অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি দেশকে বহু সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হলেও, মনমোহন সিংয়ের রাজনীতিতে আগমন ছিল অপ্রত্যাশিত। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী হন এবং তিনিই মনমোহন সিংকে অর্থমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেন। দেশ তখন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে, প্রায় ধ্বংসের মুখে। এই সময়েই মনমোহন সিংয়ের উত্থান। নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগদানের জন্য ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংকে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে কাজ করলেও, এই ফোন কল আসার সময় তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যান ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি তার সমস্ত পদ ত্যাগ করে অসম থেকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সংসদে প্রবেশ করেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার
ভারত তখন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে। দেশের রাজস্ব ঘাটতি ছিল জিডিপির সাড়ে আট শতাংশ। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য যথেষ্ট ছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন মনমোহন সিং। কিন্তু আইএমএফ একটি শর্ত রাখে। দেশের লাইসেন্স ব্যবস্থা বাতিল এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাজার উন্মুক্ত করার শর্ত দেয় আইএমএফ। মনমোহন সিং এই পথ গ্রহণ করেন। এর ফলে লাইসেন্স ব্যবস্থা বাতিল হয়। আমদানি শুল্ক কমানো হয় এবং বাজারে হস্তক্ষেপ করা হয়। পাবলিক সেক্টর কোম্পানিগুলির বেসরকারীকরণ সহ অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপগুলি দলের ভিতরে এবং বাইরে জনপ্রিয় হয়নি। সমালোচনা এবং অসন্তোষের মুখে তিনি বলেন, 'কাজ করো অথবা মরে যাও' (DO or DIE)। এর ফলে অন্য কোন উপায় না পেয়ে সবাই মনমোহন সিংয়ের পাশে দাঁড়ান। মনমোহন সিংকে পূর্ণ সমর্থন করেন তৎকালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অর্থনৈতিক সংস্কারের ফল শীঘ্রই দেখা যায়। ১৯৯২-৯৩ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.১ শতাংশে উন্নীত হয়। পরের বছর এটি ৭.৩ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। বিমা খাতে আর এন মালহোত্রা কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করে মনমোহন সিং দেশকে নেতৃত্ব দেন।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হন মনমোহন সিং
কংগ্রেস ক্ষমতা হারালে ১৯৯৮-২০০৪ সালে মনমোহন সিং রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা হন, যা দলের প্রতি তাঁর বিশ্বাসের প্রমাণ। পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৯% ছিল। বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলির মধ্যে ভারত দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় মনমোহন-চিদম্বরম জুটি দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
