নতুন যুদ্ধজাহাজ তমাল ১ জুলাই, ২০২৫-এ রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। এটি ক্রিভাক শ্রেণীর অষ্টম যুদ্ধজাহাজ এবং তুশিল শ্রেণীর দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ। এতে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সহ আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি রয়েছে। 

নৌবাহিনী তাদের নতুন ও একাধিক গুপ্ত ব্যবস্থাপনা থাকা যুদ্ধজাহাজকে ১ জুলাই, রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে যোগ করতে প্রস্তুত, রবিবার এক সরকারি বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। যুদ্ধজাহাজের নাম তমাল। পশ্চিম নৌ কমান্ডের ফ্ল্যাগ অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ, ভাইস অ্যাডমিরাল সঞ্জয় জে সিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, সঙ্গে থাকবেন ভারত ও রাশিয়ার সরকার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। জাহাজটির নাম "তমাল" এবং এটি গত দুই দশকে রাশিয়া থেকে আনা ক্রিভাক শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজের অষ্টম জাহাজ, তমাল নিজেই তুশিল শ্রেণীর দ্বিতীয় জাহাজ, যা তাদের পূর্বসূরী, তলোয়ার এবং তেগ শ্রেণীর আধুনিক সংস্করণ, প্রতিটিতে তিনটি জাহাজ রয়েছে।

"তুশিল শ্রেণীর জন্য বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে ভারত গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেডে রাশিয়ার প্রযুক্তি ও নকশা সহায়তায় ত্রিপুট শ্রেণীর দুটি একই রকম যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে," এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে। যখন জাহাজের তৈরি শেষ হবে, তখন ভারতীয় নৌবাহিনী চারটি বিভিন্ন শ্রেণীর উপর একই রকম ক্ষমতা এবং সাধারণ উপকরণ, অস্ত্র এবং সেন্সর সহ দশটি জাহাজ চালাবে। মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে কালিনিনগ্রাদে স্থাপিত ওয়ারশিপ ওভারসিইং টিমের ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের একটি দল তমালের নির্মাণ কাজ ঘনিষ্ঠভাবে তদারকি করেছে। "নৌ সদর দপ্তরে, ওয়ারশিপ প্রোডাকশন এবং অ্যাকুইজিশনের নিয়ন্ত্রকের অধীনে জাহাজ উৎপাদন অধিদপ্তর প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে," বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে তমাল রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি বিদেশী উৎস থেকে আনা শেষ যুদ্ধজাহাজ, যদিও এটি কেন্দ্রের 'আত্মনির্ভর ভারত' এবং "মেক ইন ইন্ডিয়া" উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

"জাহাজটিতে ২৬ শতাংশ স্থানীয় উপাদান রয়েছে, সমুদ্র এবং স্থল উভয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ব্রহ্মোস দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা যাবে এই রণতরী থেকে। জাহাজটিতে তার পূর্বসূরীদের তুলনায় তার অস্ত্রাগারে উল্লেখযোগ্য আপগ্রেড রয়েছে, যেমন উল্লম্বভাবে উৎক্ষিপ্ত সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত ১০০ মিমি বন্দুক, নতুন যুগের EO/IR ব্যবস্থা মান ৩০ মিমি CIWS, ভারী টর্পেডো, জরুরি-আক্রমণ বিরোধী সাবমেরিন রকেট এবং নজরদারি এবং অগ্নি নিয়ন্ত্রণ রাডার এবং ব্যবস্থার সঙ্গে।"

বল বৃদ্ধিকারক গুলির মধ্যে রয়েছে এয়ার আর্লি ওয়ার্নিং এবং মাল্টি রোল হেলিকপ্টার, যা তমালের ডেক থেকে কার্যকর করতে পারে। জাহাজের যুদ্ধ ক্ষমতা এক নেটওয়ার্ক সেন্ট্রিক ওয়ারফেয়ার ক্ষমতা এবং একটি উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট দ্বারা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সর্বোচ্চ ৩০ নট গতিবেগে চলতে পারে। প্রচুরপরিমাণ ভার বহন করতে পারে।

যুদ্ধজাহাজের দলে ২৫০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে যারা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং কালিনিনগ্রাদের অত্যন্ত প্রতিকূল শীতকালীন পরিস্থিতিতে কঠোর স্থল এবং জলযান প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তমাল তার ব্যবস্থা, অস্ত্র এবং সেন্সর প্রমাণ করার জন্য তিন মাস ধরে ব্যাপক সমুদ্র পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বিবৃতি অনুসারে, জাহাজের নামটি দেবতাদের রাজা ইন্দ্র যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত পৌরাণিক তরবারির প্রতীক। জাহাজের মাস্কট 'জাম্ববান', ভারতীয় পুরাণের অমর ভাল্লুক রাজা এবং রাশিয়ান জাতীয় প্রাণী - ইউরেশীয় বাদামী ভাল্লুকের মিলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত। "জাহাজের তমাল দল সম্মিলিতভাবে নিজেদের 'দ্য গ্রেট বেয়ার্স' বলে গর্ব করে। তমাল দীর্ঘস্থায়ী ভারত-রাশিয়া সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের প্রমাণ, যা সময়ের পরীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। জাহাজের মূলমন্ত্র, 'সর্বদা সর্বত্র বিজয়', প্রতিটি মিশনে কার্যকরী উৎকর্ষতার প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনীর অবিচ্ছিন্ন প্রতিশ্রুতির প্রতীক," সরকারি বিবৃতি অনুসারে।

যুদ্ধজাহাজটির ওজন প্রায় ৩,৯০০ টন এবং ১২৫ মিটার লম্বা, এবং এটি ভারতীয় নৌ বিশেষজ্ঞ এবং রাশিয়ার সেভেরনোয়ে ডিজাইন ব্যুরোর সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে। জাহাজের স্থানীয় উপাদান ২৬ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং ভারতে তৈরি ব্যবস্থা ৩৩ তে দ্বিগুণ করা হয়েছে। তার অস্ত্র ক্ষমতা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "তমাল যুদ্ধ বিগ্রহের নবীনতম প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যার মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যা জাহাজ বিরোধী এবং স্থল-আক্রমণ ক্ষমতার জন্য, সারফেস নজরদারি রাডার কমপ্লেক্স এবং HUMSA NG Mk II সোনার যা সাবমেরিন বিরোধী অস্ত্র নিক্ষেপ কমপ্লেক্স সহ ভারতীয় উৎসের অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সেন্সর গুলির মধ্যে রয়েছে।"

উল্লেখযোগ্য ভাবে, জাহাজটিতে আধুনিক যোগাযোগ এবং তথ্য-সংযোগ ব্যবস্থা, নেভিগেশন উপকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রয়েছে, যা জাহাজটিকে নৌ কার্যক্রমের জন্য একটি শক্তিশালী সম্পদ বানিয়ে তোলে। কমিশন করার পর, তমাল পশ্চিম নৌ কমান্ডের অধীনে ভারতীয় নৌবাহিনীর 'সোর্ড আর্ম', পশ্চিম বহরতে যোগ দেবে। এটি কেবল ভারতীয় নৌবাহিনীর বর্ধমান ক্ষমতার প্রতীক হবে না, ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্বের সম্মিলিত শক্তির উদাহরণ ও হবে।

৯ ডিসেম্বর, INS তুশিল (F 70), একটি বহু-ভূমিকা গুপ্ত-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজ, কালিনিনগ্রাদের ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ করা হয়েছিল।