সংক্ষিপ্ত
- বুধবার ছিল জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের বর্ষপূর্তী
- সেই দিনেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা
- ইস্তফা দিলেন প্রাক্তন আমলা গিরিশ চন্দ্র মুর্মু
- তাঁর জায়গায় এবার কাশ্মীরের দায়িত্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
৫ আগস্ট বুধবার অযোধ্যায় হল রাম মন্দিরের ভূমিপূজন। এই দিন স্মরণীয় দাবি করে জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি তুলছেন অনেক রামভক্তই। কিন্তু ৫ আগস্ট কেবল রামভক্তদের জন্যই স্মরণীয় নয়, এই দিনেই গতবছর কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছিল মোদী সরকার। দেখতে দেখতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের এক বছর পেরিয়ে গেল। আর বর্ষপূর্তিতে জম্ম-কাশ্মীরের রাজনীতিতে নয়া মোড়। এই দিনেই ইস্তফা দিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর গিরিশ চন্দ্র মুর্মু। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি ইস্তফাপত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি নয়াদিল্লি ফিরে যাবেন।
জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যে জম্ম-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল গিরিশ চন্দ্র মুর্মুর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তার জায়গায় নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এবার কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর করে পাঠান হচ্ছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোজ সিনহাকে।
এদিকে বুধবার ৫ আগস্ট কাশ্মীর ৩৭০ ধারা বিলোপের দিনেই সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন মহলে উপ-রাজ্যপাল পদ থেকে বর্ষীয়ান আমলা মুর্মুর ইস্তফার জল্পনা চলছিল। তবে এদিন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দুপুরে রাজভবনে কাশ্মীরের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর নর্দান কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াইকে যোশীর সঙ্গে বৈঠকও করেন উপ-রাজ্যপাল মুর্মু। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার ট্যুইট ঘিরে জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপালের ইস্তফার জল্পনা আরও জোরদার হয়।
আরও পড়ুন: সিভিল সার্ভিসে ভারত সেরা কৃষক পরিবারের ছেলে প্রদীপ সিং, ভরসা ছিল মনের জোর
তবে সূত্রের খবর, সম্প্রতি একাধিক বিষয় নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর গিরিশ চন্দ্র মুর্মুর সঙ্গে কেন্দ্রের বনিবনা হচ্ছিল না। ২০১৮ সাল থেকে জম্মু-কাশ্মীরে ভোট থমকে আছে। রাজ্যের মর্যাদা হারানোর পরে সেখানে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে প্রাক্তন এই আইএএস অফিসার যে পথ নিয়েছিলেন তা কেন্দ্রের সঙ্গে মিলছিল না। আসন পূণর্বিন্য়াশ না হওয়া পর্যন্ত কাশ্মীরের বিধানসভা ভোট স্থগিত রাখার পক্ষে ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল। তাছাড়া কাশ্মীরে ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালু নিয়েও গিরিশ চন্দ্রের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে নয়াদিল্লির মত বিরোধ দেখা দিয়েছিল। আর সেই কারণেই কেন্দ্রের রোষে ৩৭০ ধারা বাতিলের বর্ষপূর্তির দিনই জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম উপ-রাজ্যপালের ইস্তফা বে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই।
তবে শোনা যাচ্ছে দেশের পরবর্তী কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল হতে চলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। একটি সূত্রের দাবি, বর্তমান দেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল রাজীব মহর্ষির চলতি সপ্তাহেই ৬৫ বছর পূর্ণ করবেন। ফলে এই সপ্তাহেই ওই পদ খালি হওয়ার সম্ভাবনা। এদিকে, সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ হওয়ায় ক্যাগ পদ কখনই খালি রাখা যাবে না। সেই কারণে রাজীব মহর্ষির উত্তরসূরির খোঁজার চূড়ান্ত তোড়জোড় শুরু হয়েছে সরকারি স্তরে। আর পরবর্তী কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল হওয়ার দৌড়ে গিরিশ চন্দ্র মুর্মু অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ১৯৮৫ সালের ব্যাচের গুজরাত ক্যাডারের আইএএস অফিসার গিরিশ চন্দ্রের। পরে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে যোগ দেন। দুঁদে আমলা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পরে এই মুর্মুকেই কেন্দ্র বেছে নেয় লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দায়িত্বে৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার মনোজ সিনহার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এনে জম্মু-কাশ্মীরে রাজনৈতিক কাজকর্ম শুরুর তোড়জোড় করছে কেন্দ্র৷
এদিকে জম্মু -কাশ্মীরের নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নরেৃ মনোজ সিনহা ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী ছিলেন৷ টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি৷ বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ছাত্রনেতা থেকেই নিজে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মোনজ৷ পরে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে দু’বার লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হন৷ ২০১৯-এর নির্বাচনে অবশ্য তিনি হেরে যান৷ এবার তার হাতেই কাশ্মীরের দায়িত্ব দিল কেন্দ্রীয় সরকার।