সংক্ষিপ্ত
হেট স্পিচ (Hate Speech)-এর সমালোচনার নামে আসলে বেছে বেছে হিন্দু (Hindus) এবং মোদী সরকারের (Modi Govt)-এর বিরুদ্ধে চলছে প্রচার। খোলা চিঠি লিখলেন ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের (Indian Foreign Service) প্রাক্তন অফিসারদের একটি দল।
হরিদ্বারের ধর্ম সংসদে হেট স্পিচ (Haridwar Dharma Sangsad Hate Speech), অর্থাৎ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ নিয়ে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন সমাজকর্মী, প্রাক্তন আমলা, প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের একাংশ। তাদের স্পষ্ট মত ছিল, সরকার পক্ষের মদতপুষ্ট হয়েই, এতটা বাড়বাড়ির স্পর্ধা দেখিয়েছেন ওই ধর্ম সংসদের বক্তারা। এবার, মোদী সরকারের (Modi Govt) পক্ষে দাঁড়ালেন ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের (Indian Foreign Service) প্রাক্তন অফিসারদের একটি দল। তাঁদের দাবি, সব ধরণের ঘৃণাত্মক বক্তব্যেরই নিন্দা করা উচিত। কিন্তু, বেছে বেছে হিন্দুদেরই নিশানা করা হচ্ছে। এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে, যেন, ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার আগে কখনও ভারতে জাতি বিদ্বেষের ঘটনা ঘটেনি।
প্রাক্তন বিদেশ সচিব কানওয়াল সিবাল (Kanwal Sibal), প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বীনা সিক্রি (Veena Sikri), লক্ষ্মী পুরি (Lakshmi Puri) - এরকম মোট ৩২ জন ভারতীয় ফরেন সার্ভিস বিভাগের প্রাক্তন আমলারা এই নিয়ে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) হরিদ্বারে সাম্প্রতিক বিতর্কিত ধর্ম সংসদে যে ধরণের 'সংখ্যালঘু বিরোধী বিবৃতি' দেওয়া হয়েছে, তা সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের নিন্দা করা উচিত, বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, স্বার্থান্বেষী সমালোচকরা এগুলিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে শাসক দলের অনুভূতি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উপর এই ধরনের ঘৃণাত্মক বক্তৃতার প্রভাবের উপর জোর দেওয়ার জন্য, 'গণহত্যা'-এর মতো শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঘটনাগুলির জন্য বর্তমান নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করাটা সমালোচকদের অভ্যাস হয়ে উঠেছে।
প্রাক্তন আমলারা আরও অভিযোগ করেছেন, এই সমালোচকরা হলেন - সমাজকর্মীদের একাংশ যাদের অনেকেই মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বামপন্থী বলে পরিচিত, কিছু প্রাক্তন অসামরিক এবং সামরিক আধিকারিক, যারা তাদের কর্মজীবনে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সেইসঙ্গে মিডিয়ার একাংশ। তারাই বর্তমান সরকার, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি লঙ্ঘন করেছে বলে, প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে তারা কার্যকরভাবে 'হিন্দুত্ব বিরোধিতা'র আড়ালে ক্রমশ 'হিন্দুবিরোধী' মনোভাব গ্রহণ করেছে। এই সলোচকদের দ্বিচারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই খোলা চিঠিতে।
কীরকম দ্বিচারিতা? চিঠিতে বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মের কেউ হেট স্পিচ দিলে এই সমালোচকরা সেগুলি 'সমস্ত ভারতীয়দের জন্য বিপদ' হিসাবে চিহ্নিত করে। কিন্তু, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিকভাবে যে অন্যায় হয়েছে, তার দাবিকে তারা 'তুচ্ছ' বলে খারিজ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস'এর বার্তাকে তারা উপহাস করে বলেছে, এটি শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের জন্য, সবার জন্য নয়। আমলারা প্রশ্ন করেছেন, যদি মুষ্টিমেয় কিছু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব দেশে হিন্দু রাজ স্থাপনের কথা বলেন, তাহলে কি প্রাক্তন জেনারেল, অ্যাডমিরাল, আইএএস, আইএফএস এবং সর্বোচ্চ পদের আইপিএস অফিসারদের দেশে সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন ধারণা তৈরি করা খুব দরকারি?
খোলা চিঠিটিতে দাবি করা হয়েছে, এটা ওই অফিসারদের চাকরি থেকে অবসরের পর, সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি এবং পুরষ্কার হিসাবে তারা যা চেয়েছিল, তা না পাওয়ার হতাশার প্রতিফলন। এর পিছনে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে? তারা সাফ বলেছেন, ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর, হঠাৎ করেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং ধর্মীয় হিংসার ঘটনা দেখা দেয়নি। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে, এই সমালোচকদের আরও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেওয়া উচিত।