সংক্ষিপ্ত
কেন্দ্র ও কৃষকদের মধ্যে আটটি বৈঠক হয়ে গিয়েছে
কিন্তু, তাতে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি
সামনে আসছে নবম বৈঠক
সেখানে কোনও সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি
তপন মল্লিক: প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ থেকে অষ্টম, মানে মোট আটটি বৈঠক। আর সেই আটটি বৈঠকই হল নিস্ফলা। কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে এল না। প্রতিবাদী কৃষকরা যেমন তাদের দাবিতে অটল অন্যদিকে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরতে নারাজ কেন্দ্র।
দিল্লি সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকরা গোড়া থেকেই স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন, তাঁদের দাবি মেনে কেন্দ্রকে নতুন তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রও শুরু থেকে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে এসেছে যে, আইন বাতিলের প্রশ্নই ওঠে না। কৃষকদের অন্য কোনও প্রস্তাব থাকলে তারা জানাক, কেন্দ্র তা বিবেচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু নতুন তিন কৃষি আইন বাতিল করা হবে না। অর্থাৎ গোড়া থেকেই দু'পক্ষের অবস্থান ছিল অনড়। সেই কারণে শুক্রবার অষ্টম দফার বৈঠক ঘিরে ছিল প্রশ্ন। সেখান থেকে আদৌ কোনও সমাধান সূত্র বেরোয় কি না, তা নিয়ে ছিল সংশয়। যথারীতি যা ঘটার তাই ঘটল।
প্রসঙ্গত, মাত্র দু’দিন আগে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের ষষ্ঠ দফার যে বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কৃষকদের বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার ও ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো নিয়ে এয়ার কোয়ালিটি অর্ডিন্যান্সের কয়েকটি ধারা মেনে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কৃষকদের চারটির মধ্যে দু'টি দাবি মানা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের মূল দাবি হল, কেন্দ্রের নতুন তিন কৃষি আইন বাতিল ও ফসলের ন্যূনতম মূ্ল্যের আইনি স্বীকৃতি। যা নিয়ে তাঁরা দিল্লির কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপাকে পড়ে সরকার বৈঠকে বসতে বাধ্য হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু তাতে কোনও সমঝোতা হচ্ছে না।
এটা ঘটনা সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। কৃষকরা চাইছেন সরকারের উপর আরও চাপ বাড়াতে। শুক্রবারের বৈঠকের আগেও কেন্দ্রের ওপর আইন বাতিল নিয়ে চাপ বাড়াতে কৃষকরা বৃহস্পতিবার দিল্লির রাস্তায় ট্র্যাক্টর র্যালি করেছেন। সেই র্যালি থেকেই আন্দোলনরত কৃষকদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এই র্যালি শুধুমাত্র মহড়া। দাবি না মানলে ২৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে রাজধানীর রাজপথে তাঁরা ট্র্যাক্টর র্যালি করবেন।
বৈঠকে কেন্দ্র নিজেদের অবস্থানেই গোঁ ধরে রয়েছে। নতুন কৃষি আইন বাতিল করার কোনও লক্ষণই তারা দেখাচ্ছে না। তবে শুক্রবার কৃষক প্রতিনিধিরা কেন্দ্রকে পরিষ্কার জানিয়েছেন নতুন কৃষি আইন বাতিল করলেই তাঁরা বাড়ি ফিরবেন, তা নাহলে দিল্লি সীমান্ত থেকে নড়ছেন না। এই অবস্থায় ফের ১৫ জানুয়ারি বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কৃষক নেতারা। প্রশ্ন, ওই বৈঠকেও কি মিলবে সমাধান সূত্র? কেন্দ্র অনড় তার নতুন আইনে নিয়ে। অন্যদিকে আন্দোলনরত কৃষকরা আইন বাতিল না হলে যে বাড়ি ফিরিবেন না; সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাহলে সেদিনের বৈঠক বরফ গলবে কিসের উষ্ণতায়?
কৃষক আন্দোনের রেশ যেমন জারি আছে, পরিস্থিতিও ঠান্ডা নয় মোটেও। ক্ষোভে-দুঃখে-হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন একাধিক কৃষক। তার মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যেমন, তেমনই নাওয়া খাওয়া ভুলে নিজেদের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে অনড় আছেন তাঁরা। লড়াই করতে করতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক কৃষক। একের পর এক বৈঠকে কোনও ফল মেলেনি। কৃষকদের মধ্যে যে এই সব ঘটনার প্রভাব পড়ছে। তাদের মধ্যেও মানসিক চাপ যে আছে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে তাঁরাও দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের নতুন নতুন পথ বের করার চেষ্টা করছেন, সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছেন। শুরু থেকেই আন্দোলনকে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে তাঁদের আন্দোলন।
কিন্তু আটটি নিস্ফলা বৈঠকের শেষেও ঘুরে ফিরে সেই প্রশ্নই উঠছে; নবম বৈঠকে কি জট খুলবে? আটটি নিস্ফল বৈঠকের পর ইতিবাচক উত্তর দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তার ওপর যখন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর জানিয়েই দিয়েছেন যে, কেন্দ্রের পক্ষে ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনাই নেই। অন্য দিকে কৃষকরাও যে আইন প্রত্যাহারের দাবি থেকে বিন্দুমাত্র সরে যাবেন, এমন ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মেলেনি। প্রতিটি বৈঠকের আগেই দু’পক্ষ আশা করছেন যে এবার হয়ত জট কাটবে, কিন্তু সেই সম্ভবনা প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হচ্ছে, জটিলতা দিন দিন কমার বদলে বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় আগামী ১৫ জানুয়ারি কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের নবম বৈঠকে যে আশার আলো জ্বলবে বা জট কাটার কোনও রাস্তা বেরিয়ে আসবে সে সম্ভবনা কম।