সংক্ষিপ্ত
- পাকিস্তানের কাশ্মীর প্রীতি কেবল মাত্রই রাজনৈতিক চাল
- কাশ্মীরের অবস্থা অধিকাংশ পাকিস্তানি প্রদেশের থেকে ভালো
- দিনের আলোর মত স্পষ্ট কাশ্মীরের অনুন্নয়নের তত্ত্ব অন্তঃসারশূন্য
- কাশ্মীরে অশান্তির মূলে রয়েছে সরাসরি পাকিস্তানি সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত
১৯৭১ সাল। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী নাগরিকদের ওপর চরম অত্যাচার নামিয়ে এনেছে খান-সেনা। শরণার্থীর ঢল সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তানের জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান বারংবার সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে। এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে 'ম্যাডাম' গান্ধী নির্দেশ দিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সঙ্ঘাতে যাওয়ার জন্য। তারপরের ঘটনা ইতিহাস। মুক্তির দশকের প্রথম বছরেই মুক্তিলাভ করল পূর্ব পাকিস্তান। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেল নতুন একটি দেশ- বাঙালির রক্তে রাঙা বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সৃষ্টির ফলে যে শুধুমাত্র কয়েক কোটি বাঙালি মুক্তি লাভ করেন তা নয়, পাকিস্তানের আয়তন প্রায় অর্ধেকে পরিণত হয়। এর প্রভাব পড়ে সে দেশের অর্থনীতিতে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত সেই ক্ষত আজও বহন করে চলেছে পাকিস্তান। সেই মুহূর্ত থেকে প্রতিশোধ স্পৃহায় নির্দেশিত হতে থাকে তাঁদের 'ইন্ডিয়া-পলিসি'। মূলত আইএসআই নির্দেশিত এই পলিসির মূল লক্ষই হল ভারতের অখণ্ডতাকে নষ্ট করা। যাতে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। এর ফলে পাক মদতপুষ্ট 'এলিমেন্ট'দের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় পঞ্জাব এবং কাশ্মীরে আগুন জ্বলতে শুরু করে ৮০র দশকের মাঝ থেকে। পাঞ্জাবে সেই আগুন নেভানো সম্ভব হলেও আজও ভূস্বর্গে জ্বলছে সেই আগুন, যার লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আপাত নিরিহ রাজ্যের মানুষগুলি।
পাকিস্তানের অভিযোগ অনুন্নয়নের তাড়নায় কাশ্মীরের যুব সমাজ হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র। কিন্তু তথ্য বলছে অন্য কথা। ২০১৮-২০১৯ সালে জম্মু এবং কাশ্মীরের মোট জিডিপির পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ান মার্কিন ডলার, যার পরিমাণ পাকিস্তানের তিনটি প্রদেশের ( বালুচিস্তান,পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট বাল্টিস্তানের ) মোট জিডিপির প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়াও তথ্য অনুযায়ী কাশ্মীরের মোট জিডিপি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের সমান। প্রসঙ্গত খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের মোট জনসংখ্যা কাশ্মীরের প্রায় তিনগুন। এই তথ্যগুলি থেকেই স্পষ্ট যে পাকিস্তানের কাশ্মীরপ্রীতি কেবল মাত্রই একটি কূটনৈতিক চাল, যার মাশুল গুনে চলেছেন দুই দেশের সাধারণ মানুষ।
ভারতের তরফ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয় যে কাশ্মীরে অশান্তির মূলে রয়েছে সরাসরি পাকিস্তানি সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত। প্রতিবারই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে পাক সরকার। কিন্তু তবুও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রোজ চলছে পথভ্রষ্ট কাশ্মীরী যুবকদের মগজ ধোলাই। রোজ তৈরি হয়ে চলেছে নতুন নতুন বুরহান ওয়ানি। যেই মেধা দেশের উন্নতিকল্পে সক্রিয় ভাবে যোগদান করতে পারত, তারাই অবাস্তব এক আবেগের তাড়নায় হয়ে উঠেছে বিচ্ছিন্নতাকামী । পাকিস্তানের সঙ্গে এই ছায়া-যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থব্যায় হচ্ছে ভারতের, যা অন্য কোনও ক্ষেত্রে ব্যায় করলে আরও অগ্রগতির পথে হাঁটা সম্ভব। কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই ৩৬৫ দিন অদৃশ্য এক শত্রুর মোকাবিলা করতে হচ্ছে উপত্যকায়, কাফন খুড়তে হচ্ছে নিজেরই দেশের তরুণ তাজা প্রাণের।