সংক্ষিপ্ত
তিনি বিএসএফ-এর জওয়ান
ভেবেছিলেন নেমপ্লেটটা বাঁচিয়ে দেবে
নেমপ্লেটে যে বিএসএফ-এর প্রতীকটাও রয়েছে
কিন্তু, উন্মত্ত দুর্বৃত্তদের সামনে কারোর রেহাই নেই
পাড়ার একের পর এক মুসলিম বাড়িতে আগুন দিতে দিতে উন্মত্ত দুর্বৃত্তরা এগিয়ে আসছিল। পরিবারের সকলে দোতলা বাড়িটার ভিতরে দমবন্ধ করে বসে। তারা ভেবেছিল বা বলা ভাল মনেপ্রাণে চেয়েছিল, বাড়ির বাইরে যে নেমপ্লেটটা আছে, সেটা দেখে দুর্বৃত্তের দল হয়তো তাদের ছাড় দেবে। কিন্তু, না গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খাস খেজুরি গলির ৭৬ নম্বর বাড়িটিতেও একইভাবে ভাঙচুর চালানো হয় এবং শেষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন - মে মাসেই বিয়ে, দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হল যুবকের পুরুষাঙ্গ-পায়ু
নেমপ্লেটে অনুযায়ী ৭৬ নম্বর বাড়িটি বিএসএফ জওয়ান মহম্মদ আনিস-এর। সেই সঙ্গে নেমপ্লেটে বিএসএফ-এর প্রতীকও লাগানো ছিল। কিন্তু, তা দেখেও আগুন দিতে দ্বিধা করেনি হামলাকারীরা। মহম্মদ আনিস জানিয়েছেন, প্রথমে বাড়ির বাইরে থাকা গাড়িগুলিতে আগুন দেওয়া হয়। পরের কয়েক মিনিটে শুরু হয় বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া।
আরও পড়ুন - হিংসা-কে লবডঙ্কা, অশান্ত দিল্লিতে হিন্দু বোনের বিয়ে দিলেন তাঁর মুসলিম ভাইরাই
তারপর শুরু হয় আগুন জ্বালানোর প্রক্রিয়া। মহমম্মদ আনিস-এর বাড়িতে একটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ছুড়ে দেয় হামলাকারীরা। সঙ্গে আপত্তিকর স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। ২০১৩ সালে বিএসএফ-এ যোগ দেওয়া, তিন বছর জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তে কাটানো আনিস-এর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলা হয় 'ইধার আ পাকিস্তানি, তুঝে নাগরিকতা দেতে হ্যায় (বেরিয়ে আয় পাকিস্তানি, তোকে নাগরিকত্ব দেব)।
আরও পড়ুন - চোখ দেখাতে গিয়ে চলে গেল প্রাণটাই, পরিবার দূষছে বিদ্বেষ-বক্তৃতাকে
সেই সময় বাড়িতে আনিসের সঙ্গে তাঁর বাবা মহম্মদ মুনিস (৫৫), জেঠা মহম্মদ আহমেদ (৫৯) এবং ১৮ বছরের জেঠতুতো বোন নেহা পারভীন ছিলেন। সিলিন্ডারটা বাড়িতে এসে পড়তেই কি ঘটতে চলেছে আঁচ করতে পেরেছিলেন দক্ষ জওয়ান আনিস। সকল-কে নিয়ে তিনি পিছনের দরজা দিয়ে পালান। পরে তার সেনা-পরিচয় দেখে আধাসামরিক বাহিনী তাদের সাহায্য করে।
আরও পড়ুন - দড়ি বেয়ে নেমে দেদার ভাঙচুর-পোড়ানো, দিল্লির স্কুলই হয়ে উঠেছিল হামলার ঘাঁটি
প্রাণটুকু ছাড়া আর কিছুই বাঁচাতে পারেননি আনিস। তিন দিন আগের বাড়িটা এখন ইটপাথরের কঙ্কাল হয়ে পড়ে আছে। আগামী এপ্রিলে নেহা পারভীন আর তার পরের মাসে আনিস-এর নিজেরই বিয়ে করার কথা। তার জন্য বাড়িতে নগদ তিন লাখ টাকা, বেশ কিছু সোনা ও রূপোর গয়না ছিল। এখন আর সেসব কিছুই নেই। আনিস জানিয়েছেন প্রতি মাসে কিস্তিতে কিস্তিতে টাকা দিয়ে গয়নাগুলি কিনেছিলেন। সারা জীবনের সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন - ধ্বংসের ধূসরতা, বাতাসে পোড়া গন্ধ, চলতে ফিরতে মিলছে লাশ - দিল্লির হিংসা ছবিতে ছবিতে
তবে শুধু আনিসদের বাড়ি তো নয়। খাস খেজুরি গলির মোট ৩৫ টি বাড়ির এক অবস্থা। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছে শুধু একটি মুসলিম পরিবারের বাড়ি। খেজুরি খাস এলাকা হিন্দু অধ্য়ূষিত। কিন্তু, তাদের কোনও প্রতিবেশী এই হামলায় জড়িত নন বলেই দাবি আনিসের পরিবারের। হামলাকারীরা সবাই বাইরের লোক। বরং হিন্দু প্রতিবেশীরা তাদের চলে যেতে বলছিল, কিন্তু টেকাতে পারেনি।
আরও পড়ুন - পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন পুরুষাঙ্গ-পায়ু, বিয়ে মাথায় উঠল দিল্লির যুবকের