সংক্ষিপ্ত
মহাকাশ গবেষণায় ইসরো যে তার ছাতার তলায় বিভিন্ন স্পেস টেকনলোজি স্টার্টআপ-কেও কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে তাও তিনি জানান। ইসরোর চিফ এস সোমনাথ জানিয়েছেন, তারা চান না যে মহাকাশ প্রযুক্তিকে একটা গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দিতে। এখন বহু স্টার্ট-আপ তৈরি হচ্ছে যারা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপুর্ব কাজ করছে শুধু নয়, মহাকাশ গবেষণার প্রযুক্তিতে সহায়তা .করার মতো উপাদানও তাদের মধ্য়ে মজুত রয়েছে।
ভারতীয় মহাকাশ গবষেণা সংস্থা ইসরোর নতুন প্রধান হচ্ছেন এস সোমনাথ। মহাকাশ গবেষণায় তিনি রকেট বিজ্ঞানী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি এমন একটা সময় ইসরোর দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন যখন ভারত রকেট উৎক্ষেপণ প্রযুক্তিতে বিশ্ব মহাকাশ গবেষণায় এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ফেলছে। মহাকাশ গবেষণায় এখন এতটাই প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে সেখানে ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি ভালোমতো ঢুকে পড়েছে। এমতাবস্থায় ভারতের রকেট গবেষণা কী ভাবা হচ্ছে। এমনই কিছু প্রশ্ন নিয়ে ইসরোর নবনির্বাচিত চিফ এস সোমনাথের মুখোমুখি হয়েছিলেন এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্কের ম্যানেজিং এডিটর মনোজ কুমার দাস।
এস সোমনাথ এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, ইসরোর মহাকাশ গবেষণায় যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পথে হাঁটছে তা কোনওভাবেই থমকে যাবে না। একে অতি দ্রুততা এবং গুরুত্বের সঙ্গে কার্যকর করা হবে। এর জন্য অ্যাডভান্স রিইউজেবলড লঞ্চ ভেহিকল প্রযুক্তিকে কীভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে কাজ বহুদূর এগিয়েছে বলেও এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্কের ম্যানেজিরং এডিটর মনোজ কুমার দাসকে জানান এস সোমনাথ।
অতি উৎসাহের সঙ্গে তিনি জানান মহাকাশ গবেষণা এখন এমন একটা স্তরে পৌঁছেছে যে কোনও কিছুই এর চিরস্থায়ী বলা যাচ্ছে না। কারণ যেভাবে মহাকাশ গবেষণায় গতি এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং ঘনঘন মহাকাশে উৎক্ষেপণও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে তাতে রকেটের পুনর্ব্যবহারটা নিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই সত্য থেকে কোনও দেশ পিছু হঠতে পারে না বলেই মনে করছেন ইসরোর নয়া চিফ। আর এর জন্যই রকেট গবেষণায় ভারত একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠেছে বলেও মনে করছেন তিনি।
এস সোমনাথের কথায় পুনর্ব্যবহার যোগ্য রকেট মানে মহাকাশ উৎক্ষেপণের খরচে সস্তা শব্দের যোগ হয়ে যাওয়াটা। মহাকাশ উৎক্ষেপণে এটা একটা বিশাল পদক্ষেপ বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটের গবেষণায় ইসরো ইতিমধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এস সোমনাথ। তিরুঅনন্তপুরমের বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে এই নিয়ে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। খুব শিগরি এর একটা পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি । সেই সঙ্গে তিনি আরও জানান যে, মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্পেসক্রাফটকে নিয়ে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে এমন রকেটের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে এবং এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের মডেলকে তৈরি করা হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণায় ভারত এক দুরন্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এস সোমনাথ। মহাকাশ গবেষণাকে শক্তিশালী করতে যে একটা নতুন রেগুলেটরি এজেন্সি তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে কথা বলতে গিয়ে ইসরোর নতুন চিফ বলেন যে এই রেগুলেটরি এজেন্সির ছাতার তলায় তাঁরা নতুন প্রজন্মের কথা ভেবে নতুন প্রযুক্তি আনছেন।
