সংক্ষিপ্ত
- চিনের বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’-এর সবে মাসখানেক গড়িয়েছে
- আগের বার ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ভারত
- মাস খানেক পর আরও ৪৭টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করল দিল্লি
- ক্রমে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছে "পাবজি" গেম-এর ওপর
গত ২৯ জুন টিকটক, ইউসি ব্রাউজার, শেয়ার-ইট, উই-চ্যাট, ক্যামস্ক্যানারের মতো ৫৯টি জনপ্রিয় চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সে সময় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ দাবি করেছিলেন, ভারতের সুরক্ষা, সংহতি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আইনের ৬৯ক ধারায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে সময় লাদাখ সীমান্তে চিন এবং ভারতের মধ্যে সংঘাত ঘিরে উত্তেজনার আবহ ছিল তুঙ্গে। সেই আবহেই চিনের বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল ভারত। তার মাস খানেক গড়িয়েছে । গত এক মাসে ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাত খানিকটা থিতুও হয়েছে। এর মাঝেই ফের বেজিংকে ‘ধাক্কা’ দিল ভারত। চিনের বিরুদ্ধে ফের ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’ হেনেছে চলেছে মোদী সরকার। এবার নিষিদ্ধ হয়েছে ৪৭টি চিনা অ্যাপ। আর এই পরিস্থিতিতে এবার আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা "পাবজি" গেম-এর ওপর। চিনা যোগে বন্ধ হতে পারে এই গেম।
টেনসেন্টের বিপুল জনপ্রিয় অ্যাপ পাবজি ছাড়াও খাড়ার ঘা নামতে পারে ই-কমার্স অ্যাপ আলি এক্সপ্রেস, গানের অ্য়াপ রেসোর রাশের ওপর। বর্তমানে এদেশে প্রায় ২৭৫টি অ্যাপের মাথার ওপরেও ঝুলছে অনিশ্চয়তার ছায়া। দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই ২৭৫টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করতে পারে নয়াদিল্লি। যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় মোবাইল গেম লুডো ওয়ার্ল্ড।
সূত্রের খবর, চিনে রয়েছে এমন কোনো কোম্পানীর সার্ভার গুলিকেই নিষিদ্ধ করার তোড়জোড় চলছে। জনপ্রিয় মোবাইল গেম পাবজি চিনের সংস্থা টেনসেন্টের দ্বারা পরিচালিত। তাই সন্দেহের তালিকায় থাকছে এই গেম। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয় পাবজি কি আসলে চিনা অ্যাপ, এর মালিক কোন সংস্থা, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে সেকথা বলতে গেলে বলতেই হবে পাবজি চিন তৈরি করেনি। এটি বানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা পাবজি কর্পোরেশন। যার অতীতে নাম ছিল গিনো গেমস। এদের ইন্টারনাল গেম স্টুডিওটি বাজারে ব্লু হোল স্টুডিও নামে পরিচিত। এটি চলছে ক্রাফটন গেম ইউনিয়নের ভর্তুকিতে। দক্ষিণ কোরিয়ারারই সিওনগনামে স্থিতি এই ক্রাফটন গেম ইউনিয়ন শুধু পাবজিই নয় এনমাস স্টুডিও, ডিলিউসান স্টুডিও, রেড সাহারা স্টুডিও নামক সংস্থাগুলিকেও ভর্তুকি দিয়ে সাহায্য করে। এরাই বিশ্বমানের একাধিক গেম তৈরি করেছে। এককথায় গেমিং দুনিয়ার ঈশ্বর বলতে এদেরকেই বোঝায়। এভাবে দেখতে গেলে চিনের সঙ্গে পাবজির কোনও যোগ চোখে পড়ছে না। তাহলে ভারত সরকার কেন পাবজিকে নিষিদ্ধ করার পথে এগোচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। আর এখানেই রয়েছে আসল খেলা।
ব্লু হোল স্টুডিও সংস্থার ১.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে চিনা টেক জায়ান্ট টেনসেন্টের কাছে। ২০১৭ সালে চিনেই পাবজি নিষিদ্ধ হয়। এরপরেই আসরে নামে টেনসন্ট। তাঁরা পাবজির একটি চিনা সংস্করণ তৈরি করার প্রস্তাব নিয়ে আসে। ২০১৮-এর মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় পাবজির মোবাইল সংস্করণ পাবজি মোবাইল। টেনসেন্টের লোগোও রয়েছে তাতে। ফলে পাবজি মোবাইলের চিন যোগ নেহাত কম নয়। আর এখানেই অনেকেই পাবজি এবং পাবজি মোবাইলের মধ্যে ফারাকটা গুলিয়ে ফেলেন। কারণ পাবজি মোবাইলে চিনা যোগ নিবিড়। এদেশের তরুণ প্রজন্মের মোবাইলে মোবাইলে বিপুল বেগে ঘুরছে পাবজির চিনা সংস্করণটি।
আরও পড়ুন:রামমন্দির বানাতে দেবেন সোনার ইট, সম্প্রীতির বার্তা এবার স্বয়ং বাবরের উত্তরাধিকারীর
২০১৭ সালে চিনের একটি আইন অনুাযায়ী,চিনের সমস্ত প্রযুক্তি সংস্থা চিনের সরকারের মালিকানাধীন। এই আইন বলছে, সরকার চাইলে এই তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থা থেকে তথ্য নিতে পারে। আর সেই মর্মেই কপালে ভাঁজ পড়েছে দিল্লির। চিনের সরকারী মালিকানাধীন সংস্থা চিনের সরকারকে তথ্য পাচার করছে কি না , তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে দিল্লি। সেই কারণেই চিনের সংস্থা শাওমি, টেনসেন্ট, বাইটডান্স বিপদে রয়েছে ভারতে। এমনকি সফ্টওয়্যাল ডেভেলপার সংস্থা মেইটু, এলবিই টেক, সিনা কর্প ঘিরেও আশঙ্কার মেঘ জমছে। অন্যদিকে, পাবজি -র মালিকানা আংশিকভাবে চিনের। সেই কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পাবজি ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারে ভারত সরকার।