যে তিনি পোশাকের ফ্যাশনেই বুঁদ এমনটা নয়, কস্টিউম ডিজাইনার হিসাবেও রয়েছে তাঁর দুনিয়া জোড়া খ্যাতি। মিশরের একাধিক চলচ্চিত্রেও তিনি কস্টিউম ডিজাইনার হিসাবে কাজ করেছেন। ফেসবুকেও হানি এল বেহাইরির একাধিক পেজ রয়েছে। সেই সব পেজের লাগাতার পোস্ট বলে দেয় ফ্যাশনের জগতে কতটা জনপ্রিয় নাম বেহাইরি।
গল্পটা বছর দুয়েক আগের। বেহাইরি এমন একটি বিয়ের পোশাক তৈরি করেছিলেন যা চমকে দিয়েছিল বিশ্বকে। মিশরীয় এই ফ্যাশন ডিজাইন সেই বিয়ের পোশাকের উপরে এত হির লাগিয়েছিলেন যে তার মূল্য শুনলে সকলে চমকে যাবেন। ভারতীয় টাকার অঙ্কে ১১৪কোটি টাকার সামান্য কিছু কম। প্যারিসের হাউটে কোর্সে উইক-এর ব়্যাম্পে এই পোশাককে সামনে এনেছিলেন তিনি। পোশাকের এমন বহর দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল সকলের। তবে, বিয়ের পোশাকে এটি সবচেয়ে দামি হলেও, শুধুমাত্র দামী পোশাক হিসাবে এটা সবচেয়ে দামি নয়। সে গল্পেও আমরা আসব।
বেহাইরির তৈরি করা এই বিয়ের পোশাকে ছিল সুক্ষ কারুকাজে ভরা নানা নকসা। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে কারুকাজের ঢেউ যেন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সারাটা পোশাককে। একদিকে যেমন ছিল সুক্ষ সব সুতোর কাজ, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে ছিল ছোট ছোট হিরের টুকরোর সারিবদ্ধ মেলা। সিফন থেকে ফাইন ডর্জেট মিশ্রিত সুতির মিশ্রণের কাপড় ব্যবহৃত হয়েছিল এতে। গাউনের বহর এতটাই দীর্ঘায়িত ছিল যে তা ঠিক করতেই দরকার পড়েছিল একাধিক মানুষের।
শুধুই যে হিরে এতে স্থান পেয়েছিল এমনটা নয়। এরসঙ্গে ছিল আরও নানা ধরনের দামি পাথর। যা বিয়ের পোশাকে হিরের দ্যুতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। হিরে ছাড়াও এমন দামি পাথরের সংখ্যা ছিল অন্তত কয়েক হাজার। সারা পোশাক জুড়ে এই সব দামি পাথরকে সুতোর কারুকাজের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছিলেন বেহাইরি। এই সব দামি পাথরের আকার এবং কাটিং কেমন হবে তা নিজেই ডিজাইন করেছিলেন তিনি। পাথরের কাটিং-এর মধ্যে যাতে কোথাও কোনও বিসদৃশ ভাব তৈরি না হয় তার জন্যও প্রচুর পরিশ্রমও করেছিলেন বেহাইরি এবং তাঁর টিম।
৮০০ ঘণ্টা নাকি লেগেছিল এই বিশাল বহরের সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাকটা তৈরি করতে। বেহাইরির টিম-এর সূত্রেই খবর এই পোশাকের সারা শরীর জুড়ে যতনা হিরে এবং দামি পাথর বসানো হয়েছিল, তার থেকে বেশি হিরে এবং পাথর বসেছিল গাউনের ভেল এবং গাউনের পিছন লাগানো আলখাল্লায়। যা চাদরের মতো চারিদিকে বিছিয়ে ছিল। পিছন থেকে পোশাকের সৌন্দর্যে যাতে কোনও খামতি না থাকে বা কোনওভাবে পোশাককে যাতে হালকা না মনে হয় তার জন্য় আলখাল্লা এবং ভেল-এর নকসায় আরও বেশি করে নাকি পরিশ্রম করেছিলেন বেহাইরি।
