সংক্ষিপ্ত
তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ায় প্রশ্নের মুখে ভারতীয় বিনিয়োগ। ভারত এখনও কূটনৈতিক নীতি ঘোষণা করেনি।
রবিবার তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে। দুই দশক পর আমেরিকা আর ন্যাটো সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই তালিবানরা দ্রুততার সঙ্গে আফগানিস্তানের দখল নিতে শুরু করে। মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে অধিকাংশ বড় শহরেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে তালিবানরা। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এত দ্রুত পালটাচ্ছিল যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছে আফগানিস্তানের বাসিন্দারাও। কিছুটা হলেও অবাক হয়েছে বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে বড় প্রশ্ন আফগানিস্তানে ভারত যে বিনিয়োগ করেছিল তার কী হবে? যদিও নতুন দিল্লি বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি। বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ভারত গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী যখন তালিবান ও অন্যান্য মৌলবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তখন ভারত আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের সাহায্যে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরে 'অপেক্ষা আর পর্যবেক্ষণ' -এই দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে ভারত। নতুন দিল্লি ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে সমস্ত কনস্যুলেট বন্ধ করে দিয়েছে। কাবুলের দূতাবাস থেকে ১২০ কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে ভারতীয় নাগরিকদেরও সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
Afghanistan Crisis: তালিবানি শাসনের ভয়, এক কাপড়েই দেশ ছেড়ে আজানার পথে শত শত আফগান
তবে তালিবানদের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক কী হবে তা এখনও স্পষ্ট করেনি ভারত। যদিও বিষয়টি নিয়ে তালিবানরাও মুখ খোলেনি। তবে প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির আমলে ভারত প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ আর তালিবানদের তীব্র বিরোধিতা করে এসেছিল । অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিল। দ্বিপাক্ষিক আর কূটনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের কৌশলগত স্বার্থের জন্য আফগানিস্তা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা প্রবেশের পর থেকেই ভারত সেই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছে। রাস্তা, স্কুল, বাঁধ, হাসপাতাল নির্মাণের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে। একটি সূত্র বলছে ভারত আফগানিস্তানে তিন বিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ৪০০টিও বেশি প্রকল্প যার অন্তর্গত।
Viral Video: বন্দুক কাঁধে সংসদে তালিবানরা, আফগানিস্তানের নাম বদলের জল্পনা শুরু
আফগানিস্তান সফর করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৫ সালে আফগান সংসদের উদ্বোধনও হয়েছিল তাঁর হাতে। ৯০০ কোটি টাকা খচর করে আফগান সংসদও তৈরি করে দিয়েছিল ভারত। যদিও সেই সংসদ ভবন আজ তালিবানদের দখলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ঘুরছে যেখানে দেখা যাচ্ছে তালিবানরা বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সংসদে।
এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা আর পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালে ভারত -আফগানিস্তান একটি চুক্তিও স্বারক্ষ করেছিল। সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দুটি দেশ বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করবে।চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারতীয় বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশের অধিকার পয়েছিল আফগানিস্তান। ২০১৯-২০ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যবসা করেছিল দুটি দেশ। কিন্তু তালিবানদের ক্ষমতা দখল ভারতের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
কয়েক বছর ধরেই ভারত আফগানিস্তানে রাস্তা, বাঁধ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সোরাল প্যানেল, টেকিকম নেটওয়ার্ক, সাবস্টেশন তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সাহায্য করছে। গতবছরের প্রথম দিকে জেনেভায় আফগানিস্তান সম্মেলনের সময় বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন ৪০০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশেই কাজ করছে। গতবছরই ভারত ৮০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করে ১০০টি কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। কাবুলের বাঁধ নির্মাণের ২ মিলিয়ন ডরাল খরচ করার পরিকল্পনা ছিল। এছাড়ও স্থানীয় বাসিন্দাদের পাণীয় জল সরবরাহের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আফগানিস্তান তালিবান নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।