দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়ে বিজেপি যখন খুশি, তখন হঠাৎই মহারাষ্ট্র সরকারে সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জোটসঙ্গী শিবসেনার সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে খবর। 

মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন মহাযুতি জোটের অভ্যন্তরে টানাপোড়েন তীব্র হচ্ছে। নতুন বিতর্কের সূত্রপাত ২০ জন শিবসেনা বিধায়ক- সহ বেশ কয়েকজন নেতার নিরাপত্তাবলয়ে কাটছাঁট করা নিয়ে। এই সিদ্ধান্তে শিবসেনা প্রধান ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে মহারাষ্ট্রে শুধু শিবসেনার মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতাদেরই নয়, ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গী বিজেপি, এনসিপি-র মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতাদেরও নিরাপত্তাব্যবস্থায় বদল আনা হয়েছে। মহারাষ্ট্র পুলিশের নতুন ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী, শুধু মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ এবং দুই উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে ও অজিত পাওয়ার জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পাবেন। ৩৩ জন মন্ত্রী এবং ৬ জন প্রতিমন্ত্রী ওয়াই প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পাবেন। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তাবলয়ে কাটছাঁট করা হয়েছে।

সব দলের জন্যই সমান ব্যবস্থা

২০২২ সালে শিবসেনায় শিন্ডের বিদ্রোহের পর মহারাষ্ট্র সরকার ৪৪ জন শিবসেনা বিধায়ক এবং ১১ জন সাংসদকে ওয়াই ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দিয়েছিল। কিন্তু এখন এই বিধায়কদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে অথবা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের দাবি, সাম্প্রতিক নিরাপত্তা বিষয়ক পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পর মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শুধু শিবসেনা বিধায়করাই নন, বিজেপি এবং এনসিপি-র বেশ কয়েকজন নেতার নিরাপত্তাও প্রত্যাহার বা হ্রাস করা হয়েছে। তবে শিবসেনা বিধায়কদের নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া বা তুলে নেওয়া নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে না পেরে ক্ষুব্ধ শিন্ডে?

শিন্ডে গোষ্ঠীর ক্ষোভ শুধু নিরাপত্তা প্রত্যাহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মুখ্যমন্ত্রী পদ না পাওয়া নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে।

  • রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষে স্থান দেওয়ার জন্য নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে।
  • নাশিক এবং রায়গড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক।
  • নাশিকে ২০২৭ সালে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এই জেলাগুলির দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
  • শিন্ডে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলার পর্যালোচনা বৈঠক বয়কট করেছেন এবং কয়েকদিন পর নিজেই একটি পৃথক বৈঠক করেছেন।

বিজেপি-কে কটাক্ষ বিরোধীদের

শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)-র নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এই পরিস্থিতিতে 'এক্স' হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন। তবে, বিজেপি নেতা এবং মহারাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আশিস শেলার দাবি করেছেন, জোটে সবকিছু ঠিক আছে। কারও কোনও ক্ষোভ নেই। এটি শুধুই একটি ভুল ধারণা।

জোটে ফাটল ধরেছে?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখে মনে হচ্ছে শিন্ডে এবং বিজেপি-র মধ্যে মতবিরোধ বাড়ছে। যেহেতু এবার মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই শিন্ডে সরকারের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এবার সরকার গঠনের আগেও শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে, বিজেপি-র কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকায় এবং মহাযুতিতে অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর এনসিপি-র যোগদানের ফলে তারা আশ্বস্ত ছিলেন এবং শিন্ডেকে বাগে আনতে তাদের বেশি কষ্ট করতে হয়নি। আবারও প্রশ্ন উঠছে, শিন্ডের চাপ কি বিজেপি-র উপর প্রভাব ফেলবে? জোটের মধ্যে ফাটল কি আরও গভীর হবে? পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

আরও পড়ুন-

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মত প্রকল্পের টাকা কবে ঢুকবে? মহারাষ্ট্র সরকারের বড় ঘোষণা

PM Modi: 'একসঙ্গে থাকলে আমরা শীর্ষে পৌঁছাব', মহারাষ্ট্র জয়ের পরে শুভেচ্ছা জানলেন নরেন্দ্র মোদী

ফড়ণবিশ তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী, শিন্ডে-পাওয়ারদের জুটল উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