সংক্ষিপ্ত
মে মাসেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল
দিল্লির হিংসায় সেই স্বপ্নের জলাঞ্জলী
কোনও দিন বিয়ে আদৌ হবে কিনা সেই ভাবনা ঘুরছে
পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে তাঁর গোপনাঙ্গ
গত চারদিন ধরে উত্তরপূর্ব দিল্লির যেসব জায়গায় তীব্র হিংসা ছড়িয়েছিল তার মধ্য়ে অন্যতম এলাকা মুস্তাফাবাদ। গত মঙ্গলবার এই এলাকাতে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়াতেই পুলিশের গুলি এসে লাগে এক ২২ বছর বয়সী যুবকের গোপনাঙ্গে, এমনটাই অভিযোগ। আঘাতে ওই ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। পায়ুতেও গুরুতর আঘাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-হিন্দ হাসপাতালের ডাক্তাররা। তার ভাই জানিয়েছেন, পেশায় ওয়েল্ডার ওই যুবের আগামী মে মাসেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
ওই ব্যক্তির নাম মহম্মদ ইমরান। আল হিন্দ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি জানিয়েছেন, ওইদিন বিকেল ৫ টা নাগাদ তিনি বাইরে কী ঘটছে তা দেখার উদ্দেশ্যে তিনি আর তাঁর বাবা তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তায় এসে দাঁডিয়েছিলেন। কিছু বোঝার আগেই তাঁর গোপণাঙ্গে একটা কিছু এসে আঘাত করে এবং সেখান থেকে আমি রক্তপাত শুরু হয়। ইমরানের বাবা শামশুদ্দিন-এর দাবি, পুলিশ উন্মত্ত দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে গুলি চালাচ্ছিল এবং টিয়ার গ্যাস ছুড়ছিল। তারা বের হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ইমরান চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর প্যান্ট লাল হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন - ধ্বংসের ধূসরতা, বাতাসে পোড়া গন্ধ, চলতে ফিরতে মিলছে লাশ - দিল্লির হিংসা ছবিতে ছবিতে
পরিবারের সদস্য়রা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান। ভিতরে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন গুরুতর আহত হয়েছেন ইমরান। জানা গিয়েছে, তাঁর পুরো অণ্ডকোষটি ফেটে গিয়েছিল। ইমরান জানিয়েছেন, তাঁর এত যন্ত্রনা হচ্ছিল, যে মনে হয়েছিল তাঁর বোধহয় মৃত্যু নেমে আসছে। ওই অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ওল্ড মুস্তফাবাদ এলাকার আল হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা রক্তপাত বন্ধ করতে তৎক্ষণাত ছিন্নভিন্ন অংশগুলি সেলাই করেন। আল হিন্দের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, দুই ঘণ্টা ঘরে অণ্ডকোষ থেকে পায়ু বরাবর ১৫টিরও বেশি সেলাই করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন - 'আয় পাকিস্তানি তোকে নাগরিকতা দেব', রেহাই পেলেন না বিএসএফ জওয়ান-ও
পরদিন সকালে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য এলএনজেপি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার ডাক্তাররা জানিয়েছেন ইমরানের অবস্থা এখন স্থিতিশীল এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে, এই ঘটনায় তিনি গভীর মানসিক আঘাত পেয়েছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে তাঁর, এমনটাই বলছেন ডাক্তাররা। তাঁর আরও চার ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিনি পরিবারের অন্যতম রোজগেরে। কিন্তু চোটের কারণে তিনি আগামী কয়েক মাস কাজ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন - হিংসা-কে লবডঙ্কা, অশান্ত দিল্লিতে হিন্দু বোনের বিয়ে দিলেন তাঁর মুসলিম ভাইরাই
তাঁর ভাই জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর থেকে একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছেন তাঁদের মা। তিনিও মনে দারুণ ধাক্কা খেয়েছেন। তিনদিন ধরে কেঁদেই চলেছেন আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন। মে মাসেই ইমরানের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাঁরা জানেন, ইমরান য়ে অবস্থায় পড়েছে, তাতে সেটা হওয়া এখন সম্ভব নয়। বাবা-মা'এর আশঙ্কা হয়তো কোনওদিনই তাঁর বিয়ে হবে না। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন ইমরান হয়তো আর কোনওদিন বাবা হতে পারবেন না।
আরও পড়ুন - চোখ দেখাতে গিয়ে চলে গেল প্রাণটাই, পরিবার দূষছে বিদ্বেষ-বক্তৃতাকে
বৃহস্পকতিবার হিংসার কারণে মৃত হিসাবে ৩৭ জনের বিবরণ প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশ। সেই তালিকায় রয়েছেন, একজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন এবং অন্য ৩৭ জন অসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ২১ জনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মত্যু হয়েছে। চারজন ছুরিকাঘাত এবং মারধোর-এর চোটে মারা গিয়েছেন। আর তিনজন আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন। আরও চারজনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।