সংক্ষিপ্ত
হাত পা ছিল হাত-পা শিকল দিয়ে আটকানো, মুখ ছিল প্ল্যাস্টিকে বাঁধা। মৃতদেহের বীভৎসতা দেখে শিউরে উঠেছিলেন মানুষ।
২০ অক্টোবর পশ্চিম দিল্লির তিলকনগর এলাকার একটি স্কুলের কাছে উদ্ধার হয় এক মহিলার প্ল্যাস্টিকে মোড়ানো মৃতদেহ। সেই মহিলার সম্পর্কে তদন্ত করে জানা যায় যে তিনি প্রকৃতপক্ষে সুইজারল্যান্ডের ৩০ বছর বয়সি নাগরিক, নাম নীনা বার্জার। হাত পা ছিল হাত-পা শিকল দিয়ে আটকানো, মুখ ছিল প্ল্যাস্টিকে বাঁধা। মৃতদেহের বীভৎসতা দেখে শিউরে উঠেছিলেন মানুষ। সেই ঘটনার তদন্তেই এবার উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
-
স্কুলের কাছে কে ওই বিদেশিনীর মৃতদেহ ফেলে রেখে গেল, সেই বিষয়ে তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ, সেখানেই দেখা যায় একটি স্যান্ট্রো গাড়ি থেকে নামানো হয়েছিল ওই মৃতদেহ। এই স্যান্ট্রো গাড়িটি কার? সেই বিষয়ে তদন্ত করে উঠে আসে দিল্লির জনকপুরীর বাসিন্দা গুরপ্রীত সিংহের নাম। গুরপ্রীত নিজের মা বাবা এবং বোনের সঙ্গে দিল্লিতে থাকেন এবং প্রায়শই বিদেশ যান। ২০২১ সালে জ়ুরিখে তাঁর আলাপ হয়েছিল নীনার সঙ্গে যিনি সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা।
-
নীনার সঙ্গে থাকার জন্য প্রায়শই সুইজারল্যান্ডে যেতেন গুরপ্রীত। বিদেশি মানুষদের ভাগ্য বিচার করে দেওয়ার টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ করতেন বলে জানা গেছে। নীনাকে তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাবে নীনা রাজি না হওয়ায় তিনি নীনাকে ভারত ঘুরিয়ে দেখাবেন বলে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১১ অক্টোবর নীনা দিল্লিতে আসেন। তখন নিজের স্যান্ট্রো গাড়ির ভেতর নীনার হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলেন গুরপ্রীত। তার পর তাঁকে নিয়ে শহরের নানা জায়গায় ঘোরেন। সবশেষে, শাহপুর খাট্টায় বিষ্ণু গার্ডেন এলাকার একটি নির্জন জায়গায় গাড়িটি দাঁড় করান।
-
গাড়ির ভেতরে নীনার মুখ প্ল্যাস্টিকে জড়িয়ে তাঁর শ্বাস রুদ্ধ করে দেন গুরপ্রীত। আধ ঘণ্টা ধরে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন সুইস তরুণী, তাঁর দু'চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসে, যন্ত্রণায় হাত-পা ছুড়ছিলেন তিনি। সেই দৃশ্য দেখে আনন্দে হাসতে থাকেন গুরপ্রীত। এর পর নীনার দেহ চালকের আসনের পাশের আসনে রেখে দেন , কালো পর্দা দিয়ে জানলার কাচ ঢেকে মৃতদেহ গাড়িতে ফেলে রেখেই চম্পট দেন অভিযুক্ত। দু’দিন পর আবার বিষ্ণু গার্ডেনে গিয়ে তিনি দেখতে যান নীনার মৃতদেহে পচন ধরেছে কি না। তখন তাঁর গাড়ির ভিতর থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। দেহটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে পশ্চিম দিল্লির তিলকনগর এলাকায় পুরসভার স্কুলের কাছে ব্যাগটি ফেলে আসেন গুরপ্রীত। পুলিশি জেরার মুখে এই কথা স্বীকার করেছেন তিনি নিজেই।
-
পুলিশ তাঁর কাছ থেকে নীনার পাসপোর্ট, ভিসা সহ অনেক নথি উদ্ধার করেছে। অভিযুক্তের মোবাইল ফোনের তদন্তে জানা গিয়েছে যে তিনি অন্তত ১২ জন মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন, যাঁরা বিদেশিনী। এরপরেই পুলিশের সন্দেহ হয় যে, এই যুবক নারী-পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কারণ, বকলমে তিনি কোনও রোজগার করেন না। অথচ তাঁর ফ্ল্যাটে তল্লাশি করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ! তাঁর সঙ্গে হাওয়ালা যোগের তত্ত্বও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে মিলে এবিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-ও।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।