সংক্ষিপ্ত
ওড়িশার উপকূলে চাঁদিপুরের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বায়ু সংস্করণের সফলভাবে পরীক্ষা করে ভারত। ডিআরডিও-র সূত্র জানিয়েছে ব্রহ্মোস একটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র।
বায়ুসেনার মুকুটে নতুন পালক। বুধবার ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ (successfully test-fired) হল। ওড়িশার উপকূলে চাঁদিপুরের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের (BrahMos supersonic cruise missile) বায়ু সংস্করণের (air version) সফলভাবে পরীক্ষা করে ভারত(India)। ডিআরডিও-র সূত্র জানিয়েছে ব্রহ্মোস একটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র। এটির একটি শক্তি প্রপঞ্চল বুস্টার ইঞ্জিন থাকে। প্রথম পর্যায়ে যা এটিতে সুপারসনিক গতি নিয়ে আসে। তারপর এটি থেকে পৃথক হয়ে যায় সেই ইঞ্জিন।
ডিআরডিও জানাচ্ছে এই মিশন বায়ুসেনার শক্তিতে নতুন মাইলস্টোন যোগ করবে। সূত্র জানায়, সকাল ১০.৩০ মিনিটে সুপারসনিক ফাইটার এয়ারক্রাফট সুখোই ৩০ এমকে-আই থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের এয়ার সংস্করণ পরীক্ষা করা হয়। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) সূত্র জানায়, এই উৎক্ষেপণটি এয়ার-সংস্করণ ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের ধারাবাহিক উৎপাদনের রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছে।
এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সচিব এবং ডিআরডিও-র চেয়ারম্যান জি সতীশ রেড্ডি বলেন, ডিআরডিও-র বিভিন্ন পরীক্ষাগার, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, পাবলিক সেক্টরের উদ্যোগ এবং ভারতীয় বায়ু সেনা (IAF) এই কঠিন ও জটিল মিসাইল উৎক্ষেপণের প্রতিটি পর্বে অংশ নিয়েছে। এটা টিম ওয়ার্ক। তাই এই উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই মিশনের সাফল্যে ডিআরডিও, ভারতীয় বায়ুসেনা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের প্রশংসা করেছেন বলে সূত্রের খবর।
ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভারত (DRDO) ও রাশিয়ার (NPOM) যৌথ উদ্যোগ। ডিআরডিও মঙ্গলবার ভার্টিকাল লঞ্চ শর্ট রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার মিসাইলের ফ্লাইট-পরীক্ষা করেছিল, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াবে। উল্লেখ্য, ব্রহ্মোস— ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ক্রুজ মিসাইলের গতি চিন্তায় রাখে ন্যাটো বাহিনীকেও। এমন সাংঘাতিক বেগে টার্গেটের দিকে ছুটে যায় ব্রহ্মোস যে রেডারে তার আভাস মিললেও ব্রহ্মোসকে মাঝ পথে রুখে দেওয়া কঠিন। ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে আগুন ঝরিয়েছে যে মার্কিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, সেই টোমাহক মিসাইলকেও গতিবেগে বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে ব্রহ্মোস।
১৯৮৭ সালে মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সেই সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল যে সব দেশ, তারাই এই সংগঠন গড়ে তোলে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের হাতে ছড়িয়ে পড়া রুখতেই ওই সংগঠনের জন্ম। ভারত সে সময় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা শুরু করে দিলেও, খুব একটা অগ্রগতি তখনও হয়নি। তাই ভারতকে এমটিসিআর-এর সদস্য হতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু গত দেড় দশকে মিসাইল টেকনোলজিতে ভারতের এত দ্রুত উত্থান ঘটেছে যে এমটিসিআর-এর সদস্য দেশগুলির অনেকের থেকেই এগিয়ে গিয়েছে ভারত।
নয়াদিল্লির অস্ত্রাগারে এত রকমের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য এতই বিধ্বংসী যে আমেরিকা, চিন, রাশিয়া ছাড়া অন্য যে কোনও দেশের পক্ষে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলির সঙ্গেই এঁটে ওঠা মুশকিল। ভারতের ব্রহ্মোস কিন্তু আমেরিকা এবং চিনকেও টেক্কা দিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে যত রকমের ক্রুজ মিসাইল রয়েছে, তার মধ্যে ব্রহ্মস সবচেয়ে দ্রুতগামী।