সংক্ষিপ্ত

  • ইসরো প্রধান কে শিভন
  • দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি
  • নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ইসরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্বে
  • চন্দ্রাভিযান ২ অভিযানের প্রধানও ছিলেন তিনি

স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম নিখোঁজ হওয়ার পরেই ইসরো প্রধান কাইলাসাভাদিভু শিভনকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। সেই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এ হেন ইসরো প্রধানের জীবনকাহিনিও অনুপ্রেরণা জোগানোর মতোই। কৃষক পরিবারের সন্তান সিভন সাফল্যের নানা ধাপ পেরিয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। 

একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, একসময়ে ক্ষেতে খালি পায়ে নিজের কৃষক বাবার সঙ্গে কাজ করেছেন কে শিভন। সাফল্যের নানা সিঁড়ি পেরিয়ে সেই তিনি আজ ইসরোর প্রধান। যে মানুষটি নিজের জীবনে প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে এমন সাফল্য পেতে পারেন, তাঁর নেতৃত্বে ইসরো চাঁদকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! ইসরোর চেয়ারম্যান শিভন চন্দ্রযান- ২ অভিযানের প্রধানও ছিলেন।

আরও পড়ুন- চোখের জল বাঁধ ভাঙল ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনের, ভরসা জোগালেন প্রধানমন্ত্রী

আরও পড়ুন- শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা, চাঁদের কাছে গিয়েও হারিয়ে গেল বিক্রম

সিভনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে অর্থের অভাবে তাঁর ভাই এবং দুই বোন উচ্চশিক্ষা শেষ করতে পারেননি। ফলে, পরিবারে সিভনই প্রথম স্নাতক। ছোটবেলায় একজোড়া চটি কেনারও সামরর্থ্য ছিল না সিভনের। 

তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী জেলার সারাক্কাভিলাই গ্রামে একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শিভন। স্থানীয় একটি তামিল স্কুলেই পড়াশোনা শুরু তাঁর। এর পরে নাগারকয়েলের এসটি হিন্দু কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ১৯৮০ সালে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি। ১৯৮২ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন শিভন। ২০০৬ সালে আইআইটি বম্বে থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করেন তিনি। 

শিভন নিজেই জানিয়েছেন, কলেজে পড়ার সময়ও বাবার সঙ্গে ক্ষেতে চাষবাষের কাজ করতেন তিনি। ইসরোর চেয়ারম্যানের কথায়, 'আমি যখন কলেজে পড়তাম, বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতে হতো। সেই কারণেই বাবা আমাকে বাড়ির কাছাকাছি একটি কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু যখন আমি স্নাতক পর্যায়ে অঙ্কে একশো শতাংশ নম্বর পেলাম, তখনই বাবা মত বদল করেন।' কলেজ জীবনও ধুতি পরেই কাটাতে হয়েছে সিভনকে। মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হওয়াার পরেই প্রথম প্যান্ট পরেন তিনি। 

১৯৮২ সালে ইসরোয় যোগ দেওয়ার পর থেকে ভারতের প্রায় প্রতিটি রকেট প্রোগ্রামের অংশ ছিলেন শিভন।  ২০১৮ সালে ইসরোর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের প্রধান ছিলেন তিনি। পিএসএলভি, জিএসএলভি-র মতো লঞ্চ ভেহিক্যাল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে ইসরো-তে 'রকেট ম্যান' হিসেবেও ডাকা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে ইসরো যে বিশ্বরেকর্ড করেছিল, তাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শিভনের। 

তবে রকেট নিয়েই তাঁর কাজের জগৎ হলেও অবসর সময়ে তামিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনতে ভালবাসেন শিভন। এর পাশাপাশি বাগান করার শখও রয়েছে তাঁর। রাজেশ খন্না এবং শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত 'আরাধনা' তাঁর প্রিয় ছবি। সিভন জানিয়েছেন, একসময়ে তিরুবন্তপুরমে হরেক রকমের গোলাপ গাছ লাগাতেন নিজের বাড়ির বাগানে। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে এসে ইসরোর দায়িত্ব নেওয়ার পরে আর সেভাবে বাগান করার সময় পান না তিনি।