মহাকাশ গবেষণায় ইসরো যে তার ছাতার তলায় বিভিন্ন স্পেস টেকনলোজি স্টার্টআপ-কেও কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে তাও তিনি জানান। ইসরোর চিফ এস সোমনাথ জানিয়েছেন, তারা চান না যে মহাকাশ প্রযুক্তিকে একটা গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দিতে। এখন বহু স্টার্ট-আপ তৈরি হচ্ছে যারা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপুর্ব কাজ করছে শুধু নয়, মহাকাশ গবেষণার প্রযুক্তিতে সহায়তা .করার মতো উপাদানও তাদের মধ্য়ে মজুত রয়েছে।
আর এই ক্ষেত্রে রকেট প্রযুক্তি নিয়ে নানা ধরনের তাৎপর্যমূলক গবেষণায় চমকেও দিয়েছে এইসব স্টার্টআপ। মহাকাশ গবেষণাতেও পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যে স্টার্টআপ- তা এই মুহূর্তে প্রমাণিত হচ্ছে। আর এই ধরনের উদ্যোগ মহাকাশ গবেষণার খরচকেও অনেকটা কমাতে সাহায্য করছে। এমন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইসরো পিছন থেকে এই সব স্টার্টআপকে সবধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন এস সোমনাথ।
মহাকাশ গবেষণায় বিক্রম সারাভাই এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন শুধু নয়, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মডেল খাড়া করেছিলেন। তিনি যে তাঁর কর্মজীবনে বিক্রম সারাভাই-এর উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে অনুসরণ করেন তা জানাতে ভোলেননি ইসরোর নয়া চিফ। তিনি আরও জানিয়েছেন, যেখানে অধিকাংশ দেশ মহাকাশ গবেষণায় তাদের সাফল্যকে প্রতিরক্ষার এক মজবুত দিক বলে প্রতিপন্ন করতে চায়, সেখানে ভারতবর্ষ-ই এমন একটা দেশ যারা মহাকাশ গবেষণাকে একটা বিজ্ঞানের সাফল্যের জায়গা থেকে দেখে এবং মানব সভ্যতা এর থেকে কী ফায়দা তুলতে পারে তা নিয়ে বেশি করে চিন্তা করে।
এস সোমনাথ সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে ইসরোর সঙ্গে সারসরি ভাবে কাজ করছে ২০টি সংস্থা। এছাড়াও ৮০টি-র বেশি সংস্থা অপ্রত্যক্ষভাবে তাদের সঙ্গে জড়িত। নতুন দায়িত্বে এসে তাঁর প্রধান লক্ষ্যই হবে এই সমস্ত সংস্থাকে একটা ছাতার তলায় শুধু আনা নয়, এদের সংখ্যা যাতে আরও বাড়ানো যায় তা নিয়েও কাজ করা। এর ফলে দেশের মানুষের মঙ্গলসাধনে মহাকাশ প্রযুক্তিকে আরও কার্যকর করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেছেন এস সোমনাথ।
মহাকাশ গবেষণায় এই মুহূর্তে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার ডেটা ড্রাইভেন সিস্টেমকে যেমন আরও আধুনিক করা সম্ভব এবং পরিষেবা প্রদানকারী ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার আশার কথাও শুনিয়েছেন এস সোমনাথ। ট্রান্সপোন্ডার প্রযুক্তির মধ্যে দিয়ে আরও নতুন সম্ভাবনাকে নাগরিক জীবনের উৎকর্ষ সাধনে কাজে লাগানো যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেতন তিনি। তবে এর জন্য এমন একটা ডাউনলিংক সুবিধা দরকার যেখানে লাস্ট-মাইল কানেকটিভিটি কাজ করবে। এছাড়াও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তিতেও ইসরো এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের স্বাদ দেশকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এস সোমনাথ। এছাড়াও তিনি সাক্ষাৎকারে সংযোজন করতে গিয়ে বলেন, ইসরোর লক্ষ্য যেমন দীর্ঘমেয়াদী জীবনসম্পন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ তেমনি অতি ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করা যা আরও গতি নিয়ে ছুটতে পারবে। তবে, এই মুহূর্তে ইসরোর পাখির চোখ যে এসএসএলভি-র উৎক্ষেপণ তা দ্বর্থ্যহীন ভাষায় এই সাক্ষাৎকারে বুঝিয়ে দিয়েছেন ইসরোর নয়া চিফ এস সোমনাথ।