India Population Census: ২০২৬ সাল থেকে দেশজুড়ে শুরু হবে জনগণনার কাজ। কীভাবে এই কাজ শুরু করা হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা কেন্দ্রের। বিশদে জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ুন… 

India Population Census: দেশে কবে থেকে শুরু হবে জনগণনা এবং কীভাবে করা হবে এই জনগণনার কাজ সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সরকারি সূত্রে খবর, সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দেশে দুই ভাগে জনগণনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রথম পর্যায়ের জনগণনা শুরু হবে ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এবং দ্বিতীয় পর্বের জনগণনা শুরু হবে ২০২৭ সালের ১ মার্চ মধ্যরাত থেকে।

আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া জনগণনার যাবতীয় কাজ পুরোটাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, ডিজিটাল জনগণনার প্রথম ধাপে সংগ্রহ করা হবে সম্পদের তথ্য। জানা গিয়েছে, ভারতের আসন্ন এই জনগণনা হতে চলেছে দেশের ইতিহাসে প্রথম ডিজিটাল জনগণনা। এই জনগণনার প্রথম পর্যায়, যা হাউস লিস্টিং অপারেশন (HLO) নামে পরিচিত। তাতে বাড়ি, বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই ধাপে মূলত পরিবারগুলির সম্পদ, পারিবারিক আয়, বাসস্থান এবং সেখানে উপলব্ধ সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য নথিভুক্ত করা হবে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এবারই প্রথম জনগণনার প্রশ্নগুলির উত্তর ঘরে বসেই দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এই ডিজিটাল পদ্ধতির ফলে জনগণনা প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং দ্রুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। জনগণনার দ্বিতীয় ধাপ, অর্থাৎ 'জনসংখ্যা গণনা (Population Enumeration - PE)', প্রতিটি পরিবারের বাসিন্দাদের জনসংখ্যাগত, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার জাতিগত গণনাও জনগণনা প্রক্রিয়ার অংশ হতে চলেছে। গত এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছিলেন যে, আসন্ন জাতীয় জনগণনায় জাতিগত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই পদক্ষেপ দেশের সামাজিক চিত্র বুঝতে এবং নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাতীয় জনগণনা ২০২৭: নারী সংরক্ষণ বিল ও বিতর্কিত আসন পুনর্বণ্টনের পথ প্রশস্ত:-

২০২৭ সালের জনগণনার (Census) ঘোষণা নারী সংরক্ষণ বিল এবং বিতর্কিত আসন পুনর্বণ্টন (delimitation) প্রক্রিয়ার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে এই আসন পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণার ফলে বহু প্রতীক্ষিত নারী সংরক্ষণ বিলের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান দেয়। উল্লেখ্য, এই বিলটি পাস হলেও এর বাস্তবায়ন জনগণনা এবং পরবর্তী আসন পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

একই সঙ্গে, এই জনগণনা স্বাধীনতার পর থেকে স্থগিত থাকা বিতর্কিত 'ডিলিমিটেশন' বা সংসদীয় ও বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়াকেও পুনরুজ্জীবিত করবে। ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল, যাতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজ্যগুলি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে, এই পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বণ্টনের ফলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৭ সালের জনগণনা একদিকে যেমন নারী সংরক্ষণ বিলের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে, তেমনি এটি দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে, যা ভবিষ্যতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিধান সম্বলিত নারী সংরক্ষণ বিলের বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপের ওপর নির্ভরশীল। নতুন জনগণনা (Census) পরিচালনা এবং তার পরবর্তী আসন পুনর্বণ্টন (Delimitation) প্রক্রিয়া। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, এই বিলটি পাস হলেও এটি কার্যকর হতে সময় লাগবে।

আসন পুনর্বণ্টন হলো জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকাগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া। তবে, এই প্রক্রিয়াটি ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আইন দ্বারা ২০০০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে উৎসাহিত করা, যাতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজ্যগুলি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

পরবর্তীকালে, ২০০১ সালের ৮৪তম সংবিধান সংশোধনী আইন সরকারকে একটি রাজ্যের মধ্যে নির্বাচনী এলাকার আঞ্চলিক সীমানা যুক্তিযুক্ত করার অনুমতি দেয়, তবে কোনও লোকসভা বা রাজ্য বিধানসভার আসন সংখ্যা পরিবর্তন না করে। এটি ২০০১ সালের জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। একদিক থেকে, ৮৪তম সংশোধনী আইন এই স্থগিতাদেশকে ২০২৬ সালের পরবর্তী প্রথম জনগণনা না হওয়া পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এর অর্থ হলো, ২০২৬ সালের পরবর্তী জনগণনা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আসন পুনর্বণ্টন সম্ভব নয় এবং নারী সংরক্ষণ বিলও কার্যকর করা যাবে না।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জনগণনা অনুষ্ঠিত হলে, তবেই নারী সংরক্ষণ বিলের বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে। এটি দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতেও এই আসন পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের নির্বাচনী সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে।

Scroll to load tweet…

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।