সংক্ষিপ্ত

২০২০ সালে, ১৩টি দেশের ১৩টি নাম সহ ১৬৯টি নামের একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এর আগে ৮টি দেশ ৬৪টি নাম দিয়েছে। 

প্রতি বছর, একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। তা আছড়ে পড়ে উপকূলবর্তী এলাকায়। কখনও ওডিশা, কখনও বাংলা, কখনও বা আরব সাগরের তীরের বিভিন্ন রাজ্য। কোনও অঞ্চলের উপর আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়, তছনছ করে দেয় সেই এলাকাকে। এইসব ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে বেশ অবাক হন মানুষ। কার দেয় সেই নাম, কীভাবেই বা এক একটা ঘূর্ণিঝড়ের নাম বেছে নেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক।  জেনে নিন অশনি থেকে আমফান বা যশ থেকে আয়লা-কীভাবে নাম পায় এই সব তান্ডব চালানো ঘূর্ণিঝড়। 

ঘূর্ণিঝড় অশনি - শ্রীলঙ্কার দেওয়া একটি নাম যার অর্থ সিংহলিতে 'ক্রোধ' - রবিবার সকালে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল এবং পূর্ব উপকূলের দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে। ফের সেই নামকরণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীনস্থ সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) অনুসারে, একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানে বা বিশ্বজুড়ে এক সময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এবং সিস্টেমগুলি এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে পারে। তাই, প্রতিটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়কে যাতে আলাদা করে শনাক্ত করা যায় এবং বিভ্রান্তি এড়ানো যায়, তাই একটি নাম দেওয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার মূল উদ্দেশ্য এর অগ্রগতি সম্বন্ধে সচেতন করা। একই সঙ্গে একই সমুদ্রে একাধিক ঝড় থাকলে তৈরি হলে তা চিহ্নিত করার সমস্যা দূর হয় নামকরণের মাধ্যমে। এছাড়াও কোনও ঝড় আসছে, তা সহজে মনে রাখা যায়। সাধারণ মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া।

১৯৫৩ সাল থেকে, আটলান্টিক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন সেন্টার দ্বারা প্রস্তুত করা তালিকা থেকে। শুরুতে ঝড়ের নামকরণ করা হয়েছিল নির্বিচারে। ১৯-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে, ঝড়ের জন্য মেয়েলি নাম ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা পরবর্তীতে আরও সংগঠিত এবং দক্ষ সিস্টেমের জন্য একটি তালিকা থেকে ঝড়ের নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, WMO তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী মোট ১১ টি সংস্থা (৬ টি রিজিয়নাল স্পেশালাইজড মেটেরোলজিক্যাল সেন্টার – RSMC এবং ৫ টি রিজিয়নাল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সেন্টার – TCWC) ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। ৬ টি RSMC এর মধ্যে একটি হল ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর সহ উত্তর ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে ১৩ টি (২০০৪ সাল থেকে ছিল ৮ টি, ২০১৮ সালে আরও ৫ টি দেশ যুক্ত হয়) দেশের সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটি। প্রথম ৮ টি দেশ হল বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। পরে যুক্ত হওয়া ৫ টি দেশ হল ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ইয়েমেন।

কীভাবে নামকরণ করা হয়

প্রস্তাবিত নামগুলি যেন কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ হয়। এছাড়াও নাম এমনভাবে পছন্দ করা হবে যেন পৃথিবীর কোন জনগোষ্ঠীর ভাবনায় আঘাত না করে। নামের মধ্যে রুক্ষতা এবং নির্মমতা যেন খুব বেশি প্রকাশিত না হয়। সহজে উচ্চারণ করা যায় অথচ সংক্ষিপ্ত এমন নাম হতে হবে।
নামে সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকবে। প্রস্তাবিত নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা দিতে হবে। উত্তর ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।

২০২০ সালে, ১৩টি দেশের ১৩টি নাম সহ ১৬৯টি নামের একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এর আগে ৮টি দেশ ৬৪টি নাম দিয়েছে।
ভারত থেকে যে নামগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে গতি, মেঘ, আকাশ। অন্যান্য নাম যেগুলি আগে ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে অগনি, হেলেন এবং ফনি; এবং পাকিস্তান থেকে লায়লা, নার্গিস ও বুলবুল।

আরও পড়ুন, ঝঞ্জামেঘ সত্ত্বেও কেন এড়িয়ে গেল না অণ্ডালগামী বিমান ? ওয়েদার রেডারই কি পাইলটকে ভূল পথে নিয়েছে

আরও পড়ুন, 'যাবজ্জীবন মানে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাবাস', খুনের মামলায় স্পষ্ট করল এলাহবাদ হাইকোর্ট

আরও পড়ুনভয়ঙ্কর হতে পারে ঘূর্ণিঝড় অশনি-র তাণ্ডব, মাত্র ৬ ঘণ্টাতেই সরে গেছে ১৬ কিলোমিটার

অশনির পর যে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে তার নাম হবে সিত্রং, থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম। ভবিষ্যতে যে নামগুলি ব্যবহার করা হবে তার মধ্যে রয়েছে ভারতের ঘূর্ণি, প্রবাহ, ঝড় এবং মুরাসু, বিপর্যয় (বাংলাদেশ), আসিফ (সৌদি আরব), দিকসাম (ইয়েমেন) এবং তুফান (ইরান) এবং শক্তি (শ্রীলঙ্কা)।