- Home
- World News
- Pakistan News
- পুলওয়ামা নিয়ে 'মনগড়া' চার্জশিট বানিয়েছে এনআইএ, তেলে বেগুনে জ্বলে বিজেপিকে নিশানা ইমরান সরকারের
পুলওয়ামা নিয়ে 'মনগড়া' চার্জশিট বানিয়েছে এনআইএ, তেলে বেগুনে জ্বলে বিজেপিকে নিশানা ইমরান সরকারের
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় চালান হয়েছিল আত্মঘাতী হামলা। তাতে শহিদ হয়েছিলেন কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। সাম্প্রতির অতীতে এটাই ভারতীয় বাহিনীর উপর সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। এই হামলার ১৮ মাস পর বিশেষ আদালতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ চার্জশিট পেশ করেছে, যাতে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ায় নাম রয়েছে পাকিস্তানের। আর এই চার্জশিট জমা পড়তেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে পাকিস্তান। 'মনগড়া' বলে চার্জশিট খারিজ করেছে ইমরান প্রশাসন। পাক বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের নাম জুড়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা হয়েছে ওই চার্জশিটে। এই বিষয়ে বিজেপিকেও আক্রমণ করতে ছাড়েনি ইসলামাবাদ।
- FB
- TW
- Linkdin
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ৷ এনআইএ-র তদন্তে উঠে এসেছে, পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মহম্মদ, আল কায়েদা ও তালিবান-- এই তিন জঙ্গি সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে৷ চার্জশিটে বলা হয়েছে, পুলওয়ামা হামলায় মূল অপরাধী উমর ফারুকের ট্রেনিং হয়েছিল আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে৷ প্রায় ১ হাজার পাকিস্তানি জঙ্গি এই আল কায়েদা ও তালিবান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷
এক এনআইএ অফিসারের কথায়, 'আমরা আমাদের চার্জশিটে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টের উল্লেখ করেছি৷ কী ভাবে আল কায়েদা, তালিবান ও জইশ ই মহম্মদ গোষ্ঠীর একসঙ্গে হাইব্রিড ক্যাম্প চলছে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করেছি৷ এছাড়াও কিছু জায়গায় হাক্কানি নেটওয়ার্কও রয়েছে৷ একসঙ্গে প্রশিক্ষণ চলছে৷'
চার্জশিটে বলা হয়েছে, 'জইশ ই মহম্মদ ও লস্কর ই তৈবা জঙ্গিদের আফগানিস্তানে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছে৷ এই জঙ্গিরা পরামর্শদাতা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী৷'
আফগানিস্তানের ক্যাম্পে উমর ফারুকের একটি ছবিও চার্জশিটে প্রকাশ করেছে এনআইএ৷ একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উমর ও পুলওয়ামা কাণ্ডে আরও এক অভিযুক্ত অমর আলভি ও আরেক জন (অপরিচিত)-- তিনজনে সেলফি তুলছে৷ দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উমর ফারুক একটি অত্যাধুনিক বন্দুক হাতে ছবি তুলছে৷ এটি আল কায়েদা ও তালিবানের মিলিত ক্যাম্পে৷ এই সব ছবি ও ভিডিও উমরের থেকে উদ্ধার করা মোবাইলেই পেয়েছে এনআইএ৷ কাশ্মীরে এনকাউন্টারে উমরের মৃত্যুর পরে মোবাইলগুলি নিজেদের হেফাজতে নেয় এনআইএ৷
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে সামবা হয়ে জম্মুতে ২০ কেজি বিস্ফোরক এনেছিল উমর ফারুক। এরপরেই চার্জশিট মনগড়া বলে খারিজ করে ইসলামাবাদ। পাক বিদেশমন্ত্রকের কথা অনুযায়ী, এনআইএ'র মনগড়া চার্জশিটে আসলে বিজেপির পাকিস্তান বিরোধী বক্তব্যই পরিকল্পিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানের আরও অভিযোগ, চার্জশিটের নামে বিজেপির সংকীর্ণ ঘোরায় রাজনীতির স্বার্থ মাথায় রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, পুলওয়ামা হামলায় ইসলামাবাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হলেও তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু, নয়াদিল্লি বিশ্বাসযোগ্য কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি, যার ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা যায়। এই চার্জশিটকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও এনআইএর চার্জশিটে বলা হয়, পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক কষা হয়েছিল পাকিস্তানে বসে। হামলার প্রশিক্ষণ নিতে জইশ জঙ্গিদের পাঠানো হয়েছিল আফগানিস্তানে। পুলওয়ামা হামলার মূল অভিযুক্ত মাসুদ আজহারের ভাইপো মহম্মদ উমর ফারুক আফগানিস্তানে গিয়েছিল ২০১৬-১৭ সালে। সেখানে জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানে ফেরে।
জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা সংগঠিত করতে জইশ-ই-মহম্মদ এর প্রধান মাসুদ আজহারের ভাইপো মহম্মদ উমর ফারুক -কে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ফারুকের পাকিস্তানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়ে।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে উঠে আসে মহম্মদ উমর ফারুকের তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাকিস্তানি মুদ্রায় ওই ১০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা সংগঠিত করতেই মাসুদের ভাইপোকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। কারণ, এই উমর ফারুকই ছিল পুলওয়ামার মূলচক্রী। আত্মঘাতী হামলার গোটা পরিকল্পনা সে-ই কষেছিল। পাকিস্তানে তার অ্যালাইড ব্যাংক ও মেজান ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টগুলিতে পুলওয়ামা হামলা সংগঠিত হওয়ার কিছুদিন আগে ওই অর্থ ফেলা হয়েছিল। পুলওয়ামার মূলচক্রী, মাসুদ আজহারের এই ভাইপো পরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়।
এনআইএ আরও জানায়, এই ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে একটি মারুতি ইকো গাড়ি এবং বিস্ফোরক সামগ্রী কিনতে খরচ হয়েছিল ৬ লক্ষ টাকা। ওই মারুতি ইকো গাড়িটি পুলওয়ামা হামলায় ব্যবহার করেছিল আত্মঘাতী বোমারু। সিআরপিএফের কনভয়ে ওই গাড়িটি গিয়েই ধাক্কা মেরেছিল।
২০০ কেজির বিস্ফোরক কিনতেই খরচ করা হয়েছিল ২.৮০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও ছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল আরডিএক্স, জিলেটিন স্টিক। মুদাসির আহমেদ নামে জইশের এক হ্যান্ডেলারের উপর এই দায়িত্ব ছিল। চার কেজির অ্যালুমিনিয়াম পাউডার কেনা হয়েছিল অ্যামাজোন থেকে। ওয়াজি উল ইসলাম নামে আর এক হ্যান্ডেলার এর দায়িত্বে ছিল। ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও জোগাড় করেছিল এই ওয়াসিম। দুটো কন্টেনারে করে মারুতি ইকোয় আরডিএক্স রাখা হয়েছিল। একটির ওজন ছিল ১৬০ কেজি, অপরটির ৪০ কেজি। পুলওয়ামা বিস্ফোরণে এই ২০০ কেজির বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল।
এনআইএ'র তদন্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়, পুলওয়ামার পর আরও একটি হামলার পরিকল্পনা ছিল জইশের। কিন্তু, ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট হামালার জেরে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়। কারণ, মূলচক্রী মহম্মদ উমর ফারুক ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যাঘাতে নিহত হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হয়েছিল।
জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ভাইপো মহম্মদ উমর ফারুক আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাংবাদিকদেরও মারতে চেয়েছিল বলে এনআইএ'র চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, পুলওয়ামার সুইসাইড বোম্বার আদিল আহমেদ ডরের বাড়ি গিয়ে তার বাবার সাক্ষাত্কার নিয়েছিল বিবিসি-র সাংবাদিকদের একটি টিম। যার জেরে জইশের রোষানলে পড়েন বিবিসির সাংবাদিকরা। যে কারণে আন্তর্জাতিক ওই সাংবাদ সংস্থার সাংবাদিকদেরও নিশানা করতে চেয়েছিল মহম্মদ উমর ফারুখ।