সংক্ষিপ্ত

কাশ্মীরি পন্ডিত পুরান কৃষাণ ভাটের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা  কেন্দ্রের প্রশাসনিক গাফিলতিরই  নজির । তাই ভাটের বোনের  প্রকাশ্য বিবৃতি " হিন্দুরা কাশ্মীরে একেবারেই সুরক্ষিত নন।কোনো হিন্দুরই কাশ্মীরে থাকা উচিত নয় । "

শনিবার উপত্যকায় ফের কাশ্মীরি পন্ডিতের  মৃত্যু নিয়ে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ।   এমতাবস্থায় মৃত পন্ডিতের বোনের একটি বিবৃতি- সেই আগুনেই ঢাললো ঘি।রবিবার তিনি প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমকে  বলেন " হিন্দুরা কাশ্মীরে একেবারেই সুরক্ষিত নন।কোনো হিন্দুরই উচিত নয় কাশ্মীরে থাকা। "
 
শনিবার কাশ্মীরি পন্ডিত পুরান কৃষাণ  ভাটের  হত্যার কয়েক ঘন্টা পরে, সন্ত্রাসবাদী  সংগঠন "কাশ্মীর ফ্রিডম ফাইটারস", এই হামলার যাবতীয় দায়  স্বীকার করে নেয়।  তারা প্রকাশ্যে প্রেস রিলিজ করে বলে যে এই ঘটনা নাকি ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলাফল।  এমনকি ভবিষ্যতে যে এই ধরণের  ঘটনার  পুনরাবৃত্তি আবার ঘটাবেন তারা,  সেই ইঙ্গিতও দেন স্পষ্ট। তারপরও কাশ্মীরি হিন্দুদের সুরক্ষা- নিশ্চিতকরণের জন্য  কেন্দ্রের কোনোরকম কোনো তৎপরতা না দেখে , রবিবার প্রকাশ্যে এমন কথা বলতে কার্যত বাধ্য হন পুরান সিং ভাটের বোন নির্মলা । 

গত বছর অক্টোবর থেকেই কাশ্মীরি হিন্দুদের উপর অত্যাচারের  বিভিন্ন নজির গড়েছে  জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। এছাড়াও টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড, উপত্যকায় সংখ্যালঘু দমন, সন্ত্রাসবাদ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে  স্লোগান এবং  সম্প্রতি  অসহায় ভাট পরিবারের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাগুলি কোথাও শিউরে দেয় আমাদের। 

কি দোষ ছিল পুরান  কৃষাণ ভাটের ? উনি হিন্দু এটাই কি ওনার দোষ ? কেন ওনাকে মরতে হলো এমন বেঘোরে ? সূত্রের  খবর তার আপেল বাগানে নাকি নজর পড়েছিল জঙ্গিদের। তাই প্রতিদিনের মতো যখন তিনি আপেল বাগানে যাচ্ছিলেন তখনই  অতর্কিত গুলি চালিয়ে শেষ করে দেওয়া হয় তাকে। ৪১ বছরের স্ত্রী , ও তার দুই ছেলে মেয়েকে রেখে চিরদিনের মতো বিদায় নেন তিনি।  

এমন নৃশংষ ঘটনার প্রতিবাদেই গর্জে ওঠেন ভাটের বোন নিলাম , তিনি প্রকাশ্য বিবৃতিতিতে বলেন , "কাশ্মীর উপত্যকায় হিন্দুরা একেবারেই নিরাপদ নয়। এমনকি আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীরাও বলে যে তারা আমাদের রক্ষা করতে পারবেন না।সন্ত্রাসীবাদীরা যেভাবে তার আমার দাদাকে হত্যা করেছে,  ঠিক সেইভাবে সমস্ত  কাশ্মীরি পণ্ডিতকেই  তারা মেরে ফেলবে একদিন। উপত্যকায় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি সারাক্ষন  হিন্দুদের হত্যা করার সুযোগই  খোঁজেন।" তিনি আরও বলেন যে  কিছু সপ্তাহ আগেই সন্ত্রাসবাদীরা একটি স্কুলে ঢুকে পরে তিনজন হিন্দু শিক্ষককে মেরে ফেলার জন্য।  কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেদিন তারা স্কুলে উপস্থিত না থেকে বরাতজোরে প্রাণে বাঁচেন। "

শুক্রবার শেষবারের মতো তার দাদার সঙ্গে  কথা বলেন নিলাম। তার দাবি কথোপকথনে স্পষ্ট ধরা পড়ছিল যে তার দাদা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তার মানুষিক অবস্থা আন্দাজ করেই  তিনি তার দাদাকে উপত্যকা ছাড়ার পরামর্শও দেন।  কিন্তু তার দাদা বলেন যে আপেল বিক্রি করে সে  তার বাচাদের ভবিষ্যৎ পড়াশুনার ব্যবস্থা করতে চান আগে। 

পুরান কিষান ভাটের শোকস্তব্ধ পরিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমির শাহর কাছে কাশ্মীরি পন্ডিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানান।  তার সঙ্গেই পুরানের স্ত্রীর সরকারি চাকরির দাবিও জানান তারা। 

পুরানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রবিবার।  সদ্য পিতৃহারা পুরানের , সমপ্ত শ্রেনীতে পাঠরত  ছেলে ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ে ,হাপুস নয়নে কাঁদলেন শেষকৃত্যের সময়। ইনসাফ  বা নিরাপত্তা কোনোদিন কি পাবেন আর তারা জানতে এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। 

আরও পড়ুন দেশের ঐক্য ও সম্প্রীতির কথা ভেবে গোমাংস খাওয়া ছাড়তে পারেন মুসলিমরা - পরামর্শ প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের

আরও পড়ুন ৭৫টি ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ইউনিট লঞ্চ, মোদীর হাত ধরে নয়া পথের দিশারী ভারত