সংক্ষিপ্ত
আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটে সবথেকে বেশি রানের অধিকারী তিনি। প্রায় ২ যুগের ক্রিকেট কেরিয়ারে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket) তার অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি (India 75) ফিরে দেখা মহিলা ক্রিকেটের কিংবদন্তী মিতালি রাজের (Mithali Raj) জীবন কাহিনি।
প্রায় ২ যুগের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার। মহিলাদের ওডিআই ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এছাড়াও অসংখ্য রেকর্ড। ভারতীয় ক্রিকেটের লেডি সতিন বলে ডাকা হয় তাকে। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গিয়েছেন এক অন্য পর্যায়ে। তিনি মিতালি রাজ। ভারতীয় ক্রিকেটে তার অবদান অনস্বীকার্য। দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পালিত হচ্ছে আজাদির অমৃত মহোৎসব। সেই উপলক্ষ্যে স্মরণ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতি ব্যক্তিদের। ফলে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস আরও একবার ফিরে দেখা মিতালি রাজের জীবন কাহিনি।
মিতালি রাজ রাজস্থানের যোধপুর শহরে ১৯৮২ সালে ৩ ডিসেম্বর একটি তামিল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা দোরাই রাজ যিনি ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সে একজন এয়ারম্যান (ওয়ার্রেন্ট অফিসার) ছিলেন এবং তার মা লীলা রাজ একজন গৃহনী ছিলেন। তার এক দাদা আছে নাম মিঠুন রাজ।মিতালি হায়দ্রাবাদের কেয়াস হাই স্কুল থেকে তার স্কুল জীবনের পড়াশুনা শেষ করে এবং এরপর তিনি সেকেন্দ্রাবাদের কস্তুরবা গান্ধী জুনিয়ার ফর ওমেন যোগ দেয় তার ইন্টারমিডিয়েট পড়াশুনার জন্য। ১০ বছর বয়স থেকেই মিতালি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তিনি তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ শহরে থাকতেন। তিনি তার দাদার সাথে স্কুল জীবনে ক্রিকেটের কোচিং শুরু করেন। সেখানে তার দাদার সাথে খেলতেন। তিনি প্রায়ই ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। এছাড়াও তিনি একজন ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী। তবে তিনি ক্রিকেটকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য নাচ ছেড়ে দেন।
ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভালো ক্রিকেট খেলে সকলের নজরে চলে আসেন মিতালি রাজ। জাতীয় নির্বাচকদের নদরে আসতেও বেশি সময় লাগেনি। ১৯৯৯ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় মিতালি রাজের। ওই ম্য়াচে তিনি ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। ২০০১-০২ মরসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লখনউতে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিতালির। ১৭ আগস্ট ২০০২ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তৃতীয় টেস্টে ক্যারেন রোল্টনের ২০৯* রানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট রানের রেকর্ডটি ভেঙে দেন মিতালি রাজ। তিনি ২১৪ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। যদিও ২০০৪ সালের মার্চ মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪২ রান করে পাকিস্তানের কিরণ বালুচ তাঁর রেকর্ডটি ভেঙে দেন।]
২০০২ সালে ক্রিকইনফো মহিলা বিশ্বকাপের সময় ট্রাইফয়েড হয় মিতালির এবং তাঁর এই অসুস্থতার ফলে ভারত বিশ্বকাপের মূল পর্বে খুর একটা আগে যেতে পারেনি। যদিও ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে মহিলা বিশ্বকাপে তিনি ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছাতে সাহায্য করেন, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়।২০১৭ সালে মিতালি রাজের অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছায়। কিন্তু ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ৯ রানে হার শিকার করতে হয়। ফলে অধরা থেকে যায়। ২০১৯ টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন তিনি।২০২২ সালে দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা করেছিলেন মিতালি রাজ। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে ভারতীয় মহিলা দলকে। তারপর থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন অবসর নেওয়ার। ৮ জুন ২০২২ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান মিতালি রাজ।
নিজের ২ যুগের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ভারতীয় দলের বহু যুদ্ধের সাক্ষী মিতালি রাজ। বহু যুদ্ধ জয়ের সৈনিকও তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবথেকে বেশি রান করার শিরপাও রয়েছে মিতালির দখলে। এখনও পর্যন্ট মোট ২৩২টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন মিতালি রাজ। মোট রান করেছেন ৭৮০৫। শতরান ৭টি ও অর্ধশতরান ৬৪টি। গড় ৫০.৬৮। টি২০ ক্রিকেটে ৮৯টি ম্যাচে মিতালি রাজের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩৬৪ রান। ১৭টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। গড় ৩৭.৫২, সর্বোচ্চ স্কোর ৯৭। টেস্ট ক্রিকেটে ১২টি ম্য়াচে মিতালি করেছেন ৬৯৯ রান। ১টি শতরান ও ৪টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। টেস্টে মিতালি রাজের সর্বোচ্চ স্কোর ২১৪ রান।
পরিশ্রম আর অদম্য জেদই ২৩ বছরে এতখানি সাফল্য এনে দিয়েছে মিতালিকে। ব্যাটার হিসেবে তাঁকে সচিন তেণ্নডুলকরের সঙ্গে এক আসনে বসিয়েছে বিসিসিআই। বিশ্বের একমাত্র মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রানের মালকিন তিনি। আটবার আইসিসি ওয়ানডে ব়্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান ছিল তাঁর দখলে। শুধু ব্যাটার হিসেবেই নয়, দলকে নেতৃত্ব দিয়েও বহু ট্রফি জিতিয়েছেন তিনি। মিতালি রাজ তার দুর্দান্ত খেলার জন্য দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান খেলরত্ন পেয়েছেন। তিনি দেশের ৫ম ক্রিকেটার এবং প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে এই সম্মান পেয়েছেন। এর আগে তিনি ২০০৩ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০১৫ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১৭ সালে ভোগ স্পোর্টসপারসন অফ দ্য ইয়ার পেয়েছিলেন। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর পরিবারের সময় কাটাচ্ছেন লেডি সচিন। ভারতীয় ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটে মিতালি রাজের অবদান চিরস্মরণীয়।
আরও পড়ুনঃলালা অমরনাথ স্বাধীন ভারতের প্রথম ক্রিকেট ক্যাপ্টেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ছিলেন ভারতের গর্ব