সংক্ষিপ্ত
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন চালু করতে মরিয়ে চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাধা দিতে প্রস্তুত বিজেপি। এই অবস্থায় জেনে নিন এই বিষয় সম্পর্কিত তথ্য।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিল আসন্ন বাদল অধিবেশনে পেশ করা হবে সংসদকে। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিলের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তিনি বলেছেন একই পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম থাকবে তা যেমন মেনে নেওয়া যায় না তেমনই মেনে নেওয়া যায় না একই দেশের নাগরিকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন। ইতিমধ্যেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। যদিও বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা বা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিম মধ্যে ছিল এই আইন লাগু করা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার বিষয়ে তৎপর। তবে কী এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি - তাই নিয়ে রইল বিস্তারিত তথ্য।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড-
ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতিগুলির মধ্যে একটি। এটির উদ্দেশ্য ভারতের নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব। । বর্তমানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইন রয়েছে। সেগুলি মূলত ধর্মীয় শাস্ত্র বা রীতি মেনে পরিচালিত হয়। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে গোটা দেশে একটি আইন চালু থাকবে। ভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য যে আইন রয়েছে তা আর থাকবে না। এই ব্যক্তিগত আইনের মধ্যে রয়েছে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ , উত্তরাধিকার, দত্তক, ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। একদিকে ভারতীয় সংবিধানের যখন অনুচ্ছদ ২৫-২৮ এর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা রয়েছে। অন্যদিকে সংবিধানের ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে জাতীয় নীতি প্রণয়নের সময় সকল ভারতীয় নাগরিকদের জন্য নির্দেশমূলক নীতি ও সাধারণ আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনের আমলেই ব্যক্তিগত আইন লাগু ছিল। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় হিন্দু আর মুসলিমদের গার্হস্থ্যের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার জন্য দুই সম্প্রদায়ের নাগরিকদের জন্য আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত আইন চালু করেছিল। যদিও পর্তুগিজরা গোয়া ও দমনে তা করেনি। সেখানে গোয়া সিভিল কোড নামে সকলকের জন্য একটি মাত্র আইন প্রযোজ্য ছিল। ১৯৮৫ সালে শাহ বানো মামলার পরই ভারতীয় রাজনীতিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করাই চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে।
হিন্দু ব্যক্তিগত আইন- হিন্দু ব্যক্তিগত আইন তৈরি হয়েছে প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ ও হিন্দুদের রীতিনীতি থেকে। যার মধ্যে রয়েছে হিন্দু বিবাহ আইন, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, উত্তরাধিকার আইন। এই আইনগুলি হিন্দুদের সঙ্গে বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মুসলিম ব্যক্তিগত আইন-
ভারতীয় মুসলিমরা মুসলিম ব্যক্তিগত আইন মেনে চলে, যা শরীয়াহের ওপর নির্ভর করে তৈরি। মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের মধ্যে রয়েছে বিবাহ আইন, বিবাহ বিচ্ছেদ , উত্তরাধিকার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি।
ভারতীয় খ্রিস্টান, পার্সি আর ইহুদিদের জন্য ১৯২৫ সালে ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য হয়েছিল।
অভিন্ন দেওয়ানিবিধি নিয়ে বিতর্ক-
ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। তাদের সাংস্কৃতিও আলাদা। সংবিধানে প্রত্যেক ধর্মের স্বাধীনতার কথা উল্লেখও রয়েছে। তাই সমালোচকদের মতে অভিন্ন দেওয়ানিবিধি লাগু করে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেবে।
সমালোচকদের আরও দাবি অভিন্ন দেওয়ানিবিধি আইন চালু হলে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে না। সাধারণ নাগরিক আইন চালু হলে তার প্রভাব সরাসরি সংখ্যালঘুদের ওপর পড়বে। তাদের অধিকার হ্রাস পাবে। তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই এটি নিয়ে প্রচার শুরু করেছে। তবে যারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন হিসেবে চালু করার সমর্থক তাদের যুক্তি হল এটি চালু হলে লিঙ্গ সমতা বাড়বে, নারীদের অধিকার আরও সুরক্ষিত হবে।
যাইহোক অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউফর্ম সিভিল কোড আসন্ন বাদল অধিবেশনে পেশ হতে পারে। ইতিমধ্যেই জাতীয় আইন কমিশন বিষয়টি নিয়ে ধর্মীয় সংগঠন ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
আরও পড়ুনঃ
১ কোটি টাকা দিয়ে ভেড়া কিনতে লম্বা লাইন, মেষপালক ফেরাচ্ছেন ক্রেতাদের- কারণ জানলে অবাক হবেন আপনিও