সংক্ষিপ্ত
২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর এক বছরেরও বেশি সময় পরে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার মহিলাদের জন্য বিবাহের বৈধ বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব পাস করেছে।
বর্তমানে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর। মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানো নিয়ে এক বছরেরও আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Prime Minister Narendra Modi)। এর এক বছরেরও বেশি সময় পরে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা (Union Cabinet) বুধবার মহিলাদের জন্য বিবাহের বৈধ বয়স (legal age of marriage for women) ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর (18 to 21 years) করার প্রস্তাব পাস করেছে।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরে, সরকার বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা আইন, ২০০৬-এ একটি সংশোধনী আনবে। এছাড়াও বিশেষ বিবাহ আইন এবং হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-এর মতো ব্যক্তিগত আইনগুলিতেও সংশোধন নিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে। জয়া জেটলির নেতৃত্বে কেন্দ্রের টাস্ক ফোর্স ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নীতি আয়োগে কিছু সুপারিশ জমা দেয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতেই বুধবার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সুপারিশের বিষয়গুলি ছিল মাতৃত্বের বয়স, অল্পবয়েসী মায়েদের মৃত্যুর হার কমানোর প্রয়োজনীয়তা, মায়েদের পুষ্টির সচেতনতা তৈরির মত সমস্যা।
সংবাদমাধ্যমে জয়া জেটলি বলেন মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানোর পিছনে কখনই দেশের জন্মসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের যুক্তিটি কাজ করেনি। বরং মায়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে যে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে, তার দিশা দেখাবে এই সিদ্ধান্ত। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে যে বন্ধ্যাত্বের হার দেশে ক্রমশ বাড়ছে, তবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।NFHS 5-এর তথ্য অনুসারে, ভারত এই প্রথম ২.০-এর মোট ফার্টিলিটি রেট অর্জন করেছে। এতে প্রমাণিত আগামী বছরগুলিতে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটবে না। অন্যদিকে, তথ্যে আরও জানা গেছে যে বাল্যবিবাহ ২০১৫-১৬ সালের ২৭ শতাংশ থেকে ২০১৯-২১ সালে ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। জেটলি জানান, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্পূর্ণ আলোচনার পরেই মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানোর ওপর চূড়ান্ত শিলমোহর পড়েছে।
জানা গিয়েছে, দেশের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। ১৫টিরও বেশি এনজিওকে যুব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলিতে, যেমন রাজস্থানের বিশেষ জেলাগুলিতে যেখানে বাল্যবিবাহ বেশ প্রচলিত, সেখান থেকে মানুষের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের বেশিরভাগের মত বিয়ের বয়স ২২-২৩ বছর হওয়া উচিত।
কেন্দ্রীয় সূত্র জানাচ্ছে কমিটির আরও সুপারিশ রয়েছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যৌন শিক্ষাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের পাঠ্যক্রমে চালু করা। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মহিলাদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ এবং জীবিকা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, যাতে বিবাহযোগ্য বয়স বৃদ্ধি কার্যকর করা যায়। কেন্দ্র জানাচ্ছে মেয়েরা যদি দেখাতে পারে যে তারা আর্থিকভাবে স্বাধীন, অভিভাবকরা তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আগে দুবার ভাববেন।
২০২০-র কেন্দ্রীয় বাজেটে মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেট পেশ করার সময় জানান, ১৯৭৮ পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ বছর। আগামী দিনে এই বয়সসীমা আরও বাড়াতে চায় কেন্দ্র। এই বিষয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনেরও প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।