ভারত বনাম পাকিস্তান: জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিল করার পাশাপাশি, ভারত পাকিস্তানে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ করতে পারে।

নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত সরকার সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিল করেছে। ভারত চুক্তি বাতিল করার সাথে সাথেই পাকিস্তানে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ওয়াঘা সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে। ভিসা নিয়ে ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে এবং ভারতীয় সেনারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। পেহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিও লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছিল। ভারত পাল্টা হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।

পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করার কথা ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলম নদীর পানি বন্ধ করার জন্য বর্তমানে পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকলেও, ভবিষ্যতে পাকিস্তান পানি পাবে না তা স্পষ্ট, যার ফলে পাকিস্তান ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বে তা নিশ্চিত। ভারত কেবল সিন্ধু নদীর পানিই নয়, আরও অনেক জিনিসপত্র রপ্তানি বন্ধ করতে পারে। যদি ভারত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থেই হাহাকার সৃষ্টি হবে এবং সমস্যার জালে আটকা পড়বে।

ভারত থেকে কোন কোন জিনিসপত্রের সরবরাহ?
ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের জন্য পাকিস্তান ভারতের উপর নির্ভরশীল। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ঔষধের কাঁচামালের জন্য ভারতের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সক্রিয় ঔষধ উপাদান সহ বিভিন্ন উন্নত চিকিৎসা পণ্য রয়েছে। ঔষধ তৈরির কাঁচামাল রপ্তানি বন্ধ করলে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ভারতের সাথে যুদ্ধ হলে পাকিস্তানে ঔষধের বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। সেনাদের চিকিৎসার জন্যও ঔষধের অভাবে পাকিস্তান হিমশিম খেতে পারে।

কাঁচা ঔষধের পাশাপাশি ভারত থেকে পাকিস্তানে জৈব ও অজৈব রাসায়নিক, কৃষি পণ্য, তুলা ও সুতা, চিনি, প্লাস্টিক এবং যন্ত্রপাতি রপ্তানি হয়। এগুলোর সরবরাহ বন্ধ হলে কৃষিক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ভারত যদি পাকিস্তানের সাথে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে শত্রু দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত পাকিস্তানের জন্য ভারতের প্রতিটি কঠোর সিদ্ধান্ত ধাক্কা হিসেবে আসছে।

ভারতের হামলা নিশ্চিত
২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া পেহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের উপর ভারতের হামলা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন স্বয়ং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। পেহেলগাঁও ঘটনার পর সোমবার এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‘সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের উপর ভারতের হামলা নিশ্চিত। এটি ঠেকানো সম্ভব নয় বলে সেনাবাহিনী সরকারকে জানিয়েছে। তাই সীমান্তে আমাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে আমাদের অস্তিত্বের জন্য কোনও হুমকি এলে আমরা পারমাণবিক হামলা চালাতেও প্রস্তুত’ বলে জানান আসিফ।

প্রথমে ঘটনায় তার কোনও ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছিল পাকিস্তান, কিন্তু হামলায় তার ভূমিকার স্পষ্ট প্রমাণ ভারতের হাতে আসার পর তারা নিরপেক্ষ দেশের তদন্তের কথা বলতে শুরু করে।

জানা গিয়েছে, ২২ এপ্রিল হামলার আগে ১-৭ এপ্রিল রেইকি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। একাধিক রিসর্টে রেইকি করেছিল। শেষ পর্যন্ত বেছে নেয় কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকা। ২২ এপ্রিল দুপুরে ৫-৬ জন জঙ্গি সেখানে হাজির হয়। দু-তিনটে দলে ভাগ হয়ে ৪০-৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ধর্মীয় পরিচয় দেখে টার্গেট করে হত্যা করা হয়। তাতে মৃত্যু হয় ২৫ জন পর্যটক ও ১ জন স্থানীয়ের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনেকে।

কাশ্মীরের বৈসারন উপত্যকা উপস্থিত ছিলেন কর্নাটকের একটি পরিবার। জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয় মঞ্জুনাথ রাওয়ের। জঙ্গিদের একজন মঞ্জুনাথ রাওয়ের স্ত্রী পল্লবীকে বলে ‘তোকে মারব না। যা মোদীকে গিয়ে বল।’

এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মহিলা পর্যটক পুলিশকে জানিয়েছিল যে, ‘বন্ধুকধারীরা তার হাতে বিয়ের চুড়া দেখে তার কাছে আসে, সন্দেহ করে যে তারা হিন্দু।’ আবার একজন বলেন, তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর দেখে তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়।