সংক্ষিপ্ত

  • করোনাভাইরাস দ্বিতীয় তরঙ্গ বিশাল আকার নিচ্ছে 
  • পার্থক্য রয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্যে 
  • করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ 
  • পরামর্শ দিয়েছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের কথায় শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ। কিন্তু কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের? তারই উপায় জানিয়েছে ভারতের ল্যানকেট কোভিড ১৯ কমিশন। গোটা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণ মোকালিবার একগুচ্ছ টিপস দিয়েছেন। টাস্ট ফোর্সের সদস্যরা জানিয়েছেন মাস্কের ব্যবহার ও ভিড় এদিয়ে চলা অত্যান্ত জরুরি। 

প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গে ফারাকঃ
কমিশনের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সঙ্গে দ্বিতীয় তরঙ্গের কিছু পার্থক্য রয়েছে। সেটা হল করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছেছিল। সেই সময় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ৮০ হাজারে পৌঁছাতে প্রায় ৪০ দিন সময় নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে গিয়ে করোনা আক্রান্তের দৈনিক পরিসংখ্যান ৮০ হাজারে পৌঁছেছিল। সেপ্টেম্বরে অর্থাৎ প্রায় ৮৩ দিন পরে তা শীর্ষে পৌঁছেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ করোনা আক্রান্তই উপসর্গবিহীন আর উপসর্গ থাকলেও তা খুবই সামান্য। আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। 

ভারতে কত দিন স্থায়ী হবে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ, আরও কী ভয়ঙ্কর হবে মহামারি ...

আক্রান্তের সংখ্যাঃ 
টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী  চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল-এই তিন মাসে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি ছিল। সেখানে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও বেশি ছিল। আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ শতাংশেরও বেশি। মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত ও পঞ্জাবে  আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। গোটা দেশে নমুনা পরীক্ষায় ২.৮ শতাংশই পজেটিভ পাওয়া গেছে। 


সংক্রমণ রুখতে জরুরি পদক্ষেপঃ 
দ্রুতাতার সঙ্গে টিকা প্রদান করতে হবে। প্রতিদিন পাঁচ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪৫ বছরের বেশি বয়স্কদের টিকা প্রদানের কর্মসূচি চলছে। গত ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২৯ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিরা প্রদান করা হয়েছে। টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা জানিয়েছেন টিকা প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট বয়সের শহরু দরিদ্র মানুষকে প্রথম টিকা দেওয়া জরুরি। সরকারি বেসরকারি অফিসগুলিতেও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

মহামারির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কুম্ভ স্নান, পরিণত হচ্ছে করোনাভাইরাসের হটস্পটে

বর্তমানে দেশে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকেই জরুরি ব্যবাহরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি প্রতিষেধকেরই ৭০-৮০ মিলিয়ন ডোজ উৎপাদন করে প্রতি মাসে। যার ১০০ শতাংশই দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা জরুরি বলেও   টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা পরামর্শ দিয়েছেন। টিকার সরবরাহ ও মজুত নিয়ে একটি স্পষ্ট ছবি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির কাছে থাকা অত্যন্ত জরুরি। 


ওষুধ ও ভ্যাকসিন ছাড়া করোনার মোকাবিলাঃ 
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। করোনাভাইরাস সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজার বা কিছু সময় অন্তর হাতধোয়ার বিষয়ে সচেতনকতা বৃদ্ধি করা জরুরি। নাগরিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে আগামী ২ মাসের জন্য বৃহত্তম জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা অত্যন্ত জরুরি। একটি স্থানে ১০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত না হওয়ায় শ্রেয় বলেও মনে করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে টেস্টিং ও ট্র্যাকিং বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন করতে হবে আক্রান্তের সংস্পর্শে আশা ব্যক্তিদেরও। 

স্কুল কলেজের জন্য সতর্কতাঃ 
স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের টিকাকরণ অত্যান্ত জরুরি।তবে এখনই স্কুল না খোলাই শ্রেয়। টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা মনে করেন চলতি বছর জুলাই মাস থেকে স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া যেতে পারে। 

ভ্রমণ নিয়ে সতর্কতাঃ 
বিদেশ থেকে এলে কমপক্ষে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা জরুরি। আট দিনের মাথায় আরটি পিসিআর টেস্ট করানো জরুরি। দেশের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ও একই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। অভিবাসী বা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে বা কর্মস্থলে পাঠানোর জন্য রাজ্যসরকারগুলিকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে মাস্ক বিলি, নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। 

পরবর্তী দলাই লামা কে ও কী ভাবে হবে নির্বাচন, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু চিন-ভারত-আমেরিকার মধ্যে ...

করোনার রূপ পরিবর্তনঃ 
সংক্রমণের সংখ্যা বাড়াতে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তন কতটা ভূমিকা নিয়েছে তাও পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান করোনাভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে। আর সেইকারণেই এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়েছে।


স্বাস্থ্য পরিষেবাঃ 
গতবছর থেকেই মরামারি শুরুর সময় থেকেই দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির বিরাট কোনও উন্নতি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলির ওপর চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ছে স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপরেও। আর সেই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে ও তা মজুত না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

আর্থনীতিক কার্যকলাপঃ
অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর না হওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জাতীয় স্তরে কঠোর লকডাউন না ডাকার সুপারিশ করা হয়েছে। লকডাউনে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমস্যায় পড়তে হয় দিন মজুর, শ্রমিকদের। তবে কর্মস্থলে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  


দেশের বিশিষ্ট কুড়ি জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই টাস্ক ফোর্স। সদস্যদের তালিকায় রয়েছেন তিন জন বাঙালিও। তাঁরা হলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের সদস্য মলয় ভট্টাচার্য। নতুন দিল্লির সেন্টার ফল রিসার্টের সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় ও জীষ্ণু দাস।