সংক্ষিপ্ত
- ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
- একই সময়ে ভারতের অর্থনীতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে
- এর পিছনে অনেকেই নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন অর্থনৈতিক পদক্ষেপ-কে দায়ী করছেন
- মোদীনমিক্স নিয়ে কিন্তু আগেই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ
২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। অদ্ভূত বিষয় হল তিনি যেই সময় বিশ্ব গরিবী নিয়ে কাজ করে নোবেল পুরস্কার জিতলেন, সেই সময়ই ভারতের অর্থনীতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। একদিন আগেই বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে আগামী আর্থিক বছরে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আরও কমে ৬-এ নেমে আসবে। এর পিছনে অনেকেই নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ অর্থাৎ মোদীনমিক্স-কে দায়ী করছেন। সদ্য ভারতকে গর্বিত করা অভিজিৎ-এর কী অভিমত মোদীনমিক্স নিয়ে?
২০১৭ সালে এক সর্ববারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মোদী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দারুণ হগর্বের মুহূর্তে ফিরে দেখা য়াক ঠিক কী মত দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেছিলেন, মোদী সরকার মুখে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই অনুয়ায়ী কাজ হয়েছে সামান্যই। তবে তিনি বলেছিলেন সম্ভবত সরকারে পক্ষ থেকে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে কার্যক্ষেত্রে তা অনেতটাই 'তৃতীয় ইউপিএ সরকারে'র সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। সাফ জানিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের থেকে পৃথক কোনও গভীর নীতি নিয়ে মোদী সরকারে চিন্তাভাবনা তাঁর চোখে ধরা পড়েনি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে মোদী সরকার জনগণকে সরকারের জোয়াল থেকে মুক্ত করার বিষয়ে অনেক কথা বলেছিল। তার ঠিক কী অর্থ তাই নিয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু, সেই কথা কাজে করে দেখানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু যে হয়নি সেই বিষয়ে অভিজিৎ নিশ্চিত।
মোদী সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ তাঁর কাছে আজগুবি মনে হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল বিমুদ্রাকরণ বা নোট বাতিল। অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনও গুঢ় অর্থনীতি ছিল না। কাজেই তার ফলে ভারতের অর্থনীতির উন্নতির কোনও বিশেষ কারণ ছিল না। তিনি বলেছিলেন, সরকারও সম্ভবত বিমুদ্রাকরণকে দুর্দান্ত সাফল্য বলে মনে করে না। তবে তা সরকারে পক্ষে প্রকাশ্যে স্বীকার করা সম্ভব নয়।
মোদী সরকারের দ্বিতীয় বড় অর্থনৈতিক সংস্কারধর্মী পদক্ষেপ, জিএসটি লাগু করাও অভিজিৎ বন্দ্যোপাদ্যায়েয়র মনে দাগ কাটতে পারেনি। এই বিষয়ে তাঁর মত ছিল দীর্ঘমেয়াদে জিএসটি লাগু একটি ভাল ধারণা। তবে এর বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক লড়াইয়ের দরকার ছিল। সেই সঙ্গে সময়সীমা অতিক্রম হলেও সমস্ত দিকটি ভালভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে তবেই জিএসটি লাগু করা উচিত ছিল।
তাঁর মতে জিএসটি ব্যবস্থায় অসংগঠিত ক্ষেত্রকে কীভাবে সামিল করা যায় সেই সম্পর্কে আরও ভাবনা-চিন্তার দরকার ছিল। সেটা পুরোপুরি করা যায়নি। তবে তিনি আশাবাদী অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলিও সংগঠিত হবে। তবে তার জন্য ্নেক অনেক সময় লাগবে বলেো জানিয়েছিলেন তিনি। তাই জিএসটি লাগু করা কিছুটা হলেও একটি অপূর্ণ সংস্কার বলে মত দিয়েছিলেন এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। সেই কারণেই জিএসটি-র বাস্তবায়নে অতি কঠোরতার বিরোধিতা করেন তিনি।
এই অপূর্ণতা নিয়ে জিএসটি লাগু হওয়াটা বহু মানুষকে সমস্য়ায় ফেলেছিল। অভিজিতের কথায় প্রচুর মানুষ বিরক্ত হয়েছিলেন, স্পষ্টতই, প্রচুর সমস্যা ছিল। তবে জিএসটি লাগু করার কোনও সঠিক উপায় বলে কিছু হয় না বলেও জানান তিনি। তাই তিনি বলেছিলেন জিএসটি আরও ভাল ভাবে লাগু করা যেতে পারত, তবে বিমুদ্রাকরণের মতো এটা কোনও বিরাট বিপর্যয় নয়।