ভারত তার বিরল ধাতু রপ্তানি, বিশেষ করে জাপানে, বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। চীনের সরবরাহ হ্রাসের কারণে দেশীয় চাহিদা পূরণ এবং বাণিজ্যিক লড়াইয়ে শক্তিশালী হওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারত জাপানে তার বিরল ধাতু রপ্তানি বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। এ যাবৎ জাপানের সঙ্গে ১৩ বছরের চুক্তি ছিল। চিন থেকে ভারতে এই ধাতুর সরবরাহ বন্ধ করতে এবং দেশীয় চাহিদা পূরণ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন?
বিশ্বব্যাপী বিরল ধাতু উৎপাদনের বৃহত্তম দেশ চিন। এই ধাতুগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ি, উচ্চমানের ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু চিন এপ্রিল মাস থেকে এই ধাতুগুলির রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অনেক সংস্থা সমস্যায় পড়েছে। এটি বাণিজ্যিক লড়াইয়ে একটি বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
ভারতের নতুন পরিকল্পনা কি?
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, সরকারি সংস্থা IREL (ইন্ডিয়া রেয়ার আর্থস লিমিটেড)-কে বিরল ধাতু, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহৃত চুম্বক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নিওডিমিয়াম রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। IREL এ যাবৎ দেশীয়ভাবে এই ধাতু পরিশোধনের সুবিধা না থাকায় রপ্তানি করে আসছিল। কিন্তু এখন, চিন সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায়, IREL তার ধাতু ভারতেই রেখে পরিশোধনের সুবিধা বৃদ্ধি করতে চায়। এর জন্য চারটি খনিতে অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে।
জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক কি হবে?
২০১২ সালের চুক্তি অনুযায়ী, IREL জাপানের টয়োটা সুশো সংস্থাকে বিরল ধাতু সরবরাহ করে আসছে। জাপান এই ধাতু চুম্বক তৈরিতে ব্যবহার করে। ২০২৪ সালে, ১,০০০ টনেরও বেশি ধাতু জাপানে পাঠানো হয়েছে।
তবে, এই চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি দুই দেশের মধ্যে সরকারি চুক্তি। কিন্তু, জাপান বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়ায়, আলোচনার মাধ্যমে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে IREL চায়। জাপানের বাণিজ্য মন্ত্রক এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি।
ভারতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মজুদ: ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম বিরল ধাতুর মজুদ (৬.৯ মিলিয়ন টন) ধারণ করে। কিন্তু দেশীয়ভাবে চুম্বক উৎপাদন হয় না। চিন থেকে আমদানি: আমরা বেশিরভাগ চুম্বক চিন থেকে আমদানি করি। গত বছর ৫৩,৭৪৮ টন চুম্বক আমদানি করা হয়েছে। এগুলি গাড়ি, বায়ুকল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
নতুন উৎপাদন সুবিধা: পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প এবং প্রতিরক্ষা খাতে IREL ধাতু সরবরাহ করে। কিন্তু, এই ধাতু উত্তোলন এবং পরিশোধনের জন্য আমাদের এখনও বড় প্রযুক্তি নেই।
নিওডিমিয়াম উৎপাদন: ওড়িশায় IREL-এর একটি পরিশোধনাগার এবং কেরালায় একটি পরিশোধন বিভাগ রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ৪৫০ টন নিওডিমিয়াম উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে IREL, ২০৩০ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে।
অংশীদারদের খোঁজ: গাড়ি এবং ওষুধ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় চুম্বক উৎপাদনের জন্য একটি নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজছে IREL।
প্রণোদনা প্রকল্প: দেশীয় চাহিদা পূরণের জন্য, বিরল ধাতু পরিশোধন এবং চুম্বক উৎপাদন কারখানা স্থাপনকারী সংস্থাগুলিকে সরকার সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনাও করেছে। এই পদক্ষেপগুলি ভারতের অর্থনীতিকে উন্নত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর জন্য বিদেশের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