জানা গিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই বিয়ের পোশাকের বরাত এসেছিল এক অভিজাত মিশরীয় পরিবার থেকে। এই পরিবারের মেয়েরর বিয়ে ছিল। কনে নাকি নিজে গিয়ে কথা বলেছিলেন বেহাইরির সঙ্গে। বুঝিয়েছিলেন বিয়ের জন্য এমন এক পোশাক তাঁকে বানাতে হবে যা দুনিয়ার কাছে বিস্ময় তৈরি করবে। পোশাক জুড়ে হিরে এবং দামি পাথর লাগানোর আবদারও নাকি ছিল সেই কনের। তিনি সাফ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোনওভাবেই বিয়ের পোশাকের জৌলুস কমা চলবে না।
বিয়ের পোশাকের নকসায় বেহাইরি একের পর এক ভাবনা তুলে ধরেছিলেন অভিজাত সেই কনের সামনে। দেখিয়েছিলেন কীভাবে সুক্ষ সুতোর কাজ এবং এমব্রয়ডারিতে তৈরি হতে পারে এক চোখ ধাঁধানো বিয়ের গাউন। যা দেখে চোখ টাটাবে সকলের। গাউনের পিছনের আলখাল্লাকে বিশাল রকমের চওড়া করে দেওয়াটাই নাকি এই পোশাকের একটা অদ্ভুত নিজস্বতা তৈরি করেছিল। কনে নাকি চেয়েছিলেন আর একটু ছোট আলখাল্লা রাখতে। কিন্তু বেহাইরি তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আলখাল্লাকে একটা বিশাল আকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
বিয়ের পোশাকে বেহাইরির তৈরি করা এই গাউন সবচেয়ে দামি হলেও বিশ্বের সবচেয়ে দামি পোশাকের তকমা কিন্তু অন্য কারও দখলে। আর এই পোশাকের নাম হল নাইটিঙ্গেল অফ কুয়ালালামপুর। যা তৈরি করেছিলেন মালয়েশিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনার আব্দুল ফায়জলি। সিল্ক, সিফন এবং সাটিনের কাপড় দিয়ে এই পোশাক তৈরি করা হয়েছিল। এর মূল্য ছিল ৩০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ভারতীয় টাকায় এর দাম প্রায় ২২৮কোটি টাকা।
মালয়েশিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনার ফায়জলি আব্দুল্লাক নাইটিঙ্গেল অফ কুয়ালালামপুর পোশাকে ব্যবহার করেছিলেন ৭৫১টি হিরে। এছাড়াও স্বরাভস্কি-র স্ক্রিস্টাল ব্যবহার করেছিলেন তিনি। যার ওজন ছিল ১১০০ ক্যারটের উপরে। এর বাইরে ৭০ ক্যারটের টিয়ার ড্রপ হিরেও ব্যবহার করেছিলেন তিনি। যার জন্য পোশাকের মূল্য ২২৮ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ২০০৯ সালের স্টাইল ফ্যাশন শো-এ এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। আর এরপরই তা বিশ্বের তামাম ফ্যাশন দুরস্তের কাছে প্রবল জনপ্রিয়তা পায়।
হানি আল বেহাইরি তাঁর সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাকের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করিয়েছিলেন ২০১৯-এর ২৩ ডিসেম্বর। স্থানটা ছিল কায়রো ফ্য়াশনের ব়্যাম্প। এরপর আরও কয়েকবার পোশাকটিতে নানা ধরনের অদল-বদল করেছিলেন বেহাইরি। প্যারিসে ৩৪ নম্বর ওরিয়েন্টাল ফ্যাশনে একে বিশ্বের সামনে নিয়ে আসেন। বেহাইরির ডিজাইন করা বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাক সকলের নজর টেনে নিয়েছিল। এই ফ্য়াশন ইভেন্টে বেহাইরি তাঁর ডিজাইন করা আরও অনেক ওয়েস্টার্ন আউটফিট যার মধ্যে বেশিরভাগটাই গাউন প্রদর্শন করেছিলেন। কিন্তু, সবচেয়ে দামি বিয়ের পোশাকের বাইরে সেবার আর কোনও কিছুই অন্যদের নজর টানতে পারেনি।