সংক্ষিপ্ত
তাবড় বহুজাতিক সংস্থাগুলি যে হারে কর্মী ছাঁটাই করছে, সেই হারের একেবারে অর্ধেকেরও কম কর্মী নতুন করে নিয়োগ করা হচ্ছে। দেখা গেছে, কর্মী নিয়োগ করার সময়, মাইনে যেমন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই, নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারেই স্লথ করে দিচ্ছে বহু নামজাদা সংস্থা।
বাৎসরিক আয়ের হার কমে গিয়েছিল অনেক আগেই। চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের পরিমাণও হয়ে উঠেছে সাংঘাতিক। এবার চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেই কড়া হাতে কাটছাঁট শুরু করেছে ভারতের বড় বড় সংস্থাগুলি। ২০২২-এর অর্থবর্ষ থেকেই দেখা গিয়েছিল যে, দেশের তাবড় বহুজাতিক সংস্থাগুলি যে হারে কর্মী ছাঁটাই করছে, সেই হারের একেবারে অর্ধেকেরও কম কর্মী নতুন করে নিয়োগ করা হচ্ছে। দেখা গেছে, কর্মী নিয়োগ করার সময়, মাইনে যেমন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই, নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারেই স্লথ করে দিচ্ছে বহু নামজাদা সংস্থা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শুরুটাও চলেছে একেবারে মন্দায়। অ্যামাজন, ফেসবুকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির মতো কর্মী ছাঁটাই করেছে ভারতীয় আইটি সংস্থাগুলিও। মাইনের হার কমিয়ে দিলেও কর্মীদের অন্য কোম্পানিতে কাজ করে বাড়তি ইনকাম করা, অর্থাৎ 'মুনলাইটিং'-এর বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে আইটি সংস্থাগুলি। এই আবহে একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের তিনটি বড় আইটি সংস্থা - টিসিএস, ইনফোসিস এবং এইচসিএল টেক-এ নিয়োগের হার কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। যেখানে বিগত বছরগুলিতে গড়ে এই তিনটি সংস্থা মিলিয়ে প্রায় ১.৯৭ লাখ কর্মী নিয়োগ করত, সেখানে গত অর্থবর্ষে তিন সংস্থা মিলিয়ে কর্মী নিয়োগ হয়েছে মাত্র ৬৮ হাজার ৮৮৬।
বিগত অর্থবর্ষে খুবই কম লাভের মুখ দেখেছে এই সংস্থাগুলি। ত্রৈমাসিক রিপোর্ট বলছে, একেবারেই দৈন্য দশায় গিয়ে ঠেকেছে সংস্থার আর্থিক ভাঁড়ার। এই আবহে কম কর্মী নিয়োগ করে আর্থিক 'বোঝা' থেকে মুক্তি পেতে চাইছে এই ৩ সংস্থা। এই গোটা পরিস্থিতির সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্বের তাবড় ব্যাঙ্কগুলির পতনের ঘটনা। সম্প্রতি ক্রেডিট সুইস ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়েছে। মার্কিন সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কও সর্বস্ব খুঁইয়েছে। তার ওপর বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন মন্দার কালো মেঘ। এই আবহে কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় বহুজাতিক সংস্থা। গুগলের মতো 'কর্মচারী বান্ধব' সংস্থা নিজেদের নীতি বদল করে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছে। বিশ্ব জুড়ে আইটি সেক্টরে কর্মসংস্থানের আকাল দেখা দিয়েছে। ভারতেও অবস্থা প্রায় একই রকম।
গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে কর্মী নিয়োগের সবচেয়ে করুণ দৃশ্য দেখা গেছে ভারতে। নিয়োগের ২০২১-২২ অর্থবর্ষের তুলনায় গত ত্রৈমাসিকে ভারতের তিন বড় সংস্থা ৯৮.৭ শতাংশ কম কর্মী নিয়োগ করেছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যেখানে টিসিএস মোট নিয়োগ করেছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৫৪৬ জনকে, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তারা নিয়োগ করেছে মাত্র ২২ হাজার ৬০০ জনকে। এদিকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে টিসিএস নিয়োগ করেছিল ৫৪ হাজার ৩৯৬ জনকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যাটা কমে হয়েছে ২৯ হাজার ২১৯। এইচসিএল-এর অবস্থাটাও শোচনীয়। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সংস্থাটি নিয়োগ করেছিল ৩৯ হাজার ৯০০ জনকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে গিয়ে এই সংস্থা নিয়োগ করেছে মাত্র ১৭ হাজার ৬৭ জনকে। এদিকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে এই তিন সংস্থা সম্মিলিত ভাবে নিয়োগ করেছিল ৬৮ হাজার ২৫৭ জনকে। সেখানে গত ত্রৈমাসিকে এই সংস্থাগুলি নিয়োগ করেছে মাত্র ৮৮৪ জনকে।
টিসিএস-এর ক্ষেত্রে গত ১২ মাসের 'অ্যাট্রিশন রেট' অর্থাৎ, কর্মীদের সংস্থা ছাড়ার হার বেড়েছিল ২১.৫ শতাংশ। তবে গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে সেই হার কমে ২০.১ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে অবশ্য সংস্থা ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে ৪৪ হাজার ফ্রেশারকে কাজে নিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। এদিকে চলতি অর্থবর্ষে কত সংখ্যক ফ্রেশার নেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইনফোসিস কর্তারা। গত ত্রৈমাসিকে সংস্থার অ্যাট্রিশন রেট ছিল ২০.৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকের তুলনায় তা ৪ শতাংশ কম। মনে করা হচ্ছে, অন্য সংস্থাগুলিতে কর্মী নিয়োগ কমে যাওয়ায় সংস্থা ছাড়ার হিড়িকও কমেছে কর্মীদের মধ্যে।
আরও পড়ুন-
আরও স্মার্ট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পড়াশোনা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যোগ হচ্ছে নতুন বিষয়
সদ্য চালু হয়েই বিতর্কের মুখে কেরলের ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’, ট্রেনে সাঁটানো হল কংগ্রেস সাংসদের ছবি