সংক্ষিপ্ত

গোটা জীবনই এই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল ভীমরাও রামজি আম্বেডকরকে। দলিতরা তাঁকে ‘বাবা সাহেব’ বলে ডাকেন। আর সেই শিক্ষার জোরেই পরবর্তীকালে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন তিনি। আর তাঁর জোরেই আজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছেন বহু মানুষ। 

বোম্বের এলফিনস্টন হাই স্কুল (Elphinstone High School)। পুরোদমে তখন ক্লাস চলছিল। সেই সময় অঙ্কের শিক্ষক (Mathematics Teacher) ক্লাস নিচ্ছিলেন। মন দিয়ে সবাই অঙ্ক শিখছিল। এরপর বোর্ডে (Board) একটি অঙ্ক কষে দেখানোর জন্য ক্লাসের একদম শেষের বেঞ্চে বসে থাকা এক ছাত্রকে ডাকেন শিক্ষক। শিক্ষকের ডাক শুনে নিজের জায়গা থেকে উঠে বোর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ছাত্রটি (Student)। আর তা দেখে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ক্লাসের মধ্যে থাকা অন্য ছাত্রদের মধ্যে। বোর্ডের পিছন থেকে নিজেদের টিফিন বাক্স সরানোর জন্য হুড়োহুড়ি করতে শুরু করে তারা। কারণ একটাই, যে ছাত্রটি বোর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সে আসলে দলিত। তার জন্ম নিম্নবর্ণের পরিবারে। তাই তার ছোঁয়ায় অপবিত্র হয়ে যাবে সব খাবার। সেই কারণেই সেই টিফিন বাক্সগুলি (Tiffin Box) তারা সরিয়ে নেয়। ওই ছাত্রর নাম ছিল ভীমরাও রামজি আম্বেডকর (Bhimrao Ramji Ambedkar)।   

তবে বন্ধুদের ওই অবস্থা দেখে একটুও বিচলিত হতে দেখা যায়নি ভীমরাওকে। কারণ এই বিষয়গুলি ছিল তার কাছে জানা। ছোট থেকেই এই পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছে সে। তবু বোম্বের ওই স্কুলের ক্লাসের একটি বেঞ্চে সে বসার সুযোগ পেয়েছিল। এক কোণে হলেও সে একটা জায়গা পেয়েছিল। ক্লাসের বাইরে বা মাটিতে তাকে বসতে হয়নি।  

আরও পড়ুন- বাঙালি আমলার নেতৃত্বে হয়েছিল প্রথম সাধারণ নির্বাচন, সুকুমার সেনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেহেরু

প্রথমে দলিতদের স্কুলে যাওয়ার কোনও অনুমতি ছিল না। তারপর অনেক ধর্না দেওয়ার পর, দাপোলিতে সে প্রথম স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। সেই সময় গোটা স্কুলে দলিত ছিল মাত্র ৬ জন। তবে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি পেলেও সবার সঙ্গে বসে ক্লাস করার তাদের অনুমতি ছিল না। তাই তাদের জন্য আলাদা করে ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমনকী, শিক্ষকরাও সেই ঘরে প্রবেশ করতেন না। বাইরে থেকেই তাদের যা পড়ানোর পড়িয়ে যেতেন। এছাড়া শিক্ষকদের কোনও প্রশ্ন করার অধিকারও ছিল না ওই ছাত্রদের। নিজেদের জোরেই পড়াশোনা করতে হত তাদের। আর সেই ছয় জন দলিত ছাত্রের মধ্যে থেকে একমাত্র ভীমরাও একাই প্রাথমিক স্কুল পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। জীবনে কারও তাচ্ছিল্যকে কোনও গুরুত্ব দেয়নি সে। তার লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা শেখা। আর তার জন্য গোটা জীবন সে সব সহ্য করে গিয়েছিল। 

এরপর দাপোলি থেকে সতর চলে যায় পরিবারের সঙ্গে। সেখানে আর তার জন্য অন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়নি। ক্লাসে সে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে জায়গা হয়েছিল ক্লাসের একদম শেষ প্রান্তে রাখা একটি কোণে। কিন্তু, বেঞ্চিতে বসতে পারা যায়নি। ক্লাসের এক কোণে নিজেই বাড়ি নিয়ে আসা পাটের বস্তাটি বিছিয়ে বসতে হত। আবার দিনের শেষে সেটা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হত। স্কুলের সাফাই কর্মীও তা স্পর্শ করত না। যাই হোক শিক্ষার জন্য মুখ বুজে তাই সহ্য করেছিল ভীমরাও। 

আরও পড়ুন- Lal Bahadur Shastri: লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু রহস্যে মোড়া, ৪টি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নিয়ে জল্পনা

গোটা জীবনই এই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল ভীমরাও রামজি আম্বেডকরকে। দলিতরা তাঁকে ‘বাবা সাহেব’ বলে ডাকেন। আর সেই শিক্ষার জোরেই পরবর্তীকালে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন তিনি। আর তাঁর জোরেই আজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছেন বহু মানুষ। ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের মুখ্য স্থপতি। জাতিবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। ১৯৯০ সালে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।