সংক্ষিপ্ত

'শামানবাদ'এর টানে ২ মাস ধরে হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) ১৭ বছর কিশোরী। ২ মাস ধরে তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। 
 

তারিখটা ছিল ৩১ অক্টোবর। দুই জোড়া জামাকাপড় এবং নগদ মাত্র ২,৫০০ টাকা বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) বাড়ি ছেড়েছিল , ১৭ বছর বয়সী অনুষ্কা। তারপর দুই মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু, তার বাবা-মা এখনও জানেন না তাঁদের একমাত্র মেয়েটা কোথায় আছে, কী করছে। আচমকা সব হারিয়ে এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশও এখনও পর্যন্ত একেবারে অসহায়। তাদের তদন্তের একমাত্র সূত্র, সম্প্রতি 'শামানবাদ' (Shamanism) বলে একপ্রকার তান্ত্রিকতার (Tantricism) দিকে আগ্রহ জন্মেছিল অনুষ্কার। তার নিখোঁজ হওয়ার পিছনে এই শামানবাদের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

অনুষ্কার বাবা-মা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত আর পাঁচজন টিএনএজার মেয়ের সঙ্গে কোনও ফারাক ছিল না অনুষ্কার। কিন্তু, বদলটা ঘটেছিল গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে। অন্তত, সেই সময়ই তার বাবা-মা প্রথম তার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিল। কী কী বদল ঘটেছিল তার মধ্যে? অনুষ্কার বাবা জানিয়েছেন, সে পরিবারের সকলকে এড়িয়ে চলছিল। একেবারে একা একা সময় কাটাতে শুরু করেছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলত না। নিজেকে ঘরে আটকে রাখত। ঘরের কাজকর্ম থেকেও নিজেকে ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছিল। 

এরপর, তার বাবা-মা অনুষ্কাকে এক মনোবিদের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বিশেষ কাজ হয়নি। অনুষ্কার বাবা-মায়ের সন্দেহ, সে সম্প্রতি অনলাইনে শামানবাদ নিয়ে চর্চা শুরু করেছিল। কী এই শামানবাদ? বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতেই শামানদের উল্লেখ রয়েছে। মূলত আত্মার জগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে শারীরিক ও আত্মিক রোগ সারানোটাই শামানদের কাজ। তুলনা করা যেতে পারে আমাদের গ্রাম-বাংলার ওঝা বা গুনিনদের সঙ্গে। পৃথিবীজুড়েই শামানরা ড্রাম বাজায়। গানবাজনা করে রোগবালাই দূর করে। কথিত আছে সমাধি বা ঘুমের মতো অবস্থায় থাকা শামানরা নিজের আত্মাকে স্বর্গ-মর্ত-পাতালের যে কোনও জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। তারা বিশ্বাস করে, এই গোটা বিশ্বজগৎ জীবন্ত এবং আর্ন্তসর্ম্পকযুক্ত। 

বিষয়টা অনুষ্কাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় পাস করার পর থেকেই সে সাহারা রোজ (Sahara Rose), কাম্যা বুচদের (Kamya Buch) মতো আধ্যাত্মিক জীবন প্রশিক্ষক এবং সাইকেডেলিক শিক্ষাবিদদের বিষয়ে আগ্রহী হয়েছিল। এমনকী, তার বাবা-মা বলেছে, তাদেরকে সে জানিয়েছিল যে সে শামানবাদ অনুশীলন করতে চায়। বাবা-মা অতটা গুরুত্ব না দিলেও, বলেছিলেন, সে যাই করুক, তা যেন বাড়ির ভিতরেই করে। কিন্তু, কথা শোনেনি সে, হঠাৎ করেই যেন উবে গিয়েছে। তার বাবা-মা'এর ধারণা, অনুষ্কাকে কেউ বাড়ি ছাড়া বিষয়ে উসকেছিল। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তার বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের সন্দেহ কেউ তাকে বাড়ি ছাডার ব্যাপারে প্রভাবিত করেছিল। কারণ সে কখনও বাড়ি ছেড়ে একা একা কোথাও যায়নি। 

এদিকে অথৈ জলে পড়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ (Bengaluru Police)। তারা জানিয়েছে, এক জায়গার পর থেকে আর ওই কিশোরীর গতিবিধির কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ই জায়গায় কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল না। এই অবস্থায় তারা অনুষ্কার অনলাইন কার্যকলাপের বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। এই বিষয়ে কাজ করছে ফরেনসিক বিভাগ। গত দুই মাসে ইন্টারনেটে তাকে অ্যাক্টিভ দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক অতীতে তার কোন কোনও বিষয়ে আগ্রহ ছিল, কার সঙ্গে কথা বলত, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশপাশি গোটা শহরের সকল সিসিটিভি ক্যামেরার বিশাল ডাটাবেস ঘেটে অনুষ্কার সন্ধান চলছে।

এই অবস্থায় তার অসহায় বাবা-মা আর পুরোপুরি পুলিশের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না। একমাত্র মেয়েকে ফিরে পেতে তাঁরা এবার জনগণের সহায়তা চাইছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়ের ছবি দিয়ে, কারোর কাছ থেকে যদি কোনও তথ্য পাওয়া যায়, তার অপেক্ষা করছেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে অনুষ্কার মা বলেছেন, তিনি জানেন, মেয়ে তাঁদের খুবই ভালবাসে। ঠিক তাদের কাছে সে ফিরে আসবে, এমনটাই আশা করছেন তিনি।