সংক্ষিপ্ত
সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে, অথবা প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ স্কুল থেকে পাশ করে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন জারি রেখেছেন অসমের এই দুই অসামান্য বিজ্ঞানী।
আসামের নাজনীন ইয়াসমিন এবং ডক্টর বাহারুল ইসলাম বারভূয়ান হলেন দু’জন কৃতী বিজ্ঞানী যাঁরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ইসরো-র চন্দ্রযান 3 অবতরণ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
নাজনীন ইয়াসমিন মধ্য আসামের নওগাঁও জেলার মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ, ২ বছর আগে সবচেয়ে কঠিন নির্বাচন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ISRO-তে যোগ দেন। এই তরুণী বিজ্ঞানী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরোর লঞ্চ বিভাগে রাডার ট্র্যাকিংয়ের সাথে জড়িত। তবে, এই যাত্রা সহজ ছিল না নাজনীন ইয়াসমিনের জন্য। প্রায় ছয় মাস আগে যখন তিনি তাঁর প্রথম সন্তানের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন, তাকে অন্তত দুবার গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং তিনি নিজের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন।
বিবাহিত জীবনের চ্যালেঞ্জও তাঁকে সামলাতে হয়েছে এবং গর্ভাবস্থা-পরবর্তী পর্বে নাজনীন ইয়াসমিন চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে খুব উৎসাহী ছিলেন। অনেক সময় নাজনীন নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করতেন। মঞ্জিলা বেগম এবংআবুল কালাম আজাদের মেয়ে এবং প্রত্যন্ত নওগাঁও জেলার জুরিয়ার কাছে মাহেরপাড় এলাকার বাসিন্দা নাজনীন প্রায় দুই বছর আগে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় ISRO সদর দফতরে বিজ্ঞানী হিসেবে তার নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন।
নাজনীন ইয়াসমিন তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন মধ্য আসামের নওগাঁও জেলার নুরুদ্দিন ফুরকানিয়া জেবি স্কুলে। তিনি ২০০৭ সালে কাদামনি টাউন হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন বা দশম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় উজ্জ্বল ফলাফল করেন। ২০০৯ সালে আলফাবিটা সায়েন্স জুনিয়র কলেজ থেকে বিজ্ঞান ধারার বিভিন্ন বিষয়ে লেটার মার্ক সহ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ২০১৩ সালে গুয়াহাটির NITS মির্জা কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্সে তার B.Tech এবং তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে M.Tech ডিগ্রি অর্জন করেন। বিভিন্ন বেসরকারি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি, নাজনীন ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে জাতীয় যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ভারত সরকারের জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন।
শৈশব থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন নাজনীন, তিনি বলেছিলেন যে, তিনি ভারতের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এছাড়াও, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবুল কালামের জীবন ও কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে দক্ষিণ আসামের হাইলাকান্দির ড. বাহারুল ইসলাম বারভূঁইয়া প্রমাণ করেছেন যে, একজন ব্যক্তি যদি নিজের লক্ষ্যের প্রতি স্থির ও অবিচল থাকেন এবং কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান, তাহলে সমস্ত স্বপ্ন সত্যি হয়। ৪৫ বছর বয়সি বাহারুল হাইলাকান্দি শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সৈয়দবন্দ দ্বিতীয় খন্ড গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করার পর বাহারুল ইসলামের নাম আলোচনায় আসে। তিনি ISRO-এর একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
তিনি এসএস কলেজ থেকে বিএসসি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স, ইসরোতে যোগদানের আগে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। বাহারুলের বাবা-মা ছিলেন শিক্ষক এবং তাঁরা তাঁদের ছেলের জন্য প্রথম থেকেই নিজেদের বাড়িতে বিজ্ঞানের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। তাঁর বাবা মইনুল হক বারভূঁইয়া গত হয়েছেন। মা রেহানা এখন বৃদ্ধ, ছেলের কৃতিত্বে তিনি উচ্ছ্বসিত। বাহারুলের ভাই এনামুল হক বলেন, “এই মুহূর্তে আমার আনন্দ প্রকাশ করার কোনও শব্দ নেই। এমন সাফল্যের দিন আসবে, ভাবিনি। বুধবার থেকে মানুষজন আমাদের ডাকছেন।”
আরও পড়ুন-
ভগবান শিবের বাসস্থান থেকে ওম চিহ্নের সৃষ্টি, হিমালয়ের কৈলাস পর্বত সম্পর্কে ৮টি রহস্যময় তথ্য
Weather News: বঙ্গের আবহাওয়ায় ফের বড় বদল, ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি
Questions on Sex: সন্তান যৌনতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবেন কীভাবে? জেনে নিন ৬টি উপায়