Pahalgam Terrorist Attack: পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এই হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকা জঙ্গিরা এখনও অধরা। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ-সহ একাধিক সংস্থা।
Pahalgam Terror Attack: পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসবাদীরা এখনও দক্ষিণ কাশ্মীরেই লুকিয়ে আছে। এমনই সন্দেহ করছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (National Investigation Agency) আধিকারিকরা। তাঁদের আরও সন্দেহ, এই জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে গা ঢাকা দিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই পহেলগাঁওয়ে আসে। হামলা চালানোর পরেই তারা কোথাও লুকিয়ে পড়েছে। তাদের কাছে খাবার, গোপনে সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা-সহ নানা ধরনের উপকরণ আছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এনআইএ জানতে পেরেছে, পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় চারজন জঙ্গি নিরীহ পর্যটকদের গুলি করে খুন করলেও, তাদের আরও কয়েকজন সঙ্গী ছিল। তারা এখনও কাশ্মীরেই আছে। তারা হয় কোনও গোপন জায়গায় আছে, না হলে নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
হামলার সময় কতজন জঙ্গি ছিল?
পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হামলা চালানোর সময় প্রকাশ্যে ছিল চারজন জঙ্গি। তবে এনআইএ-র সন্দেহ, আরও কয়েকজন জঙ্গি কাছেই কোথাও ছিল। তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলে যদি সঙ্গীদের পালাতে সমস্যা হয়, তাহলে গুলি চালাতে তৈরি ছিল আড়ালে থাকা জঙ্গিরা। কাশ্মীরের দুর্গম জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকতে তৈরি এই জঙ্গিরা। বাইরে থেকে আপাতত কোনও সাহায্য না পেলেও তাদের চলবে। বেশ কিছুদিন ধরে গা ঢাকা দিয়ে থাকার মতো রসদ তাদের কাছে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড
২২ এপ্রিল বৈসরন উপত্যকায় যাঁদের প্রিয়জনদের গুলি করে মেরেছে জঙ্গিরা, সেই পরিবারগুলির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। এছাড়া যাঁরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হননি অথচ এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। সবার বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, যে জায়গায় হামলা চালানো হয়, সেখানে ঢোকা ও বেরনোর পথ আটকে দিয়েছিল জঙ্গিরা। মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকে দুই জঙ্গি। অপর এক জঙ্গি বেরনোর পথ দিয়ে ঢোকে। অন্য একজন পাইন বন লুকিয়েছিল। তিনজন জঙ্গি পর্যটকদের গুলি করে। যে পর্যটকরা প্রকৃতির শোভা উপভোগ করছিলেন, খাবার দোকানে ছিলেন, ঘোড়ায় চড়ে ঘুরছিলেন, তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়। দুই জঙ্গি সেনার পোশাক পরেছিল। তৃতীয় জঙ্গি কাশ্মীরের চিরাচরিত পোশাক ফেরান পরেছিল। প্রথমে ওই জায়গা থেকে বেরনোর পথে গুলি চালায় এক জঙ্গি। পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। গুলির শব্দ পেয়ে পর্যটকরা প্রবেশ পথের দিকে দৌড়তে শুরু করেন। তখন সেখানে থাকা দুই জঙ্গি গুলি চালাতে শুরু করে।
ভয়াবহ বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শীদের
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা প্রথমে পুরুষ-মহিলা, হিন্দু-মুসলিমদের আলাদা করার চেষ্টা করে। পর্যটকরা আলাদা হতে অস্বীকার করলে জঙ্গিরা সবাইকে কলমা পাঠ করতে বলে। এরপরেই তারা গুলি চালাতে শুরু করে। নৌবাহিনীর অফিসার বিনয় নারওয়াল প্রবেশ পথ দিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁকে গুলি করে জঙ্গিরা। চা ও ভেলপুরির স্টলে যে পর্যটকরা ছিলেন, সেখানেই হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জঙ্গিরা সেখানে ওত পেতে ছিল। পর্যটকরা পৌঁছতেই গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। হামলা চালানোর পর জঙ্গিরা ওই বিনোদন উদ্যানের বাঁ দিকে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষীরা পরে জানতে পেরেছেন, জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করছিল, তাতে সিম কার্ড দরকার হয় না। এই যন্ত্রের মাধ্যমে কথা বলা ছাড়াও বার্তা পাঠানো যায়। এই যন্ত্র অত্যন্ত সুরক্ষিত। নিরাপত্তারক্ষীদের পক্ষে নাগাল পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখন জঙ্গিদের হাতে। নিরাপত্তারক্ষীরা আরও জানতে পেরেছেন, হামলা চালানোর ঠিক এক সপ্তাহ আগে ১৫ এপ্রিল তিন জায়গা চিহ্নিত করে জঙ্গিরা। তারা স্থানীয় এক বিনোদন উদ্যানেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই হামলা চালায় জঙ্গিরা। এখন তাদের খুঁজে বের করাই নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান লক্ষ্য।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
